
প্রথমেই একটি ভাব সম্প্রসারণের কথা বলি , ইস্কুল জীবনে পড়া, তবে কার লেখা তা বলতে পারবো না ।
” কেরোসিনে প্রদীপ মাটির প্রদীপকে বলে ডেকে
ভাই বলে ডাকো যদি, দেবো গলা টিপে
হেনো কালে গগনেতে উঠিলো চাঁদা
কেরোসিনের প্রদীপ বলে এসো মোর দাদা ” !
ভাব সম্প্রসারণের কথায় পরে আসি।
বড় জয় বড় ভয় :
কথাটি আমার নয়। আ লীগ নেতা মোঃ নাসিম সাহেব কয়েকদিন পূর্বে প্রায় এরকম একটি কথা বলেছেন। উনি এত বড় বিজয়ে শংকার কথাই বলেছেন। তিনি ৭৩ এর উদহারণ আনেননি, তবে ওনার ভাষ্য রাজনৈতিকভাবে বিবেচনায় এবং বিশ্লষণ করলে ৭৩ এর আভাস কিছুটা পাওয়া যায় বটে। নাসিম সাহেব নির্বাচনের পূর্বেও একটি ভাষ্য রেখেছিলেন ডঃ কামাল সাহেব কে উদ্দেশ্যে করে , ” ফিরে আসুন আর পারছি না” সবাই মনে হয় জানেন কেন তিনি এই কথা বলেছিলেন । যা হোক , বড় ভয়ের বিষয়ে বলার পূর্বে বিজয় উৎসবের খবরটি না বললে বড় বিজয়ের প্রতি অন্যায় হবে।
১৮ সালের নির্বাচন ১৯ সালে ১৯ দিন পর, ১৯ সে জানুয়ারি বিজিত দলের এক বিশাল বিজয় উৎসব রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো। বেশ রমরমা অবস্থাই পত্রিকা বা টিভির খবরে থেকে অনুমান করা যায় । লাল সবুজের নানান বাহারে ঢাকা শহর উৎসবে মেতেছিল । হাতি ঘোড়া থেকে শুরু করে কে নেই ? বিশাল বিজয় বলে কথা । তবে এত বড় বিজয় উৎসবে একটু পানসে মনে হয়েছে বিজিতদের একাংশের অনুপস্থিতিতে । মহাজোট যুগলবন্দি হয়ে নির্বাচন করেছে , অথচ বিজয় উৎসবে আ লীগ ছাড়া অন্যদের অনুপস্থিতি ঠিক বুঝতে পারা মুশকিল বটে !
আবার ভিন্নভাবে বলা যায় মোটেও মুশকিল নয়। কেননা আ লীগ কে এখন নিজেদের স্বার্থেই
” মহাজোট “কে জট বিহিন করতে হবে। প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে বটে, আর সেই শুরুর প্রথম ধাপ সম্ভবত মহাজোটের কাউকেই বিজয় উৎসবে উৎসাহীত না করা। যদিও বিজয় উৎসবটি ছিলো ভোটের বিশাল বিজয়ের । সাধারণ ভাবেই ধরে নেওয়া যায়, মহাজোটের সকলের বিজয় উৎসব কিন্তু সেটা আর দেখা গেলো না। এটা হয়ে গেলো বিজীতদের একাংশের বিজয় সমাবেশ!
উৎসব মুখর বিজয় সমাবেশ! হতেই পারে , এতে কোনো আপত্তি নেই নিশ্চয়ই কারো? ইতিহাসের এত বড় বিজয়ের সমাবেশ, তাতে জনগণের একটু চলাচলের অসুবিধে এমন কিছু নয়, এটাতো নতুন কিছুও না। তাছাড়া জনগণ অনেক কিছুতেই অনাবশ্যক অভস্ত্য নিশ্চয়ই । আমাদের দেশে এটা অতীত থেকেই চলে আসছে এবং যা রাজনৈতিক অবস্থা, তাতে মনে হয় ভবিষ্যতেও তা চলবে ! চলুক !
সমস্যাটি হলো, বিজয় সমাবেশে উচ্চ পর্যায়ের নেতাগণ যে হারে কথা বলে গেলেন! তা কেমন জানি বিভ্রান্তির সমাবেশ হয় জনমানুষের মাঝে। অবশ্য সমাবেশে দেওয়া বক্তব্য বাদ দিয়েও বলা যায়, প্রতিদিনই নানান বিভ্রান্তি চলছে। কেননা ইতিমধ্যেই ভোট নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে। ক্ষমতাসীনরা মানুক আর না মানুক প্রশ্ন আছে এবং বড় রকমের প্রশ্নই আছে। টিআইবির কথাই যদি বলি, সরকারের লোকজন মৌখিক প্রতিবাদ করছেন বটে, তবে এর বিপরীতে কোনো নির্দিষ্ট প্রতিবাদ এখন অব্দি করার সাহস দেখাননি এবং আগামীতেও দেখাবেন না, তা অগ্রিম বলা যায় । সরকারের ভাষ্যনুযায়ী সুষ্ঠু ভোট ! আর সেখানে টিআইবি বলছে ৮৮ ভাগ চুরি ! আবার সরকার টিআইবিকে হজম করছে না ! যে দেশে প্রধান বিচারপতিকেও হজম করা হয়! কেবলি নতুন করে ক্ষমতায় আসা হলো , দেখা যাক সামনে কি হয়।
একথা মনে হয় বলাই যায়,টিআইবির রিপোর্টের মেরুদণ্ড শক্তই মনে হচ্ছে।
বিজয় সমাবেশে নানান প্রতিশ্রুতিও পাওয়া গেলো, ঠিক নির্বাচনী ইসতেহারের মত, ভালো। কোনো অন্যায় অবিচার সহ্য করা হবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি । এই কথাগুলো যখন এত বড় সমাবেশে উচ্চারিত হয় ! বিজয়ের পিছনে যখন এত বড় প্রশ্ন থাকে ! তখন হতবাক হওয়া ছাড়া আর কি বা করার থাকে ? তবে মজার বিষয় হলো , যখন বামদল গুলোও বলছে নির্বাচনে পুকুর চুরি হয়েছে! তখন বুঝতে হবে এখানে সত্যতা লুকায়িত আছে, কেননা এই দলগুলো ক্ষমতায় যেতে পারবে না জানে, তাহলে তারা কেন বলছে ? সেটা জনগণ কিন্তু ঠিকই ভাববে।
লেখার শেষে অগ্রিম একটি কথা বলে রাখি, আগামী পাঁচ বছর আওয়ামী লীগ বরাবরের মত বিএনপিকে নিয়েই প্যাঁচাল করে যাবেন। কেননা এরকম নির্বাচনের পরে ভিন্ন কিছু আশা করাই বাতুলতা মাত্র ।
এবার ভাব সম্প্রসারণের কথায় আসি। বিজয় সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর ধন্যবাদ যারা পাবার তারা পাক বা নিক , বিস্তারিত না বললেও মনে হয় বিষয়টি সবার কাছে পরিষ্কার কারা পেতে পারেন । তবে এরা সবাই কিন্তু সেই কেরোসিনের প্রদীপের মত , সুতরাং……
বুলবুল তালুকদার
সহকারী সম্পাদক,শুদ্ধস্বর ডটকম