
আজ সকালে ১২ হাজার কিলোমিটার দূরে বসে, আমার প্রিয় বন্ধুর সাথে টেলিফোনে কথা হলো। এই বন্ধুটির হঠাত্ করে ফোন পেলে আমি সব সময় আনন্দিত হই, আজকে আর আনন্দিত হতে পারলাম না। কেন পারলাম না, সেটাই এখানে বলবো।
বিষয়টি হলো, বন্ধুর বড় ভাইকে গতকাল রাতে পুলিশ এসে তুলে নিয়ে গেছে! সে বিএনপির একজন একনিষ্ঠ কর্মি। বন্ধুর বড় ভাইটি পরিবারের সবার বড় এবং ৬০ এর ঘরের বয়স। একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্ব এবং কর্মঠ ব্যক্তি । বন্ধুর বাবা অনেক আগেই পরলোকগত। বন্ধুর মা বয়স্ক একজন মানুষ, স্বাভাবিকভাবেই নানান রোগে আক্রান্ত। বন্ধুর বড় ভাই, মায়ের চোখের মণি এবং সে সর্বক্ষণ মায়ের প্বাশে থেকেই মায়ের যতটুকু সেবা যত্ন এই বয়সে প্রয়োজন তা দেবার চেষ্টা করে। বন্ধুর ভাইটির নামে ইতিপূর্বেই দুইটি মামলা দেওয়া আছে, যা কিনা শতভাগ রাজনৈতিক কারণে। আমি আবার বলছি এবং জোর গলায় বলছি, শতভাগ রাজনৈতিক কারণে মামলা। আমি এখানে জেনেই কথা বলছি।
আসুন এখন দেখার চেষ্টা করি বর্তমানে নির্বাচনের বাজারে একজন কে ধরে নিয়ে যাওয়ার শানেনযুল:
* স্বাভাবিক কারণেই বন্ধুর পরিবারের সকলেই আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে, কেমন করে বন্ধুর বড় ভাইকে থানা পুলিশ থেকে ছাড়িয়ে আনা যায় ।
* আমার বন্ধুর পরিবারের কিছু মানুষ আছে যারা উচ্চ পর্যায়ে চাকরিরত এবং তারা নিজ নিজ উদ্বেগে চেষ্টা চালিয়েও বন্ধুর ভাইটিকে থানা পুলিশ থেকে বেড় করে আনতে পারেনি এবং সম্ভাবনাও একেবারেই কম!
* থানা পুলিশ থেকে স্পষ্ট জবাব, ভাই বা স্যার আমাদের কিছুই করার নাই ! আগামী একমাস ছাড়া যাবে না।
* কেউ আশ্চর্য হবেন না, আমি এখানে আমার বন্ধুর নাম , তার বড় ভাইয়ের নাম এবং থানার নাম , পুলিশ কর্তার নাম , সবই উহ্য রাখলাম কেন ? কেননা এই নাম প্রকাশ করা হলে , দেখা যাবে বন্ধুর বড় ভাইটিই না আবার হারিয়েই যায় ।
* লক্ষ্যণীয় যে , নির্বাচনের আগে ছাড়ানোর কোনো পথ নাই ( থানা পুলিশের স্পষ্ট বক্তব্য)। উচ্চ পর্যায়ের কানেকশনও কাজে লাগছে না! তাই এই পরিস্থিতিতে বন্ধুর বড় ভাইটি অন্তত থানা হাজতে বা জেলে ভালো থাকতে পারে , সে জন্য টাকা পয়সাই একমাত্র কার্যকর তাবিজ। যদিও তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ছাড়িয়ে আনার, সাথে অন্তত কিছুটা ভালো থাকতে পারে, সেই তাবিজও গ্রহণ করেছে। কি আর করার!
* বন্ধুর অসুস্থ মা এর কথা এখানে আর না বলাই ভালো। আমার মনে হয় যারাই এই রকম পরিস্থিতিতে পরেছেন বা আছেন , তাদের প্রত্যেকের মা এর মনে হয় একই অবস্থা ।
* যেখানে রাজনীতি মানুষকে শান্তি দেবার কথা, সেখানে রাজনীতি আমাদের দেশে শান্তি তো দেয়ই না বরং আমাদের সমাজের পিতা মাতা বা ভাই বোন, আত্বিয় সজনদের কে ভোগান্তিতে ফেলে!
* তারপরেও আমরা সাধারণত মানুষেরা ভাবি বা বলি বা বুঝি, রাজনীতিই আমাদের জীবনের সকল শান্তির পথ । কেননা রাজনীতিই সত্যি আমাদের জন্য মঙ্গল আনতে পারে । প্রশ্ন করবো না, সেটা কোন রাজনীতি?
এবার বলি ঘটনাটির শানেনযুলের আরেক অংশ:
সেটা নিয়ে বলতে গেলেই নির্বাচন কমিশন নিয়ে মহা কাব্য লিখতে হবে। আইনের দিক দিয়ে আমাদের নির্বাচন কমিশন পৃথিবীর একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন, এতে কোনো সন্দেহ নাই। তবে দুঃখজনক হলো, এই নির্বাচন কমিশনের আইন কে পদ্মা নদীতে ডুবিয়ে দিলেও হয়তো কোনো কাজে আসতো! কেননা দুঃখ নিয়েই বলতে হয়, আমাদের দেশের সকল ক্ষেত্রেই আইনের জুরি নেই। চারিদিকেই আইন আর আইন, কাজের ক্ষেত্রে কাঁচকলা। সুতরাং শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন কে দোষারোপ করেই বা কি লাভ। তবে এটা বলতেই হবে, এত্তবড় চেয়ারে বসে ( যেটা কিনা স্বাধীন কমিশন!) বড় বড় গলার আওয়াজ না তুলে, মাথা নত করেই যেহেতু আছেন(!) চুপচাপ জ্বি হুজুর, জ্বি হুজুর করেই সময় পার করুণ। তাতেও অন্তত আপনার কেরামতি বাড়বে। এত্ত বড় চেয়ারে বসে অযথা সিঙ্গা না ফুঁকানোই ভালো।
অন্যদিকে টিভির পর্দায় এসে বড় বড় নিরপেক্ষ সু-শীল সাংবাদিক, শিক্ষক ইনাদের ভাষ্য শুনলে গা ঠান্ডা হয়ে আসার উপায় হয়, শরম লজ্জার মাথা খেয়ে , মিথ্যার ডিব্বা খুলে, জাতি কে পরামর্শ দিতে দেখে। ওনারা আবার “ধর-পাকরের” বিষয়ে জাতিকে যেভাবে নসিহৎ করেন (!) বলতেই হয়, পারেন বটে ! জানিনা অন্য কোথায় তাদের কি হয়, তবে টিভির পর্দায় এলে ওনারা জাতিকে জ্ঞাণ বিতরনে মনে হয় কেবলমাত্র মিথ্যার ঝুড়িটাই সাথে নিয়ে আসেন। চামচামীরও একটা সীমা থাকা উচিত। তারপরেও ওনারা আবার জন মানুষের কাছে সম্মান আশা করেন (!)। ওনাদের কথাবার্তার শত উদহারণ দিতে পারবো, যা শুনলে অবাক আর বিস্মিত হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
লেখার শেষে শুধু বলবো, যুদ্ধ জয়ী স্বাধীন দেশে এতদিন পর্যন্ত রাজনীতিবীদরা আমাদের যেভাবে খুশি সেভাবেই রাজনীতি গিলিয়েছেন! আগামীতে আর সেটা পারবেন বলে মনে হয় না। আমি ইতিপূর্বের সকল ক্ষমতাসীনদের কথাই বলছি। কেননা দেশের জনগণ সব বুঝে আর জানে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম আপনাদের নোংরা রাজনীতিকে পুরোপুরিই ঘৃণা করে। বর্তমানে এই প্রজন্মের সংখ্যাই বেশি বলে অনুধাবীত হয়। সকল রাজনীতিবীদদেরই স্বরণে রাখা ভালো, শিশু কিশোরদের ভ্যাট/ কোটা/ নিরাপদ সড়ক আন্দোলন আপনাদের কলিজার ভিতরে বিট্ বাড়িয়ে দিয়েছিলো।
এই শিশু কিশোররা রাষ্ট্রের মেরামতে হাত দিয়েছিলো। আপনারা রাজনীতিবিদরা সঠিক না হলে , এই শিশু কিশোররাই আপনাদের এক সময় বিস্মিত করে , রাজনীতির মূল গণতন্ত্র কায়েমে রাস্ট্রের মেরামতে কাজ করবে।
বুলবুল তালুকদার
সহকারী সম্পাদক, শুদ্ধস্বর ডটকম