সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান দুই দিনের সফরে পাকিস্তানের পৌঁছেছেন রবিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি)। তাকে বহনকারী গাড়িটি নিজে চালিয়ে নিয়ে যান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। যুবরাজের থাকার জন্য নির্ধারিত হয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, কাশ্মিরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ৪০ সদস্যের মৃত্যুতে পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। দুই দেশের উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের প্রেক্ষিতে যুবরাজের সফর একদিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানের পর তার ভারত সফরে যাওয়ার কথা।সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের এই সফরে পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি আরবের দুই হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

মোহাম্মদ বিন সালমানকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন ইমরান খান। বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা ও গান স্যালুট দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পৌঁছানোর পরে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার দিয়ে তাকে সম্মানিত করা হয়। তার সফর উপলক্ষে ইসলামাবাদজুড়ে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শহরটির মূল সড়কগুলোতে যান চলাচল সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। বসানো হয়েছে হাজারখানেক পুলিশ চৌকি। নিষিদ্ধ করা হয়েছে শহরের ওপর দিয়ে বিমান চলাচল। ইসলামাবাদের একটি বড় অংশজুড়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট পরিষেবা। সৌদি যুবরাজ সফর উপলক্ষে সোমবার ঘোষণা করা হয়েছে সাধারণ ছুটি।

যুবরাজের সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এবং গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন মন্ত্রী। পাকিস্তানের পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তারা দুই হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি সম্পন্ন করেছেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগেই জানিয়েছিল দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ, অর্থায়ন, জ্বালানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সংবাদমাধ্যম, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াবিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।

সেখানে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতার প্রসঙ্গে মোহাম্মদ বিন সালমান মন্তব্য করেন, ‘এই সহযোগিতা প্রতি মাসে, প্রতি বছর বাড়তে থাকবে। আমরা মনে করি, সামনের দিনগুলোতে পাকিস্তান একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে উঠে আসবে। তাদের সেই উন্নতিতে অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে চাই আমরা।’ সেখানে যুবরাজ নিজের দেশের বিষয়ে তার পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেন। তেলনির্ভরতা কমিয়ে সৌদি আরবের অর্থনীতিকে বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে তিনি পর্যটন শিল্প বিকাশের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। যুবরাজের ভাষ্য, সৌদি আরবের লক্ষ্য ১০ কোটি পর্যটক পাওয়া। ২০৩০ সালের মধ্যে না হলেও ক্রমেই সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর বিষয়ে তিনি আশাবাদী।

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সফরকে পাকিস্তান ২০১৫ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরের মতোই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা এতটাই পর্যুদস্ত যে দেশটি ‘ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ডের’ (আইএমএফ) কাছ থেকে এক হাজার ২০০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়েছে। কিন্তু এর জন্য দেওয়া হয়েছে কঠিন সব শর্ত। তাছাড়া চুক্তিও এখন পর্যন্ত স্বাক্ষরিত হয়নি। এরকম পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে সৌদি আরব। বৈদেশিক মুদ্রা প্রায় তলানিতে ঠেকা পাকিস্তানের জন্য দুই হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ কিছুটা হলেও স্বস্তি নিয়ে এসেছে।

মোহাম্মদ বিন সালমানের পাকিস্তানের সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া এবং প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা। পাকিস্তান থেকে তিনি যাবেন ভারতে। তার ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা থাকলেও শনিবার কোনও কারণ না দেখিয়েই তা বাতিল করা হয়। ভারত থেকে মোহাম্মদ বিন সালমান যাবেন চীনে। সেখানে দুই দিনের সফর শেষে দেশে ফিরবেন তিনি।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading