নতুন নির্বাচনের জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দুই বছর সময় দিতে চায় ঐক্যফ্রন্ট। ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতা বলেছেন, সম্ভবত বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ক্ষমতায় থেকে উদযাপনের জন্যই আওয়ামী লীগ এতো মরিয়া হয়েছিল এই নির্বাচনে। সেজন্যই ২১ সাল পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বড় ধরনের কোন কর্মসূচি নেবে না। তবে ২১ সালের পর থেকে নতুন নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ধাপে ধাপে বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে চায়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা আ.স.ম. আবদুর রব বলেছেন,‘এই সংসদ তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবে না।  জনগণের আন্দোলনের মুখেই সরকারকে নতুন নির্বাচন দিতে হবে।’ তিনি দাবি করেন,‘জনগণ এই নির্বাচনকে মেনে নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি তেমন নয়। জনগণ প্রতিরোধের পথ খুঁজছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা আগামী দুই বছরের একটি কর্মপরিকল্পনা নিয়ে ধাপে ধাপে এগুতে চাইছে। এই কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে

১. নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা: এই মামলার মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট চেষ্টা করবে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেছেন,‘ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে আমরা ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের প্রকৃত তথ্য উন্মোচন করবো।

২. সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাস: জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনে করে, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাস প্রয়োজন। ইতিমধ্যে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে বিএনপির নেতারা বলেছেন, বিএনপিতে সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাসের কাজ চলছে। এজন্য তাদের ছয়মাস থেকে এক বছর সময় লাগবে। ঐক্যফ্রন্টের অন্য দলগুলোই নিজেদের গুছিয়ে নিতে চাইছে আগে। গণফোরাম বলছে, নির্বাচনের সময় তাদের দলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যোগ দিয়েছেন। এজন্য গণফোরামও কাউন্সিলের কথা ভাবছে। আগামী একবছর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দলগুলো সাংগঠনিক সক্ষমতা বাড়ানোর কাজেই ব্যস্ত থাকবে।

৩. ঐক্যফ্রন্টের পরিধি বৃদ্ধি: এই সময়ের মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পরিধি বৃদ্ধি করার কাজ করা হবে বলে ঐক্যফ্রন্ট সূত্রে জানা গেছে। গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল সকল শক্তিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্ল্যাটফর্মে আনতে চাইছে জোটটি। আগামী একবছরের মধ্যে ঐক্যফ্রন্টের অবয়বে দৃশ্যমান পরিবর্তন হবে বলেই মনে করছে ফ্রন্টের নেতারা।

৪. জামাত সংকটের সমাধান: নির্বাচনের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সবথেকে বিব্রতকর অবস্থায়  আছে জামাত ইস্যুতে। জামাত থাকায় জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে ঐক্যফ্রন্টকে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, জামাত না ছাড়লে বিএনপির কোন আবেদনেই সাড়া দেয়া হবে না। এরকম বাস্তবতায় জামাত বিলোপ অথবা জামাতকে বিএনপি থেকে আলাদা করার কাজ চলছে। ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে জামাত ইস্যুর ফয়সালা হবে।

৫. নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা: আগামী এক বছরের মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা প্রণয়ন করবে বলে জানিয়েছে। এই রূপরেখার ভিত্তিতেই ঐক্যফ্রন্ট ধাপে ধাপে আন্দোলন শুরু করতে চায়।

৬. সুশীলদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক: একবছর পর অর্থাৎ সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাসের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সুশীলদের নিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম করতে চায়।

ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলছেন, আগামী ২ বছরের মধ্যে ঐক্যফ্রন্টই হবে রাজনীতির প্রধান চরিত্র। তখনই তারা শুরু করবে আসল আন্দোলন।

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading