৭০ বছরের বৃদ্ধা সাবিয়া বেগম। থাকেন নওগাঁ শহরের বাঙ্গাবাড়িয়া বিহারি কলোনি মহল্লার ছোট যমুনা নদীর গাইড ওয়াল-সংলগ্ন সরকারি জমিতে। সেখানে ঝুঁপড়ি ঘরে গত কয়েক বছর ধরে বসবাস করছেন তিনি। স্বামী নুরু মিয়া মারা গেছেন ২৫ বছর আগে। মেয়ের বয়স যখন আট মাস তখন স্বামী মারা যান। বিভিন্ন জনের বাড়িতে কাজ করে জীবন চলত তার। মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর এখন একা থাকেন। বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন আর কাজ করতে পারেন না। ভিক্ষা করে দিন চলে তার।

শুক্রবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে উত্তপ্ত রোদে বিহারি কলোনি মাঠে একটি টিনের ওপর নষ্ট ভাত শুকাচ্ছেন তিনি। এমন দৃশ্য দেখে নওগাঁ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রিয়াজ খান মোবাইলে ছবি তুলে নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেন। বিষয়টি দেখে অনেকেই মর্মাহত হন। শুধু সাবিয়া বেগম নন, ওই কলোনির প্রায় ২০-২৫টি পরিবারের একই অবস্থায় দিন কাটছে। করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তাদের জীবন ধারণ। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের।

সাবিয়া বেগমের ভাত শুকানোর দৃশ্য মোবাইলে ধারণের পর ফেসবুকে পোস্ট করে নওগাঁ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রিয়াজ খান লিখেছেন, ফেসবুকে ঢুকলেই দেখি ওখানে-সেখানে ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে। তবুও আজ এমন দৃশ্য দেখতে হলো। বৃদ্ধাকে ভাত শুকাতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম কি করবেন এগুলো দিয়ে? উত্তরে বৃদ্ধা বললেন কাজ নেই, তাই বাজার করতে পারিনি। ঘরে তরকারি নেই, চালও শেষ। তাই নষ্ট হয়ে যাওয়া ভাত শুকাচ্ছি। ভাত শুকিয়ে চাল হলে আবার রান্না করে খাব। এগুলো নষ্ট ভাত। তবুও এই মুহূর্তে জীবন ধারণের জন্য বিকল্প পথ নেই। বাঁচতে হলে এগুলোতেই খেতে হবে। কারণ কেউ আমাদের ত্রাণ দেয় না।

রিয়াজ খান আরও লিখেছেন, যারা ত্রাণ বা বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী বিতরণে নিয়োজিত আছেন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেছি; আপনারা এই অসহায় মানুষটার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।

বৃদ্ধা সাবিয়া বেগম বলেন, গতকাল রাতে এক প্রতিবেশী ভাত দিয়েছেন। রাতে কিছু খেয়ে রেখে দিয়েছি। সকালে দেখি ভাত নষ্ট হয়ে গেছে। ওই নষ্ট ভাত পানিতে পরিষ্কার করে রোদে শুকাতে দিয়েছি। ভাত শুকিয়ে চাল হলে পরে রান্না করে খাব। গতে কয়েকদিন থেকে ঘরে বাইরে যেতে পারিনি। ঘরে কোনো খাবার নেই আমার। খুব কষ্ট করে চলছি। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি।

একই কলোনির বিলকিস, চেলি ও নাইচ বেমগ বলেন, কলোনিতে যারা বসবাস করে এদের কেউ স্বামীহারা, কারও স্বামী অসুস্থ, কেউ রিকশা ও ভ্যানচালক। করোনা আসার পর থেকে আমাদের গজব শুরু হয়েছে। মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করে জীবন চলত। এক সপ্তাহ ধরে কাজ বন্ধ। শুনতেছি বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ দেয়। কিন্তু আমাদের মহল্লার কেউ তো পেল না। খুব কষ্ট করে চলছি আমরা।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading