
অরুন্ধতী রায়কে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নাই। তবে একজন বিবেকবান বুদ্ধিজীবীর কণ্ঠস্বর কেমন হওয়া উচিত তিনি তারই আদর্শ নমুনা হয়ে আছেন। গত ০৩ জানুয়ারি ২০১৯ আগে বোস্টন রিভিউ অরুন্ধতী রায়ের এই সাক্ষাৎকাটি নেয়। এই আলাপে, সাহিত্য, নাগরিক সমস্যা, উপনিবেশ, সাম্রাজ্য নিয়ে নতুন চিন্তার ইশারা, স্বৈরাচার থেকে শুরু করে তার গল্পের কাহিনী, সেন্সরশিপ, এবং ঔপনিবেশিক পরবর্তীকাল (Post-colonialism) এই টার্ম নিয়ে তার ধরাণাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বরেছেন। সাম্প্রতিক কালে এতো বিস্তারিত আলাপ তিনি আর খুব একটা করেন নাই।
তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস’ এ অরুন্ধতী রায় সরাসরি একটি প্রশ্ন করেন, “ভালো মানের সাহিত্যের জন্য আবেগের গ্রহণযোগ্যতা কতখানি?” বাস্তব জগতের ভয়াবহতা, অবিচার, ক্ষমতা এবং কল্পনার জগত -এ দু’য়ের মধ্যকার সম্পর্কই তার প্রথম এবং বুকার জয়ী উপন্যাস “দি গড অব স্মল থিংস”-র মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল।
তার প্রথম এবং দ্বিতীয় উপন্যাস প্রকাশের মাঝে ছিল বিশ বছরের বিরতি। এই সময়ে এই ভারতীয় লেখিকা উচ্চস্বরে এবং প্রকাশ্যে তার রাজনৈতিক ভিন্নমত পোষণ করে এসেছেন। এর ফলে অনেকেই আতঙ্কিত বোধ করেন বিশেষ করে যারা তার কাহিনীকে বেশি পছন্দ করতেন এবং ৯/১১ এর কাছাকাছি সময়ে বৈশ্বিক রাজনীতির পালাবদলের কারণে বেশ স্বস্তিতে ছিল অনেকেই।
প্রধান ভারতীয় সংবাদ পত্রিকাগুলোতে রায়ের অসংখ্য সমালোচনামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। পারমাণবিক অস্ত্রসমূহ, বড় বড় বাধ, কর্পোরেট বিশ্বায়ন, ভারতের বর্ণপ্রথা, হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের উত্থান, সাম্রাজ্যবাদের বহু দিক, এবং মার্কিনী অস্ত্রশস্ত্র —এইসব বিষয়গুলো তার লেখায় উঠে এসেছে। এ লেখাগুলো কখনো ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে আবার কখনো রোষের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের রাষ্ট্র ব্যবস্থা, দেশের আদালতের দুর্নীতি, কাশ্মিরে ভারতীয় রাষ্ট্রের নৃশংস সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে কড়া সমালোচনা করায় অরুন্ধতী রায়কে গণমাধ্যমের রোষের শিকার হতে হয়েছে। রাজদ্রোহের অভিযোগেও অভিযুক্ত হতে হয়েছে তাকে। কখনো আবার ‘আদালত অবমাননা’র কারণে তাকে কারাগারে পর্যন্ত যেতে হয়েছে। এত কিছুর পরেও এখনও তিনি যথেষ্ঠ স্পষ্টভাবে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এই সাক্ষাৎকারে, তার সাহিত্যে নান্দনিকতা এবং রাজনীতির মধ্যকার সম্পর্ক, ক্ষমতা এবং এর প্রভাব নিয়ে তার চিন্তাভাবনা এবং উপনিবেশ পরবর্তী যুগের লেখার মান এবং জীবনধারণ এসব বিষয় মূলত উঠে এসেছে। বোস্টন রিভিউ’র এসোসিয়েট এডিটর আভনি সেজপাল’র নেয়া এই বিশেষ সাক্ষাৎকারটি জবানের জন্য অনুবাদ করেছেন, উম্মে সালমা। সূত্র : জবান