
ডাঃ অর্জুন দে
আপনার শিশুর হাসিই আপনার কাছে সবচেয়ে পবিত্র, স্বর্গীয় আর সকল আনন্দের উৎস। হাসিটা যেন সত্যি সত্যি সুন্দর হয়ে গড়ে উঠে সেজন্য আপনারও অবশ্য করণীয় আছে কিছু।
এক বছরের আগে:
শিশুর বয়স যখন ছয় মাস তখন থেকে দাঁত উঠতে শুরু করে। তবে সর্বনিম্ন চার মাস থেকে এক বছরেরও পরে প্রথম দাঁত দেখা দিতে পারে, এতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
সুস্থ দাঁতের জন্য সুস্থ মাড়ি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই দাঁত উঠার আগে থেকেই মাড়ির যত্ন নিতে শুরু করুন।
প্রতি বার খাওয়ানোর পর পরিষ্কার ভেজা কাপড় দিয়ে মাড়ি পরিষ্কার করে দিন। মাড়িতে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধার সুযোগ পাবেনা, নরম দাঁত গুলো ক্ষয়ে যাওয়া থেকে বাঁচবে।
দাঁত উঠতে শুরু করার পর থেকেই ব্রাশ করা শুরু করতে হবে। এক বছরের নীচে শিশুর জন্য একটি মটর দানার পরিমাণ পেস্টই যথেষ্ট। নরম টুথব্রাশ ব্যবহার করুন।
প্রথম জন্মদিনের আগে অথবা প্রথম দাঁত উঠার পরই এক বার দাঁতের ডাক্তার দেখিয়ে নিন। রুটিন চেকআপ এর মত।
শিশু যখন একটু বড় ( চার থেকে আট ):
বয়স আর শারীরিক বৃদ্ধির সাথে সাথে দাঁতের যত্নেও অধিক মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। প্রায় সব শিশুই তিন বছরের মধ্যে ২০ টি দুগ্ধ দাঁতের মালিক হয়ে যায়। এ
সময় দাঁতের মাঝে খানিকটা ফাঁকা থাকতে পারে, আমরা যাকে ফোকলা দাঁত বলি। এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই, দেখতেও ভালোই লাগে। ছয় বছর বয়সে এগুলো পড়ে গিয়ে স্থায়ী দাঁত উঠতে শুরু করে। মোটামুটি ১৩ বছর বয়সে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
এ সময় দাঁতের যত্নে ফ্লুরাইড টুথপেস্ট ব্যবহার করুন। দৈনিক দুইবার অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করবে, সকালে নাস্তার পর আর রাতে ডিনার শেষে, প্রতিবার অন্ততঃ দুই মিনিট।
নিয়মিত ফ্লস করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। পিছনের দিকের দাঁত গুলো যেন গুরুত্ব পায়, সে দিকে মনোযোগ দিন।
প্রতি ছয় মাস পর পর দাঁতের ডাক্তার দেখান, কোন সমস্যা না থাকলেও।
শিশু যখন আরেকটু বড়! ( নয় থেকে বার ):
বড় হতে হতে অনেক শিশুই দাঁতের যত্নে একটু উদাসীন হয়ে পড়ে। সত্যি বলতে কি, ব্রাশ করা তেমন কোন আনন্দদায়ক কাজ নয়, তাই ওদের দোষ দেয়াও যায় না। অথচ এ সময় দাঁতের যত্ন টা একটু বেশি প্রয়োজন।
এসময় শিশু তার নিজের সৌন্দর্যের ব্যাপারে একটু একটু করে সচেতন হতে শুরু করে। তাকে বোঝাতে হবে সৌন্দর্য, গ্ল্যামার আর স্মার্টনেস অনেকাংশেই নির্ভর করবে দাঁতের সৌন্দর্যের উপর।
মনে রাখবেন, দাঁত ব্রাশ করতে গেলে আমাদের মনে হয়, ‘সময় যেন কাটে না’। দুই মিনিট কিন্তু দীর্ঘ সময়। ত্রিশ সেকেন্ড পার করতেই আমরা বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়ি, শিশুরা তো হবেই। অথচ বিষয় টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
‘প্রতিকার এর চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম’ কথাটি দাঁতের অসুখের ক্ষেত্রে একটু বেশিই সত্য।
আসুন একটু সচেতন হই, শিশুর পবিত্র হাসি অমলিন রাখি।
ডাঃ অর্জুন দে ঃ চিকিৎসক এবং লেখক।