একটি ছোট্ট কাহিনী বলি, সম্ভবত প্রতিটি এলাকায় একজন কমন মামা থাকেন। আমাদের এলাকায়ও একজন কমন মামা ছিলো (নামটি উদ্বৃত্ত রাখলাম)। ওনার বাসায় প্রায়শই ছোটো খাটো চুরি হতোই। একদিন ভোর বেলায় উনি ভীষণ হাসছেন আর বললেন , চুরির কথা বললে মানুষ আর বিশ্বাস করবে না। কেননা প্রায়শই চুরি হয় এটাও অবিশ্বাস্য হয়ে যাচ্ছে। তবে আজকে আমার গিন্নি কে চোরে ন্যাংটা করে ছেড়েছে।  আমরা অনেকেই ছিলাম, হাসলাম আর জিজ্ঞাসা করলাম, মামা আসলে কি হয়েছে? মামার  উত্তর বুঝলি ভাগ্নেরা , ওই আর কি , রাতে তোর মামির শাড়িটা ঘাটের পাশে ছিলো। চোরে সেটাই জানালা দিয়ে নিয়ে গেছে! তাই বলছিলাম গিন্নিটাকে ন্যাংটা করে দিয়েছে। একথা মানুষ কে বলতেও পারি না আবার সয্যও করতে পারি না।

এবার একটু ভিন্ন কথায় আসি, আর সেটা হলো আমার নিজের রক্তের কথায়। সম্ভবত আমার নিজের রক্তেও দোষ আছে। এবার নির্বাচনের পরে ভেবেছি রাজনৈতিক কলাম লেখা থেকে একটু দূরে থাকবো। এখন মনে হয় রাজনৈতিক কলাম লেখার চেয়ে কবিতা লেখার উত্তম সময় ।  শ্রদ্ধেয় অগ্রজ জার্মানির হাবিব বাবুল ভাইকে সেদিন বলেছিলাম, আর রাজনৈতিক কলাম লিখবো না। হাবিব বাবুল ভাইয়ের পরামর্শ ( ফেসবুক থেকে ) সরাসরি তুলে দিলাম

” একদিন আমরা সবাই বিষণ্ণ হয়ে  পড়বো এটা সত্যি , কিন্তু লেখার মধ্যেই সেই বিষণ্ণতা কাটিয়ে উঠতে হবে । কলমকে অবসর দেয়া যাবে না “
শ্রদ্ধেয় হাবিব বাবুল ভাইয়ের পরামর্শটি  শ্রদ্ধার সাথেই বিবেচনায় নিয়েছি , তাই আজকে দুদিন যেতে না যেতেই সামান্য কিছু রাজনৈতিক বিষয়ে বলার প্রয়াশ মাত্র ।

১ ) নির্বাচন কেমন হলো সেই দিকে বেশি যাবো না। সেটা নিয়ে ইতিমধ্যেই নিজের ফেসবুকে অনেকগুলো ছোটো ছোটো ব্লোগে বলার চেষ্টা ছিলো। তবে নির্বাচনের পরে টিভির পর্দায় ( খুবই কম সময়ে) বা পত্রিকায় যা দেখলাম সেটা না বললেই নয়। লক্ষ্যণীয় যে , সকলেই এই সরকারের আগামীতে কি কি করা উচিত, বা কেমনে করা উচিত? ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে বেশ বলে যাচ্ছেন। সাথে ঐক্যফ্রন্টের ৭ জন প্রার্থীকে বিনি পয়সায় উপদেশ দিচ্ছেন! তাদের কথাবার্তায় বা পত্রিকায় লেখালেখি থেকে কেউ ধারণাও করতে পারবেন না, দেশে ঘটে যাওয়া ( আমি ইচ্ছাকৃত হয়ে যাওয়া বলছি না) নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন তৈরি হয়েছে !!!  যারা বলছেন ওনাদের বেশির ভাগ দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রথিতযশা সাংবাদিক বা বড় বড় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ! তাদের মুখে একটিবারের জন্যেও নির্বাচন কেমন হলো ? সেটা নিয়ে কথা নেই ! সেই সব জ্ঞাণে গুণে ভরপুর মানুষদের কথা শুনলে মনে হবে, আহ্হা দেশে কি শান্তির নহর বয়ে যাচ্ছে। আমরাও তো সেটাই চাই।

২ ) দেশের নির্বাচন শেষ হতে না হতেই দুটি ঘটনা ঘটে গেলো। সেটা না বললে নিজের বিবেকের কাছেই বন্দি থাকবো। তাই বলছি,

* ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অনলাইন পোর্টাল
” বাংলা ট্রিবিউন ” ও ইংরেজি দৈনিক ” ঢাকা ট্রিবিউন ” এর খুলনা প্রতিনিধি হেদায়াত হোসেন মোল্লাকে হাতে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে পুলিশ গ্রেফতার করে এবং আমাদের আদালত তাকে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।

* সুবর্ণচর ! কি চমত্কার নাম, নোয়াখালী জেলার একটি উপজেলার নাম। এই চমত্কার নামটি এখন বিভীষিকার প্রতিক। সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচনের পরের রাতেই ” গণধর্ষণের স্বীকার হয়েছেন একজন নারী” !  গণমাধ্যমের প্রকাশ খবরে জানা যায় যে, নরীটির অপরাধ হলো তিনি ভোটকেন্দ্রে এলাকার প্রভাবশালীদের পছন্দের প্রতীকে ভোট দেন নাই। তাকে ভোটকেন্দ্রই হুমকি দেওয়া হয়েছিলো এবং সে রাতেই সেই হুমকির বাস্তবায়ন করা হয়। কি চমত্কার দেখা গেছে ! যেমন প্রতিশ্রুতি ঠিক তেমন তার মান রক্ষা করা। গণধর্ষণের মাধ্যমে সেই নারীকে তার স্পর্ধার চরম শাস্তি দেওয়া হয়েছে এবং সেই নারী এই পৃথিবী ছেড়ে চলেও গেছেন।

লক্ষ্য করুণ,
* এই দেশে মোট ভোটারের অর্ধেক তার নারী আর অর্ধেক তার পুরুষ!
* এই দেশে সেই ৯০ সাল থেকেই নারী ক্ষমতার প্রধান !

* এই দেশে নারীর ক্ষমতায়নের কথা গর্ব করে বলা হয় !
* যে পাকিস্তান কে আমরা ব্যর্থ দেশ বলি এবং ব্যর্থও বটে, এবারের ভোটে সেই পাকিস্তানের তুলনায় কম নারী প্রার্থী ভোটের বাজারে নমিনেশন পেয়েছেন !

যেহেতু নির্বাচন নিয়ে লিখতে চেয়েছিলাম, তবে নির্বাচনের চেয়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিষয় বেশি চলে এসেছে। এখন নির্বাচনের একটি ছোট্ট উদহারন দেই একটি সমস্যা বুঝার জন্য ।

* এবার নির্বাচনে ইভিএম মেশিন নিয়ে নানান কথা হয়েছে, শেষ অব্দি ছয়টি আসনে ইভিএম এ নির্বাচন হয়েছেও বটে। খবরে প্রকাশ, ঢাকার দুইটি আসনে , ঢাকা -৬ এবং ঢাকা -১৩ এই আসনে ইভিএম -এ র ফলাফল হলো, ৪৬% ভোট কালেক্ট হয়েছে।
* সাড়া বাংলাদেশের সার্বিক ভোটের ফলাফল ৮০% এর উপরে !
* প্রশ্ন হলো, সমস্যাটি তাহলে কোথায়? ইভিএম-এ ? না কাগজের ভোটে? সমস্যাতো নিশ্চয়ই একটি আছে । তা না হলে এত পার্থক্য কি সম্ভব । অবশ্য সব সম্ভবের বাংলাদেশ! এটা তো আমরাই বলি। হলেও হতে পারে।
* যদিও সব সম্ভবের বাংলাদেশ আমরা বলি , তবে সব যে সম্ভব হয় না ! তারও একটি নির্বাচনী উদহারণ বা প্রমাণ দেই।
” সিংহ মার্কা নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ( নৌকায় চেষ্টা করেও শেষ অব্দি হয়নি) ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা সর্ব মোট ভোট পেয়েছেন -১৬৮ টি । এবার তো বুঝা গেলো এটা সব সম্ভবের বাংলাদেশ নয়। কেননা ভোটের আগে ওনার কথার মাত্রা গুলো একটু কস্ট করে খুঁজে নিলেই বুঝবেন, কেন এই কথা বললাম।

লেখা শেষে একটি শোক সংবাদ দিয়েই শেষ করবো। একজন বরেণ্য রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাহেবের  প্রস্থানে এদেশের রাজনীতির এবং বর্তমান রাজনীতির একটি বিরাট ক্ষতি হয়ে গেলো। ওনার মত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি।

20181221_172132
বুলবুল তালুকদার
সহকারী সম্পাদক, শুদ্ধস্বর ডটকম

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading