লজ্জার মাত্রাস্কেল !

আইন প্রনেতা, আইন তৈরি করেন এবং জনমানুষেরা সেই আইন মানতে বাধ্য হন। কোট-কাচারি, আইন-আদালত সেই আইন দিয়ে বিচার করেন। বিচারের ফলাফল, নিরাপরাধ ঘোষনা, জেল-জরিপানা এমন কি ফাঁসি হওয়া । সবই ঠিক আছে। এমনটাই হবার কথা। আমরা ধন্য যে সব কিছুই আইনসম্মত হয়।
ইতিমধ্যেই দেশের আনাচেকানাচে সবাই জেনে গেছেন সাংসদ বুবলির কথা। কি করেছেন, তাই সেই কথায় আর জড়ালাম না। সত্যি বলতে আমাদের মত সাধারন জনমানুষের ভীষণ লজ্জা হয়, এসব বলতে। অথচ উনারা আইন প্রনেতা হয়েও কি অনায়াসে আর লজ্জাহীনার মত এই অন্যায় কাজগুলো করেই যান !
সাংসদ বুবলি, সাংসদ রুমিন, সাংসদ মেনন, উনাদের নিয়েই আজকের আলোচনার প্রতিপাদ্য বিষয় ( আছে আরো অনেক বা বেশিরভাগ) । বুবলির প্রক্সি পরীক্ষা, রুমিনের জমির আবেদন, মেনন সাহেবের ভোট হয়নি কাহিনী । রুমিন আর মেনন সাহেবের ভাষ্যেনুযায়ী সংসদ অবৈধ, অথচ এই সংসদের কাছেই একজন জমির আবেদন করেন আর অন্য জন বেতনভাতা ( জনগণের টাকায়) থেকে শুরু করে সব সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন। অবশ্য বেতনভাতা ও সুযোগ সুবিধা সবাই নিচ্ছেন। আর বুবলি , উনিতো সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য পাগল ! কি হবে এই কাগজের সার্টিফিকেট দিয়ে ? এটা কি তাবিজ বানিয়ে গলায় ঝুলিয়ে রাখবেন ? না, এই সার্টিফিকেটে জ্ঞাণ বাড়বে ? আমি জানিনা, একজন সাংসদকে কি সার্টিফিকেট কোথাও দেখাতে হয় ? উনিতো সাংসদ হয়েই আছেন, সেই সম্মানও নিশ্চয়ই পাচ্ছেন, অন্তত ক্ষমতার চর্চাতো নিশ্চয়ই করেই চলছেন, তাই নয় কি ? তাহলে সামান্য একটি কাগজের জন্য নিজেদের কেন এত নিচে নামানো ? আচ্ছা, উনারা নিজেদের পরিবারের সদস্যদের কাছে কিভাবে মুখ দেখান? বা, সমাজের দশজনের নিকটই বা কি করে মুখ দেখান ? এই একই প্রশ্ন অন্য সাংসদের জন্য প্রযোজ্য । এই সাংসদরাই আবার কিভাবে জন সম্মুখে বক্তৃতা বিবৃতি দেন? উনারা কি জানেন বা বুঝেন কেন জনগণ সময় সুযোগ বুঝে তাদেরকে পঁচা ডিম বা জুতো ছুঁড়ে মারেন । ধারণা করি, সামনে এইরকম ঘটনা যে ঘটবে না, কে বলতে পারে ?
শুধু স্বরণ করিয়ে দেবার জন্য তিনজন বিখ্যাত সাবেক সাংসদের ( প্রয়াত) কথা বলি( আছেন অনেকেই)। মিজানুর রহমান/কাজী জাফর/সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। রাজনীতির স্তম্ভ/পিলার ছিলেন মিজানুর রহমান সাহেব, সবার মনে আছে উনার রাজনৈতিক কার্যক্রমের ফলে ( এরশাদের আমলে) তরুণ সমাজ ভাষার বেদীর সামনে উলঙ্গ ( শব্দটি অনিচ্ছা সত্যের ব্যবহার করলাম) করে ছেড়ে ছিলেন। কাজী জাফর সাহেব, চিনি চুরির দায়ে উনার মত আরেক রাজনীতির স্তম্ভকে কাজী জাফর থেকে কেজি জাফর হতে হয়েছিলো ( বিএনপির আমলে)। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বাকপটু রাজনীতির স্তম্ভ ছিলেন ( আওয়ামী সময়ে)। একবার মন্ত্রী হয়েই, রেলের কালো বিড়াল ধরবেন বলে ঘোষনা দেওয়ার কয়েকমাস পরেই নিজে ৭০ লাখ নগদ টাকার বস্তার ধরে বসলেন ! মন্ত্রীত্ব হারান,ইজ্জত হারান ( !) জনগণ কালো বিড়াল ( শরীরের রং এর কারণে,আরো বেশি বলতো) বলেই ডাকতো।
বলছিলাম অপমানের কথা। জানিনা, সাংসদদের অপমান বোধ আছে কি নাই ? তবে সাধারণ জনগণের কিন্তু সেই বোধ-জ্ঞাণ ঠিকই আছে। এই দেশের সাধারণ মানুষের সকল চাহিদা ( নিম্নতম) পূরণ হয় না, তারপরেও নিজেদের কে সমাজের দশজনের কাছ থেকে গোপন রাখেন। যেন সমাজের কেউ বুঝতে না পারেন, তাদের নিজেদের অপূর্ণতার কথা । এদেশের সাধারণ জনগণ এমনই হয় । অথচ সেই জনগণের জনপ্রতিনিধিদের কার্যক্রম দেখলে মনে হতেই পারে এদের চামড়া নিশ্চয়ই বিশেষ কোনো প্রাণীর মত। উপরে তিনজন বিশিষ্ট রাজনীতির স্তম্ভের কথা উল্লেখ করেছি, কেননা উনাদের মতই রাজনীতির ঝানু নাড়কেল একজন মেনন সাহেব। মেনন সাহেবের প্রতি অনুরোধ থাকবে, কোনো এক সময়ে আপনার সাথের সেই সব রাজনীতিবিদদের কথা নিরবে চোখ বন্ধ করে স্বরণ করবেন। পাশাপাশি তাদের জীবনের শেষ পরিণতির কথাও একবার ভাববেন, আশা করি অনেক কিছুই দেখতে পাবেন। আর অন্য দুইজন সংরক্ষিত আসনের বুবলি/রুমিন, আপনারা অল্প বয়সের, তরুণ প্রজন্মের, নিজেদের শুদ্ধতা আনার অনেক সুযোগ আছে, ভেবে দেখুন। একবার নিরবে ভাবেন তরুণ প্রজন্ম আপনাদের সমন্ধে কি ভাবে বা ভাবতে পারে? সব শেষে বলবো, লজ্জার একটা মাত্রাস্কেল থাকে, অতিক্রম করবেন না। তাহলে জনগণও সময়ে অনেক কিছুই অতিক্রম করে, সেই মাত্রাস্কেলেই আপনাদের পাওনা শোধ করবে।
বুলবুল তালুকদার
সহকারী সম্পাদক, শুদ্ধস্বর ডটকম