কৃষ্ণধন আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল– কিন্ত, দানধ্যানে, তিনি উদার হস্ত, বেপরোয়া ছিলেন।আর্থিক অভাব,অনটনে পড়ে গেলেন।যার ফলে ছেলেদের টাকা পাঠানো বন্ধ হয়ে গেলো।বাবার টাকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অর্থকষ্ট, খাদ্যের অভাব শুরু হলো, ভাইদের জীবনে ।ডাক্তার ঘোষের পরিচিত জেমস্ কটন ছিলেন, সে সময়ে ক্রমওয়েল রোডে সাউথ কেনসিংটন রোডের লিবারেল ক্লাবের সদস্য সচিব। ছেলেদের দূর অবস্থা দেখে, বিনয়ভূষনের, সামান্য বেতনের চাকরী, এবং ক্লাবের অফিস ঘরে তাঁদের থাকার ব্যবস্হা করে দিলেন। ঠান্ডা নিয়ন্ত্রন বিহীন ঘর, কয়েক টুকরা রুটি,কয়েক কাপ চা এবং এক পয়সার সসেজ খেয়ে তাঁদের এক বছর কাটাতে হয়েছিলো।কঠোর জীবন পর্বে অরোর কোন সমস্যা হয়নি,বাবার প্রতি ছিলনা কোন ক্ষোভ।তাঁর মানসিক দৃঢ়তা ছিল গভীর।যে বাবা মাসে ৩৬০ পাউন্ড করে পাঠাতেন,তাঁদের জীবন কাটাতে হচ্ছে, ক্লাব ঘরে , সামান্য কিছু খেয়ে।
ক্লাব ঘরে থাকার কষ্ট মনমোহন, বেশীদিন সয্য করতে পারলেন না,তিনি সুবিধামত অন্যএ চলে গেলেন।অরোবিন্দ আরো, দু বছর ক্লাব ঘরে কাটালেন।ভাগ্য দেবী সুপ্রসন্ন হলে — অরবিন্দ একজন ল্যান্ডলেডির সন্ধান পেলেন।তাঁর তত্বাবধানে উঠে এলেন।অরবিন্দের ভাষায়–‘ তিনি ছিলেন স্বর্গের পরী’।টাকার জন্য অরোকে কখনও বিরক্ত করতেন না।পরে আই সি এস বৃওি থেকে তিনি বাড়ী ভাড়া শোধ করেছিলেন।

এতো দুঃখ কষ্টর মধ্যে শ্রী অরবিন্দের বিদ্যানুশীলন বন্ধ থাকেনি।মাঝে, মাঝে রচনা করেছেন,গ্রীক,ল্যাটিন, ইংরেজী কবিতা।১৮৭৯ ডিসেম্বরে মাসে তিনি সেন্ট পলস থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে, সে বছর ভর্তি হন কেমব্রিজের কিংস কলেজে।অরবিন্দের পাঠ্যসুচি ছিলো গ্রিক ল্যাটিন, ভাষা সাহিত্য। ছাএদের মধ্যে তিনি সর্ব শ্রেষ্ঠ বিবেচিত হওয়ায় বাৎসরিক ৮০ পাউন্ড Senior Classical Scholarship লাভ করেন।১৮৯০ সেন্ট পলসের শেষ বছর শ্রী অরবিন্দ I. C.S পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন।সে সময় তিনি মাতৃভাষা বাংলা নিয়ে বিস্তর পড়া লেখা করেন। লন্ডনে প্রতি বছর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হত।ভারতীয় ছাএদের ঐ পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি ছিলো না।অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে, পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি পেলেন I.C.S চাকুরীর প্রতি তাঁর কোন মোহ ছিলোনা। শুধু মাএ উচ্চাবিলাসী বাবার ইচ্ছানুযায়ী তিনি পরীক্ষায় যোগদান করেন।১৮৯০ সালে পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে,দেখা যায় ল্যাটিন ও গ্রীকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে তিনি একাদশ স্থান পেয়েছেন।

সম্পূর্ণ নিজ চেষ্টা সামর্থ্যে তিনি কেমব্রিজে উচ্চতর শিক্ষা জীবনে প্রবেশ করেন।কলেজ ছাড়ার পর তার বাসস্থান ছিল ক্যামব্রিজ।কেমব্রিজে যাওয়ার আগে থেকেই মাতৃভূমির প্রতি শ্রী অরবিন্দ আকর্ষণ অনুভব করতে থাকেন।ভারত বর্ষের সামাজিক রাজনৈতিক ঘটনা তাঁকে আকৃষ্ট করতো।বিষ্ময়কর ব্যাপার ছিলো যে পিতা তাঁদের ইংরেজ বানাতে চেয়েছিলেন, তিনি প্রথম তাঁর মধ্যে দেশ প্রেম এর প্রেরণা সঞ্চার করেন।কৃষ্ণধন সরকারী চাকুরীকালীন, ভারতীয়দের প্রতি ইংরেজ শাসককুলের বহুবিধ অন্যায় অত্যাচার পরিলক্ষিত করেন।তাঁর মত স্বাধীনচেতা ব্যাক্তির পক্ষে ছিল অসহনীয়। একবার কৃষ্ণধন জেলা মেজিস্ট্রেট এর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।স্থানীয় সংবাদপত্রে ইংরেজ শাসককুলের অন্যায়,অবিচার, অত্যাচার ছাপা হতো।কৃষ্ণধন সেগুলো সংগ্রহ করে ছেলেদের পাঠাতেন।অরোবিন্দ গভীর আগ্রহ, ঘৃনার সহিত সেগুলো পাঠ করতেন।
কেমব্রিজে পাঠরত ভারতীয় ছাএরা কয়েক বছর আগে ভারতীয় মজলিস ছাএ সংগঠন তৈরি করেন।অরবিন্দ ভারতীয় মজলিশের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সংগঠনের কর্মকান্ডের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান।সামাজিক মেলামেশার কেন্দ্র, এ সংগঠন উল্লেখ করলেও মুলতঃ মজলিশ ছিলো, রাজনৈতিক সচেতন ছাএদের মিলন স্থল।এই ছাএরা বৃটিশ রাজত্বের ঘোর বিরোধী ছিল।

১৮৯২ সালের মে মাসে শ্রী অরবিন্দ Classical Tripos পরীক্ষায় প্রথম ভাগে প্রথম শ্রেনীতে পাশ করেন।কিন্তু এতো কৃতিত্ব সত্বেও তিনি স্নাতক হতে পারেননি।নিয়ম অনুযায়ী বি,এ ডিগ্রি পেতে হলে তিন বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক থাকতে হবে।কিন্তু দুবছর পর তিনি কেমব্রিজ ছেড়ে চলে আসেন।

ফেরদৌসি কাজী লিনু হক

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading