জামায়াত ইদানিং বাজারের হট কেক! অবশ্য এটাকে হট কেক না বলে বাসি গন্ধ যুক্ত রক্তমাখা কেক বলাই মাননসই । লন্ডনে বসে ব্যারিস্টার রাজ্জাক সকলের চোখের পর্দায় রং ছুড়ে দিয়েছে। আর আমরা পাবলিক সেই রং দিয়ে রঙিন ছবি আঁকতে ব্যস্ত! কেউ বলছি জামায়াত নামক কলঙ্কিত দলটি তাদের খোলস পাল্টিয়ে তুরস্কের ধারায় নতুন ভাবে প্রকাশ হতে চলছে। আবার কারো বিশ্লষণ এটা নতুন বোতলে পুরোনো ধারায় ইজিপটের ব্রাদারহুটের আদর্শ । কথা গুলো সবই ঠিক আছে। তবে একটা কথা স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন যে, এই দলটি তার খোলস সাপের মত পাল্টালেও বিষ দাঁত থেকেই যাবে। সেই দাঁত যতদিন ভাঙা না যাবে , ততদিন এই দলটি সেই ৪৭ এর দেশভাগের সময় থেকে যে ভাবে কামরিয়ে এসেছে , ভবিষ্যতেও এরা একই ভাবে কামরাবে। তার সাক্ষ্য প্রমাণ আমাদের ৭১ ই যথেষ্ট । মনে রাখা ভালো সেই বিষ দাঁতটি হলো এদের আদর্শ (!)
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের কথায় পরে আসি। আগে দেখা ভালো এই দলটি রক্ত ঝরা এই স্বাধীন দেশে কি করে আবার প্রতিষ্ঠিত হলো। এই প্রশ্ন উঠেলেই এক পক্ষের বেশ ভালো ফিলিংস্ চলে আসে। এইবার শক্তভাবে ধরা যাবে ভেবেই। সেই জালে যে নিজেরাই আঁকড়িয়ে আছেন, সেই হিসেব কষতে একটু বেশিই ভুল হয় তাদের। সেই জালের কথা বলতে গেলেই পক্ষ/বিপক্ষ চলে আসে। আমি সেই দিকে না গিয়েই ছোট্ট করে বলি, এই দলটিকে নিয়ে দেশের বড় দুটি দল নিজেদের রাজনৈতিক ফয়দা লুটতে গিয়ে যে খেলা খেলেছে , সেই খেলাই এখন দেশের জন্য সাপেবর হয়ে দেখা দিয়েছে । সত্যি বলতে দুই দলই কোনো না কোনো ভাবে দোষী । হয়তো একটু কম বা বেশি। কেউ হয়তো হাতে হাত রেখে দলটিকে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে, অথবা অন্যদল একেবারে দুধ কলা দিয়ে সাপটিকে পুষেছে। এখন তো দুধ কলা দেওয়া দলটি এই সাপের প্যাঁচ থেকে নিজেকে সড়াতেও পারছে না ! ঘটনা ক্রমে মনে হচ্ছে , এই সাপটিই যেন এখন দয়া দাক্ষীন্য দেখাতে প্রস্তুত । সেই দুধ কলা দেওয়া দলকেই ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত । এখানেই সেই জামায়াত নামক সাপটির আদর্শ নিহিত । যে দল নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে রক্তের হোলি খেলতে পারে , সেই দল নিজেদের আদর্শ কে টিকিয়ে রাখতে অনেক কিছুই করতে পারে।
এদের আদর্শে ঢাল হিসেবে রাখে ধর্ম কিন্তু বাস্তবিকতা হলো কেবলি বিষ।
এই তো গেলো জামায়াত নিয়ে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো সংক্ষেপে ভানুমতির খেলা। এই ভানুমতির খেলায় কিন্তু আমাদের আদালতও কম যায় নি! এখানে বলা ভালো যে আদালত নিয়ে বলা বিপদ জনক, তাপরেও না বলে পারা যায় না। ইতিপূর্বেই কোনো এক লেখায় লিখেছিলাম, গোলাম আজমের এই দেশে ফেরার কাহিনী । আবারো প্রায় একি কথা বলবো। হোক দ্বিতীয়বার বলা, তারপরেও বলতে হয় গোলামের কথা বারবার বলে এই প্রজন্মকে জানান দেওয়া দরকার। প্রয়াত সেই কুক্ষ্যাত জামায়াতি গোলাম যুদ্ধের পরে পশ্চিম পাকিস্তানেই ছীলো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে মা এর অসুস্থতার কথা বলে এই দেশে আবার পা রাখে। শেষ অব্দি এই দেশে ফিরে এসেই অতি চালাকি করে নিজের জন্মসূত্র এই পূর্বের অংশে বাংলাদেশে বলেই আদালতের স্বরণাপর্ণ হয় নাগরিকত্ব ফিরে পাবার জন্য । আমাদের আদালত তাদের বিজ্ঞ বিবেচনায় তার জন্মসূত্র কে সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয় । প্রশ্নটি সেখানেই, আমাদের আদালত নিজ উদ্বেগে কত প্রকার সুমোটম জারি করে , কত বিচার করে। অথচ এই কুক্ষ্যাত গোলামের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার সময় স্বাধীনতা যুদ্ধে তার ভুমিকাকে কোনো বিবেচনায় নিলো না !!! তাই বলছিলাম জামায়াত কে প্রতিষ্ঠিত করতে , আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো মত আমাদের আদালতেরও কম ভূমিকা নেই।
এখন ছোট্ট করে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের কথা বলি। এই লোক জামায়াত কে ক্ষমার কথা বলেছেন, ভালো বেশ ভালো। নিজে যে সেই জামাতি যুদ্ধাপরাধীদের জন্য বিচারে জামায়াতের পক্ষ হয়ে লড়েছেন! তা বেমালুম ভুলে বসেছেন। কেউ হয়তো বলবেন আইনজীবী , আইনি সহায়তা দিতেই পারেন, উত্তর হচ্ছে না । উনি নিজে জামায়াতের একজন সংগঠক কেন্দ্রীয়ভাবে । সাথে ওনার বিরুদ্ধেও ৭১ এর ভূমিকায় প্রশ্ন আছে। এই ব্যারিস্টার এখন আবার ক্ষমার কথা বলে ভিন্ন কোনো রাস্তা জামায়াতের জন্য তৈরি করছেন কিনা , সে সেন্দহ থেকেই যায় । এই জামায়াতের কাউকেই দ্বিতীয়বার বিশ্বাস করা হবে দেশের জন্য বড় বিপদ। অনেকে নতুন প্রজন্মের কথা বলবেন, স্বাধীন দেশে জন্ম নেওয়া শিবির বা জামায়াতিদের কথা বলবেন । তাহলে প্রশ্ন করাই যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধে যে দল এই দেশের মানুষকে হত্যা করতে পারে, তাদের যে কোনো আদর্শ হোক, হোক সেটা মহা সুন্দর বা মহা যুক্তিযুক্ত, তবুও তো এই দলের অংশীদার হওয়া কি যুক্তিযুক্ত হয় ? সুতরাং কেবলমাত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে জন্ম বা যুদ্বের সময় অল্প বয়সি ছিলেন , ইত্যাদি ইত্যাদি বলা কেবলি যুদ্ধ জয়ী স্বাধীন দেশের সাথে এটা একটা ফাজলামো ছাড়া ভিন্ন কিছু না। সুতরাং এদের ধ্বংসই কাম্য হওয়া উচিত।
এদের কে চিরতরে ধ্বংস করতে হলে সত্যিকারেই আদর্শীক ভাবে ধ্বংস করতে হবে। এই স্বাধীন দেশে মুসলিম লীগ বা নেজামে ইসলামকে মানুষ আর মূল্যায়ন করে না। তাদের আদর্শ একি ডোলার জামায়াতী আদর্শ ছিলো। এদের কে যদি আদর্শীক ভাবে বিলুপ্ত করা যায়, তাহলে জামায়াত কে কেন নয় ? সুতরাং বলাই যায় স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশত বছর পরে এদের আদর্শকে ধ্বংস করা নিশ্চয়ই এখুনি চুড়ান্ত সময় ।
লবুল তালুকদার
সহকারী সম্পাদক, শুদ্ধস্বর ডটকম