হিংসা- প্রতিহিংসা, শব্দ দুটো শুনতেই কেমনজানি বিদঘুটে লাগে। হাদিসেও আছে, হিংসা নেক আমল ধ্বংস করে দেয় ।  ইসলামের দৃষ্টিতে হিংসা- প্রতিহিংসা পাপের কাজ ও নিন্দনীয় ।

পরস্পর হিংসা, পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ, একে অপরের সাথে সম্পর্ক চ্ছেদ, পরের উপর জুলুম, সহায়-সঙ্গীহীন করা, মিথ্যা বলা, অপমান করা, মানুষ হয়ে মানুষকে নীচ ও হীন মনে করা, এগুলো তো মুসলিমের জন্য শতভাগ হারাম। কথাগুলো বললাম কারণ,  আমরা আবার স্বাধীনতার মূলমন্ত্রকে ভুলে গিয়ে বা পাশ কাঁটিয়ে ৮৫- ৯০ % মুসলমানের দেশ কথায় কথায় বলি এবং বলতে ভালোবাসি কিনা, তাই ।

প্রকৃতপক্ষে হিংসা অত্যন্ত নিচু মানসিকতার পরিচায়ক ও নোংরা চরিত্রের বর্হিপ্রকাশ। হিংসুকরা সামাজিকভাবেও ঘৃণার পাত্র হয় । হিংসুকরা মূলত নিজেরাই নিজেদের শত্রু হয়, যেকোনো পেশাতেই হোক । কখনোই মানসিকভাবে শান্তি পায় না এবং পেতে পারে না, হোক সে যত ক্ষমতাবান বা শক্তিশালী । শোধ, প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা, প্রতিফল দেওয়া, নির্যাতন করা, অযথা শাস্তি দেওয়া, এগুলো মূলত হিংসার বশবর্তী হয়ে প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলা মাত্র।  প্রতিহিংসায় একটি জাতী অনায়াসেই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে । শত উদাহরণ সেই পাথর যুগ থেকেই আছে।

এবার আসুন মাননীয় কাদের সাহেবের তিনটি ভাষ্যের মর্মার্থ বুঝার চেষ্টা করি । দুটি ভাষ্যের ছবি নিচে দিলাম, তৃতীয় ভাষ্যেটির ছবি হাতে নেই। তাই তৃতীয় ভাষ্যেটি আগে বলি। স্মরণ হয় কি, গতবছর নভেম্বরের দিকে ( যদি ভুল না করি ) কাদের সাহেব একবার বলেছিলেন,

” সাবধান হোন, টাকা নিয়ে পালানোর পথ পাবেন না ”

কথাটি যখন দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা  বলেন,   তখন   কথাটির মর্মার্থ বুঝতে হবে। কথাটি কিন্তু ভয়ানক কথা ছিলো । সহজ বাংলায় কাদের সাহেবরা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন এবং উনারা বেশ ভালো করেই জানেন, দেশের জনসাধারণের টাকা নিয়ে কি হচ্ছে এবং যা হচ্ছে তা কারা করছেন ।

এবার নিচের ছবি দুটির ভাষ্যের সাথে আগের ভাষ্যেটি মিলিয়ে দেখতে পারেন । উনার ভাষ্য দেশে কখন কি ঘটে । কেন উনি এমনটি বলছেন বা ভাবছেন ? উনি কি ক্ষমতার চেয়ারে বসে জনমানুষের মনের ঝড় টের পাচ্ছেন ? নাকি, ভয়ানক কিছু ভুলের খেসারত টের পাচ্ছেন ? আন্তর্জাতিক কোনো সিন্দাবাদের উড়ন্ত পাখা দেখছেন কি ? রাজপথের রাজনীতিক ছিলেন, বাতাসের বেগ নিশ্চয়ই বুঝেন ।

20200827_220532.jpg

 

যখন ক্ষমতায় থাকবেন না, প্রতিপক্ষ প্রতিশোধ নিবে। এটাতো আরো ভয়ানক কথা । প্রশ্ন চলে আসে, প্রতিপক্ষ কিসের প্রতিশোধ নিবে ? কি করেছেন যার প্রতিশোধ হতে পারে । কিসের প্রতিশোধ নিবে বলে আপনাদের মনের বাঘ আপনাদের দৌড়াচ্ছে ? মানে কি দাঁড়ালো ? পরোক্ষ ভাবে স্বীকার করে নিচ্ছেন যা যা করেছেন, সেগুলোর প্রতিশোধ স্বাভাবিক ভাবেই হয় বা  হতে পারে অথবা সম্ভাবনা থাকে । প্রতিপক্ষ কারা ? যারাই হোক, তারা তো এই স্বাধীন দেশের জনমানুষেরই অংশ হবে নিশ্চয়ই।

20200827_220501

 

একযুগের উপরে ক্ষমতাসীন আছেন । হঠাৎ করে এমন ভাবনা মাথায় এলো । ২১ বছর দেশ অন্ধকারে ছিলো বলে চিৎকার করে ছিলেন, জঞ্জাল পরিষ্কার করবেন, একটু সময় লাগবে, এখন তো দেখা যাচ্ছে, আপনাদের এক যুগ সময়ে শোধরানো তো দুরের কথা, আরো অন্ধকারেই নিমজ্জিত হয়েছে । এটা তো আমার কথা নয় , আপনার ভাষ্য সেই কথাই বলে ।

এই একযুগে দেশে কি হয়নি ?  যা মানুষকে  অস্বস্তিতে রাখেনি । একটি উদাহরণ দিতে পারবেন কি, যা অন্তত সহনশীলতার পর্যায়ে ছিলো ? সার্বিকভাবে। একযুগ ভরে হাওয়া ভবন হাওয়া ভবন বলে গেলেন । এখন তো দেখা যাচ্ছে হাওয়া ভবনকে আপনারাই হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে খাওয়া ভবনে ব্যস্ত ছিলেন, এটা অস্বীকার করবেন কি করে ? গুম, খুন, হত্যা, ক্রসফায়ার, অত্যাচার, নির্যাতন, জুলুম, লুটপাট, জবরদস্তী, অপমান, অপদস্থ, হেনস্থা, অবহেলা, মামলা, হামলা, কারসাজি কোন বিষয়টি আপনাদের এই একযুগে পূর্বের চেয়ে কম ছিলো বলে দাবী করতে পারবেন ?  দাবী হয়তো মুখের কথায় বা কথার মারপ্যাঁচে করতে পারবেন, যা বরাবরই এই অব্দি করে এসেছেন । জনগণকে বোকা ভেবে । জনগণ কি আসলেই বোকা ? উত্তর হচ্ছে মোটেও নয় । জনগণ সব জানে এবং শতভাগ বুঝে ।

কথায় বলে, ” দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝতে হয় “। সত্য হলো স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারি দলের প্রতি মানুষ  বিশ্বাস রেখেছিলো, আপনারা সেই বিশ্বাসের বলিয়ান করেছেন, ক্ষমতার দাপটে নিজ হস্তে । তাই এখন মনের বাঘে আপনাদের দৌড়াচ্ছে। এখন ভুতের উল্টো পা দেখছেন । সেই ভুত তো মনে হচ্ছে চারিদিকে সুনসানের মাঝে বেশ বহাল তবিয়তেই আছে। ৭৫ এ বঙ্গবন্ধুর চারিপাশে লাখো- কোটিজনেরা ছিলো বলেই মনে হতো । আসলেই কি বঙ্গবন্ধুর চারিপাশে তেমনটা ছিলো ? নাকি বঙ্গবন্ধু মূলত একা ছিলেন ?

ভয় হয়, স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারি দলের ভুলের খেসারত না এই স্বাধীন বঙভূমিকে দিতে হয় । এই বঙভূমির শত্রুর কোনো দিন অভাব ছিলো না, আপনাদের কল্যাণে সেটা এখন চাষের জমিতে রূপান্তরিত হয়েছে বলেই অনুমেয় হয় । যেভাবেই আছেন ক্ষমতায়, আবার বলছি যেভাবেই, হাতে এখনও সময় আছে বলেই মনে করি । প্রতিশোধ নিবে সেই ভাবনায় না ডুবে, প্রতিকারের ভাবনা ভাবুন । প্রতিকারের সব কিছুই এখনও আপনাদের হাতেই অছে, আর প্রতিকারটি  হলো আপনাদের রাজনৈতিকদের মাঝে ক্ষমতার লোভ আর একে অপরের হিংসাত্মক মনোবৃত্তি  পরিত্যাগ করা । এটা কি সত্যিই খুব কঠিন ?  আমরা সাধারণ জনগণ দেশের মালিক, সাংবিধানিক অর্থে। আর সেই মালিকদের চাওয়াটি সহজ ও সরল, রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা হোক,  প্রতিহিংসা নয় । প্রতিহিংসা একটা জাতিকে ধ্বংসের শেষে নিয়ে যেতে পারে । যুদ্ধতে এত রক্ত  নিশ্চয়ই সেইজন্য দেয়নি কেউ । গোড়ায় ভাবুন, প্লিজ।

20190210_195317

বুলবুল তালুকদার

যুগ্ম সম্পাদক শুদ্ধস্বর ডট কম ।

 

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading