গত কয়েক মাস যাবত তাবলিক জামাত নিয়ে নানান প্যাঁজগি লেগে লেজে গোবরে অবস্থা । ইতিপূর্বে ( দেড় কি দু মাস আগে) একবার নিজেদের মাঝে এজতেমার মাঠ দখল নিয়ে মারামারি করে একজন পরপারে চলে গেছে, যা ওনাদের ভাষায় শহিদ হয়েছে।

লক্ষ্যণীয় যে, এই তাবলিক জামাত যাদেরকে মরুব্বি মানেন বা যারা একমাত্র উপদেশ দেবার অধিকার রাখেন,  তারা ভারতের দেউবন্দ। যতটুকু জানি, এই তাবলিক জামাত এখন দুইভাগে বিভক্ত । এক গ্রুপ মাওলানা জুবায়ের এবং আরেক গ্রুপ মাওলানা  সাদ গ্রুপ। বাংলাদেশের সংবিধান মেনে আমাদের দেশে তাবলিক জামাত এর একটি ট্রাস্টি আছে, যে ট্রাস্টি এই দেশের তাবলিক জামাত পরিচালনা করে। সম্ভবত সব কিছুই করা হয় ভারতের দেউবন্দ কে অনুসরণ করে।

আবার এই তাবলিক জামাত এর একটি শুরা আছে, অর্থাত এই শুরা কমিটির প্রতিনিধিগণ যারা তাবলিক জামাত এর নীতিনির্ধারক । এই শুরার প্রতিনিধিদের বলা হয় ” ফয়সল “। নীতিনির্ধারনীর বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৭ জন , যারা সবাই ইসলাম ধর্মের বড় বড় আলেম । বর্তমানে এই ৭ জনের একজন গুরুতর অসুস্থ, বর্তমানে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সক্ষম মোট ৬ জন। লক্ষ্যণীয় যে, এই ৬ জনের ৪ জন ভারতের মাওলানা সাদ এর বিপরীতে অবস্থান নিয়েছেন  , মাওলানা সাদ যিনি দীর্ঘদিন যাবত্ তাবলিক জামাত এর বিশ্ব এজতেমায় শেষ বা আখেরি বয়ান করেছেন।

সমস্যা হলো এই মাওলানা সাদ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ফতুয়া জারি করেছেন, যা অন্যান্য আলেমদের বিশ্লষণ অনুযায়ী নবী রাসুলের সুন্নতের বিরোধী । এমনকি মাওলানা সাদ এর ফতুয়া নিয়ে দেউবন্দও ভিন্ন মত প্রকাশ করেছে। যেহেতু দেউবন্দকে সবাই অনুসরণ করেন বা মানেন, আবার অন্যদিকে মাওলানা  সাদ এরও একটি অনুসারী গ্রুপ বেশ শক্তভাবেই দাঁড়িয়ে গেছে তার পক্ষে, সুতরাং যা হবার তাই হচ্ছে ! এখানেও গ্রুপিং এবং রাজনীতি ভালোভাবেই জড়িয়ে গেছে। ফলাফল ইতিমধ্যেই একজনের মৃত্যু!

তাবলিক, যার অর্থ মূলত ” দাওয়াত বা নিমন্ত্রণ ” করা । এই দাওয়াত হওয়ার কথা শান্তির জন্য , শান্তির বিপরীতে হয়েছে এখন  অশান্তি! কেননা রাজনীতি আর রাজনীতির জায়গায় নাই, এসে ঢুকেছে ধর্মে কর্মে । আরো সঠিক ভাবে বললে, বলতে হয় ধর্মে রাজনীতি কে ঢুকানো হয়েছে ! ঠিক এর বিপরীতে দেখা যায়, রাজনীতিতে ঢুকে গেছে ধর্ম ! বা একিভাবে বলা যায়, রাজনীতিতে ধর্মকে ঢুকানো হয়েছে।

প্রশ্ন হলো, রাজনীতিতে ধর্মকে প্রবেশ করানো হয় কেন ? সহজ উত্তর হলো, জনমানুষের কল্যাণে রাজনীতির চেয়ে স্বার্থটাই বড় বা মূল কথা ক্ষমতা !
তাহলে এই একি অংক নিশ্চয়ই তথাকথিত তাবলিক জামাত এর চর্চিত ধর্মের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। এখানেও জনমানুষের কল্যাণে ধর্মের চেয়ে স্বার্থটাই বড় বা ক্ষমতা !

দীন ইসলামের এত বড় বড় আলেমগণ এখন ধর্মকে পাশে রেখে ক্ষমতা চর্চার মগ্নতায় ডুবে আছে ! এই ক্ষমতা চর্চা করতে গিয়ে তাদের হিতজ্ঞাণে এতটাই মরীচিকা ধরেছে যে, তাদের সকলের মুরুব্বি দেউবন্দের কথাও কেউ আমলে নিচ্ছে না। সবাই নানান যুক্তি তুলে ধরছেন, তাও আবার ইসলামের আলোকেই !  দুই দলের কথা যদি শুনেন, যে কারো কাছেই মনে হতে পারে, দুই দলই তো ইসলামের আলোকে কথা বলছে !!!

আমাদের মত সাধারন মানুষের সমস্যা হয় বুঝতে, আসলে সত্য কে বলছে ? অথচ ইসলাম ধর্ম  কিন্তু একটাই। আবার প্রশ্ন উঠতেই পারে , যারা ইসলামের আলোকে বিতরণে ব্যস্ত, তারাই যদি একটি এজতেমা নিয়ে এত নিচে নামতে পারে যে, খুনা খুনি পর্যন্ত! মানবতা কে হার মানিয়ে মানুষের লাশ পর্যন্ত!  তাহলে শান্তির ধর্ম নিয়েও না মনে ক্ষুনসুঁটি দেখা দেয়।  শুধু বলবো এদের হেদায়াত হোক।

ভারতের দেউবন্দ মুরুব্বিদের অনুসারী আমাদের দেশে আরো একটি ইসলামিক কার্যক্রম পরিচালনার বিরাট পরিচিত নাম ” হেফাজতে ইসলাম “। এদের মধ্যেও ইতিমধ্যেই বেশ প্রকাশ্যেই রাজনীতি ঢুকেছে। এমনকি হেফাজত ইসলামও ইতিমধ্যেই ভাগ হয়ছে। এর বাংলাদেশ প্রধান পায় শত বছরের শফী সাহেবের অতি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে তওবা করে জাতীয় নির্বাচনের পূবেই হেফাজতের উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের একজন ” বাবু নগরী ” হেফাজত ভেঙে বের হয়ে এসেছেন। এখানেও রাজনীতিই ছিলো মূল কারণ। বাবু নগরী স্পষ্ট করেই বলেছেন, কোনো অবস্থাতেই আওয়ামী লীগের সাথে নাই ( পত্রিকার রিপোর্ট) । পরবর্তীতে এদের কোনো মিল হয়েছে কিনা জানিনা। তবে হেফাজতেও স্পষ্ট রাজনীতির খেলা দেখা গেছে বা ভিন্নভাবে বলা যায়, এখানেও রাজনীতি ঢুকার কারণ সেই একি ” স্বার্থ ” ! উদহারণ আর লিখলাম না, কেননা এটা এখন পাঠ্যপুস্তক সহ সার্টিফিকেটও প্রমাণিত ।

সব শেষে শুধু বলবো, এই আলেম ওলামায়েগণই আমাদের পরকালের জ্ঞাণ দান করেন! উনারা নিজেরাই শুদ্ধ কিনা , সেটাই এখন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন বটে।

20181221_172132

বুলবুল তালুকদার
সহকারী সম্পাদক, শুদ্ধস্বর ডটকম ।

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading