পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দশম বার্ষিকীতে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয়েছে। গতকাল সকালে বনানীর সামরিক কবরস্থানে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান পরিবারের সদস্য, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাদের সামরিক সচিব, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনী প্রধান ও রাজনৈতিক নেতারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন শহীদদের প্রতি। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে শুরুতে শহীদদের কবরে প্রেসিডেন্টের পক্ষে তার সচিব মেজর জেনারেল মো. সরোয়ার হোসেন ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, বীরবিক্রম পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এএমএমএম আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ স্যালুট প্রদান করেন। পরে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।

এ ছাড়াও গতকাল সকল সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে কোরআন খতমের ব্যবস্থা করা হয় এবং শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। মাহফিলে সেনাবাহিনীর সকল স্তরের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দশ বছর পেরিয়ে গেলেও শহীদ পরিবারের সদস্যদের শোক এতটুকুও কমেনি। প্রতি বছরের ন্যায় গতকালও নিহত সামরিক কর্মকর্তাদের স্বজন, বন্ধু, সহকর্মীরা জড়ো হন বনানী সামরিক কবরস্থানে। ফুলেল শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করেন তাদের। অশ্রুভেজা নয়নে ফুল ছিটিয়ে দেন প্রিয়জনদের কবরে। শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া ও কোরআন পাঠও করেন অনেকে। আর যেন এমন ঘটনা না ঘটে সেজন্য জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করেন স্বজনরা। শ্রদ্ধা জানানো শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, খুব শিগগিরই বিস্ফোরক মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। তিনি জানান, ৫৮ জন অফিসারসহ মোট ৭৪ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এর বিচারের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদলও নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় নেপথ্যের কারিগরদের খুঁজে বের করার দাবি জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়ায় এই ঘটনার পেছনে কারা পরিকল্পনাকারী ছিল, কারা লাভবান হয়েছে তার কোনোটিই উদ্‌ঘাটিত হয়নি। ২০০৯ সালের ২৫ এবং ২৬শে ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় বিদ্রোহের নামে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করে বিপথগামী জওয়ানরা। বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের দায়ে আদালত ১৩৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading