প্রথমেই একটি গল্প বলি:
পাগলা গারদে দীর্ঘদিন যাবত্ কতগুলো পাগল আছে। এক সময় ডাক্তাররা ভাবলো এদের ছোটোখাটো পরীক্ষা করিয়ে যদি মনে হয় তারা ছাড়া পাওয়ার যোগ্য, তাহলে গারদ থেকে রিলিজ করা হবে। সেই চিন্তাভাবনা থেকেই এঈটি পরীক্ষার বন্দবস্থ করা হলো। একটি লোহার বল দিলো ওদের খেলতে, সব পাগলে মিলেই লোহার বলে লাথি মারে আর পায়ে ব্যথা নিয়ে বসে যায় । কেবলমাত্র একজন পাগল বলে কোনো লাথি দেয়নি। ডাক্তাররা ভাবলো, তাহলে সে সুস্থ আছে। লোহার বলে লাথি দেয়নি, সুতরাং ওকে রিলিজ করা যায় । একজন ডাক্তার তাকে জিজ্ঞাসা করলো, আচ্ছা তুমি বলে লাথি দিলে না যে , কারণ কি ? তার উত্তরটি ছিলো , আমি তো হেড দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তারপরে যা হবার তাই হলো। আর ছাড়া হলো না। গল্পটির কথায় পরে আসি।
আগামী ১১ মার্চ এ বাংলাদেশের কথিত দ্বিতীয় সংসদ ডাকসু নির্বাচন । দীর্ঘ ২৮ বছর পর হলেও হতে যাচ্ছে । যতটুকু জানা গেছে , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু নির্বাচনে এবার চতুর্মুখী লড়াই হবে। আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের পাশাপাশি মাঠে সমান্তরালভাবে লড়ছে বাম জোট, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এর বাইরেও ভিপি, জিএস ও হল ছাত্র সংসদে প্রার্থীর শেষ নেই। এর মধ্যে জিএস পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লাইমলাইটে চলে এসেছে সাংবাদিক এ আর এম আসিফুর রহমানের নাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির দুবারের সভাপতি আসিফ, ভিপি পদে মোট ২১ এবং জিএস পদে ১৪ জন প্রার্থী হয়েছেন। তবে হলে হলে ছাত্রলীগের পাশাপাশি কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থীরা ভোট জমিয়ে তুলছেন। জানা গেছে, ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে এরই মধ্যে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। নিরপেক্ষভাবে সবাই ভোটের পরিবেশ চায়। ছাত্রনেতারা বলছেন, কোনো ধরনের পক্ষপাত মেনে নেওয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি করলে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা কঠোরভাবে তার জবাব দেবে।
ইতিমধ্যেই ডাকসু নিয়ে নানান আজগুবি খবর, আজগুবি বলছি কেননা এটা হবার কথা নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হল সংসদের নির্বাচনে তিনজন সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস)সহ মোট ৩৬ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশ করা চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় দেখা যায়, এই প্রার্থীদের বিপরীতে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। এর সবাই ছাত্রলীগের প্যানেলের।
প্রশ্নটি সেখানেই উঠে, এরা সবাই ছাত্রলীগের প্যানেলের ! কে না জানে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বাংলাদেশের সকল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ই ছাত্রলীগের কথায় উঠে বসে বা ভিন্নভাবে বলা যায়, তাদের প্যারেন্টস্ দল ক্ষমতায়, সুতরাং দেশের রাজনৈতিক চরিত্র অনুযায়ী তাদের হাতেই সব নিয়ন্ত্রণ । ইতিপূর্বে প্রশ্ন উঠেছে হলে যেন ভোট না হয়। কেননা তাতে করে বিশেষ ছাত্র সংগঠনটি সব তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিবে। গত দুদিন পূর্বেই পত্রিকায় দেখলাম ( কয়েকটি জাতীয় পত্রিকা) এই বিশেষ ছাত্র সংগঠনের নেতারা অনেক কে হলে ডেকে এনে প্রার্থীতা তুলে নেওয়ার জন্য এক প্রকার অনুরোধ এবং সাথে চাপ প্রয়োগ করছে। সুতরাং এই দুটি ঘটনা থেকেই অনুমেয় হয় ডাকসুর ভোট নিয়ে খুব ভালো কিছু হয়তো নাও হতে পারে। বাঙালি সন্দেহ প্রবণ বলে সেন্দহের কথাটাই অগ্রিম বলে রাখা । এই জাতীয় কিছু না ঘটলেই ডাকসু সর্বোপরি ছাত্র রাজনীতি এবং জাতির উপকার হবে।
একটু স্বরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যেই ছোট্ট করে বলি, ৭৩ এ এই ডাকসুতেই বেলটবাক্স ছিনতাইয়ে ঘটনা যে কোনো নির্বাচনের কলঙ্কের প্রথম ধাপের একটি। আজ অব্দি সেই কথা দেশ স্বাধীনতার নেতৃত্ব দানকারী দলকে শুনতে হয় , ইতিহাসে সেই কথা লিখা থাকবে চিরকাল এবং চিরকালই তা শুনে যেতে হবে। এগুলো কখনোই রিপেয়ার হয় না এবং হবারও নয়।
এখানেই সেই পাগলা গারদের গল্পের কথা আসে। কেউ মানুক আর না মানুক, বর্তমানে দেশের রাজনীতি যেন পাগলা গারদে আছে। এই পাগদা গারদ থেকে রাজনীতি বেড় করে আনার জন্য ডাকসু হতে পারে একটি পদক্ষেপ । আপাতত সকলের প্রচার প্রচারণায় সব কিছু ঠিকঠাক আছেই বলেই মনে হচ্ছে, যদিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কয়েকজন নির্বাচিত হয়ে গেছে, যা রহস্যময়! আপাতত এই সুন্দর পরিবেশেই সুষ্ঠু ডাকসু নির্বাচন হতে দিন। আর যদি এই ডাকসু নির্বাচন কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করে কলন্ক যুক্ত করেন, তাহলে সেই পাগলদের মত রাজনীতিকে পাগলা গারদেই ফেরত যেতে হবে, মানে রাজনীতি এই রাজনীতির পাগলা গারদেই রয়ে যাবে। তবে মনে থাকা ভালো যে, দেশে বর্তমানের রাজনৈতিক পাগলা গারদেও ডাকসু কিন্তু ভিন্ন কিছু হতে পারে। সকলেরই স্বরণ আছে নিশ্চয়ই ১/১১ এর সেই কঠিন সরকারও ( যারা সকল দলের রাজনীতিবিদদের ঘোলা জল খাইয়ে ছিলো ) এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে একটি সামান্য ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করেই নিজেদের শনি ডেকে এনেছিলো। তার চেয়েও বড় উদহারণ তো আমাদের স্বাধীনতার উদহারণ । সুতরাং সাধু সাবধান ।
বুলবুল তালুকদার
সহকারী সম্পাদক, শুদ্ধস্বর ডটকম