কেউ রাজনৈতিক মতের বিরোধী হলেই তাঁকে ‘দেশদ্রোহী’ বলে দাগিয়ে দেওয়াটা বিজেপির জাতীয়তাবাদ নয় বলে মনে করিয়ে দিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী।
পাঁচ বছর পরে নিজের ব্লগে কলম ধরে আডবাণীর এই মন্তব্যের লক্ষ্য নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ বলেই বিরোধী নেতারা এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন। লোকসভা ভোটের প্রচারে মোদী রোজই টানছেন বালাকোটে বায়ুসেনার অভিযান-প্রসঙ্গ। সেই সূত্রে কংগ্রেস তথা বিরোধীদের নিশানা করে তাঁদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্নও তুলছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, কাজ দিয়ে নয়, উগ্র জাতীয়তাবাদের ঢেউ তুলে ভোটে জিততে চেয়ে সেনাকে হাতিয়ার করতে চাইছেন মোদী। আডবাণী আজ ঠিক এখানেই আঘাত করেছেন।
মোদী-অমিত শাহেরা গত পাঁচ বছর ধরে তাঁকে যে-ভাবে উপেক্ষা করেছেন, যে-ভাবে দীর্ঘদিনের জেতা গাঁধীনগর আসন থেকে তাঁকে প্রার্থী না-করে কার্যত অবসরে যেতে বাধ্য করেছেন, তাতে চূড়ান্ত ক্ষুব্ধ আডবাণী। কিন্তু মুখ খোলেননি এত দিন। লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণের ঠিক এক সপ্তাহ আগে মোদী যখন প্রচারের সুর তুঙ্গে নিয়ে যেতে চাইছেন, ঠিক তখনই কার্যত ব্রহ্মাস্ত্র ছাড়লেন এই প্রবীণ নেতা। ৬ এপ্রিল বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবসকে উপলক্ষ করে, তার দু’দিন আগে আজ নিজের ব্লগে প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি সভাপতিকে স্পষ্ট বার্তা পাঠালেন।
দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্যকে মোদী জমানায় গুরুত্ব কমিয়ে ‘মার্গদর্শক মণ্ডলী’-তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেই আডবাণী এ দিন নিজের ব্লগে মূলত তিনটি কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। এক, জন্মলগ্ন থেকে বিজেপি কখনও রাজনৈতিক মতবিরোধীদের ‘শত্রু’ বলে মনে করেনি। শুধু বিপক্ষ হিসেবেই ভেবেছে। দুই, বিজেপি যে-ভাবে ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে দেখে, তাতে কখনও রাজনৈতিক মতবিরোধীদের ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’ বা দেশদ্রোহী হিসেবে দেখা হয় না। তিন, বিজেপি প্রতিটি নাগরিকের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক পছন্দের স্বাধীনতার প্রতি দায়বদ্ধ। এবং বলেছেন, বিজেপি নেতৃত্বকে নিজের ভিতরে তাকাতে হবে। অতীতের দিকেও তাকাতে হবে।