
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বলেন, আপনি তো ওমরাহ করেছেন, নামাজ পড়েন। বলেন তো, অলি আহমদের মত লোক ২২ হাজার ভোট পাবে?
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে’ বাংলাদেশ লেবার পার্টি আয়োজিত ‘সংহতি সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীকে ‘ভুল শুধরে’ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে অলি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর যে ভুল করেছেন, তা শুধরাতে একটি ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’ দিন। ভোট ডাকাতির কথা প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করলেই পারতেন।
‘প্রধানমন্ত্রীকে বলব, যেভাবেই হোক, ক্ষমতায় যেহেতু আছেন, দোষ স্বীকার করে নিলেই হয়। সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে দেশকে মুক্ত করুন, নইলে দীর্ঘমেয়াদে অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে দেশ’-যোগ করেন অলি।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে অলি বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস হলো, তারা কখনো জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। আওয়ামী লীগ দাবি করে, তারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি, আমি বলব, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হত্যাকারী দল।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে টাকার খেলা হয়েছে অভিযোগ তুলে অলি আহমদ বলেন, নির্বাচনে প্রতি আসনে ১০-১২ কোটি টাকা বিতরণ করেছে আওয়ামী লীগ। তাদের লোকজন হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়েছে। এটার কোনো বিচার হবে না। অথচ খালেদা জিয়াকে মামলার নামে দণ্ডিত করা হয়েছে। এতে কেবল খালেদা জিয়াকে দণ্ড দেয়া হয়নি, পুরো জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দণ্ড দেয়া হয়েছে।
‘বাংলাদেশ এখন নিলামে উঠেছে’ মন্তব্য করে ২০ দলীয় জোটের এ নেতা বলেন, এ দেশ বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মুখে জাতীয় ঐক্যের কথা বলেন, তাহলে সব দলের সঙ্গে বসে সমাধান করছেন না কেন?
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভোটের আগে বলেছিলেন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, অংশগ্রহণমূলক হবে, আমরা বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু এ ধরনের ডাকাতি হবে এটা জানলে আমরা নির্বাচনে যেতাম না।
খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন ২০ দলীয় জোটের এ শীর্ষ নেতা বলেন, বিএনপিকে বলব, ঘরে বসে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারবেন না। রাজপথে নামুন, আমরা ছোট দল, শক্তি জোগাতে পারব না, তবে আন্দোলন-সংগ্রামে আপনাদের পাশে থাকব।
অলি আহমদ বলেন, সরকারকে আহ্বান করব, একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা প্রত্যেক দিন বিএনপির নামে গালিগালাজ না করলে মনে হয় তাদের রাতে ঘুম হয় না। এটা তো রাজনৈতিক কথাবার্তা না।
বিএনপি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের এত মাথাব্যথা কেন এমন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, প্রতিদিন বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলেন, বিএনপি ভেঙে যাচ্ছে, বিএনপি নিয়ে এত মাথাব্যথা কেন? বিএনপির যারা নির্বাচিত হয়েছে, আশা করি, তারা সংসদে গিয়ে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করবেন না।
অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ আওয়ামী লীগের কবর রচনা করছে মন্তব্য করে কর্নেল অলি বলেন, ৩০ তারিখের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করেছে আর আসল ভোট ডাকাতি করিয়েছে প্রশাসনকে দিয়ে।
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম (বীরপ্রতিক), এনডিপি চেয়ারম্যান আবু তাহের ও অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
সভায় ২০ দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, জোটকে কার্যকর রাখতে নিজেদের সমন্বয় প্রয়োজন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে গিয়েছে বিএনপি, কিন্তু ভোট মহাডাকাতির পর কেন আন্দোলনে যাচ্ছেন না? আসলে আমাদের কোথাও গলদ আছে, আমরা বোবা হয়ে গেছি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে সমালোচনা করে লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সময় এসেছে। গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা কোনো কিছু বলিনি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের কোনো প্রয়োজন ছিল না। এটা আমাদের ডুবিয়েছে। ২০ দল পরীক্ষিত, জোটকে বিতর্কিত করতে সরকার দালালদের দিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। সূত্র যুগান্তর ।