
প্রথমেই বলি, আজকে শুধু তিনটি বিষয়ে বলবো। বিষয় তিনটি , ইশতেহার, লেভেল প্লেইং ফিল্ড এবং জামায়াত ।
ক) ইশতেহার :
ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার জনগণ হাতে পেয়ে গেছে। ভালো ভালো প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। কার ইশতেহারে কি প্রতিশ্রুতি আছে, মিল বা অমিল আছে, জনগণ মনে হয় ইতিমধ্যে ভালোভাবেই গণনা করেছে। মজার বিষয় মনে হয়, জনগণ ইশতেহার পাওয়ার জন্য যতটা আগ্রহী থাকে, ঠিক ততটাই অবিশ্বাস করে। কেননা আমাদের সম্মানিত রাজনীতিবিদদের জনগণ খুব বেশি বিশ্বাস করে বলে মনে হয় না। আপনি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন, প্রশ্ন করুন, তাদের দেওয়া ইশতেহার তাড়া কতটা রক্ষা করবেন ? কোনো জরিপ ব্যতিরেকেও আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আপনি নেগেটিভ উত্তর পাবেন। এর পিছনে দোষের কারণ কিন্তু জনগণ মোটেও না। এর মূল কারণ আমাদের সম্মানিত রাজনীতিবিদগণ নিজেরাই। কেন ? তা ব্যাখ্যা না করলেও, ধারণা করি সকলের কাছেই বিষয়টি সচ্ছ জলের মত পরিষ্কার ।কেননা ভোটে জিতার পর আমাদের রাজনীতিবিদরা জনগণকে নয়-ছয় বুঝাতে থাকেন। তাহলে প্রশ্ন হতে পারে, জনগণ কেন ইশতেহার নিয়ে এতটা বিচলিত থাকে ? উত্তরটি খুবই সহজ, যেহেতু রাজনীতিবিদরা আমাদের পরিচালনা করেন, তাই জনগণও রাজনীতিবিদদের ইশতেহারের মাধ্যমে একটা বেড়াজালে আটকিয়ে রাখতে চায় । কেননা, আমাদের রাজনীতিবিদরা যেমন কুকর্মে পারদর্শী, ঠিক আমরা জনগণও তাদের দোষটাই খুঁজে পেতে পারদর্শী, নিজেদের দোষটা উহ্য রাখতেও পারদর্শী বটে । উদহারণ অনেক দেওয়া যাবে, দু- একটা দেই।
* মনে পরে ঢাকা উত্তরের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক সাহেব বেশ কিছু ভালো কাজ, ওনার অল্প সময়ের মধ্যে করে গিয়েছেন। যেমন : সাত রাস্তার জায়গাটি অনেক লড়াই করে জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে পরিষ্কার করে দিয়ে গেছেন। বর্তমানে কি অবস্থায় আছে? আপনারাই বিবেচনা করুন ।
* ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন সাহেব ঢাকার কিছু রাস্তায় ময়লা ফেলার বিন করে দিয়েছিলেন। সেই ডাস্টবিন গুলো কোথায় হারিয়ে গেলো? একবার আমরা জনগণ বিবেচনা করে দেখতে পারি।
* ওভারব্রিজ থাকা সত্বেও আমরা ব্যবহার করি না। প্রয়োজনে ঘাড়/পিঠ বাঁকা করে হলেও লোহার শিঁকের ভিতর দিয়ে পার হবো। আমরা আবার আমাদের শিশু বাচ্চাদেরকেউ একিভাবে রাস্তা পারাপারের শিক্ষা দেই !!!
এরকম হাজার উদহারণ দেওয়া যাবে। এখন মনে হয় সময় হয়েছে, নিজেদেরকেউ একটু আয়নার সামনে দাঁড় করাবার। সত্যি বলতে কি , ইশতেহারে আমাদের দেশের জনমানুষের বা প্রান্তিক মানুষের কাছ থেকে কিছুই আসে না। এটা এক ধরণের আই ওয়াস ছাড়া তেমন কিছুই না। তাই বলছিলাম ইশতেহারের দিকে চেয়ে না থেকে দেশের প্রতি নিজের পক্ষ থেকে যতটুকু করা সম্ভব সেটা করে যাওয়ার চেষ্টা করে যাওয়াই উত্তম। এতে করে দেশের বেশ লাভ হবে এবং দেশের লাভ হলে নিজেরও বেশি লাভ।
খ ) লেভেল প্লেইং ফিল্ড :
প্রধান নির্বাচন কমিশন হুদা সাহেব বলেছেন,
” বর্তমান নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড সমান আছে” ! আজকেও আবার একি রকম কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন ! স্বায়ত্তশাসিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান বলেছেন, অবিশ্বাস করিই বা কি করে ?
তাহলে একটি কথা নিশ্চিত করে বলতেই হয়, “জনাব হুদা সাহেব বিটিভি বা সরকারি রেডিও দেখেনও না এবং শুনেনও না, এমনকি তিনি ঢাকার কোনো রাজপথে চলাচলও করেন না ! কেননা ঢাকার রাজপথ গুলো কেবলমাত্র একটি দলের পোস্টারে ভরে আছে ! উনি যদি বিটিভি দেখতেন বা রাজপথে চলতেন , তাহলে নিশ্চয়ই নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী কিছু একটা ব্যবস্থা অবশ্যই গ্রহণ করতেন। দয়াকরে কেউ আবার বলবেন না যেন, কেউ তো রির্পোট করেনি! জ্বি না জনাব , কমিশনের আইন অনুযায়ী সেটা ওনাদের নিজ দায়িত্বেই প্রচার-প্রচারণার ব্যবধান ঘোচানোর কথা। লেভেল প্লেইং ফ্লিড নিয়ে লিখতে গেলে শত কথা বলা প্রয়োজন, সেই দিকে না যাওয়াই মনে হয় উত্তম ।
* সত্যি বলতে তো, নির্বাচনে আসল জায়গাতেই লেভেল প্লেইং ফিল্ড নাই ! আর তা হলো , টাকার খেলায় ! লক্ষ্য করুন, সম্ভবত এবার নির্বাচনে প্রত্যেক প্রার্থী ২৫ লক্ষ করে টাকা ব্যয় করতে পারবেন। বাস্তবে হচ্ছেটা কি ? কোনো কোনো প্রার্থী পাঁচ লক্ষ টাকাও খরচ করতে পারেন না যেমন বামদেলে প্রার্থীরা , কিন্তু অপর দিকে কোনো কোনো প্রার্থীতো শতকোটি টাকা !! বলতেই হয় , এই জায়গায় নির্বাচন কমিশন নাকে সর্ষে তেল দিয়েছেন।
গ ) জামায়াতে ইসলাম
* পৃথিবীতে সপ্তম আশ্চর্য আছে আর বাংলাদেশে আছে একটি আশ্চর্য! তা হলো জামায়াতে ইসলামী নামের রাজনৈতিক দল। পৃথিবীতে হাতে গুনা কয়েকজন ক্যারিশমাটিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলো, তাদের মধ্যে “আভলফ হিটলার” ছিলো সত্যিকারের একজন ক্যারিশমাটিক লিডার। যার এক হাত উঁচু করলে মিলিয়ন মানুষ একসাথে হাত উঁচু করতো, একসাথে হাত নিচু করতো। এরকম দ্বিতীয় উদহারণ ছিলো আমাদের বঙ্গবন্ধু । যাকে কোটি মানুষ হৃদয়ে বহন করতো।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে আজ অব্দি জার্মানিতে কেউ আভলফ হিটলারের নাম নিতে পারে না। এমনকি হিটলারের মতন হাত উঁচু করে কাউকে ঈশারা করলেও আইনত শাস্তির বিধান আছে। কারণটি সবারই জানা আছে, কেন ? অথচ আমাদের দেশের জামায়াতে ইসলামির ভাগ্য কি সুপ্রসন্ন! এই দলটি এখনও দেশে রাজনীতি করে , এমনকি মন্ত্রী-মিনিস্টার হয়। কার দোষে, বা কি কারণে এমনটি হলো! সেই ব্যাখ্যায় যাবো না। কেননা এই প্যাঁচালের কোনো শেষ অন্তত আমাদের দেশে নাই! কেননা আমরা সবাই ভীষণ স্বার্থপর, আর আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো তো ক্ষমতার জন্য,, কি জামায়াত! কি স্বৈরাচার! সব কিছুই হালাল। ওনারা নিজেদের ক্ষমতার স্বার্থে প্রয়োজনে জামায়াতকে পাশে নিয়ে হাটতে পারে আবার কেউ গলায় জড়িয়ে কাঁদতে পারে। আমরা সাধারণত জনগণ প্রশ্ন তুললেই সব ভেজাল ! আমাদের কে বুঝিয়ে দেওয়া হয় , নানান যুক্তি আর নানান কথার মারপ্যাঁচ! আমরাও স্তব্ধ হয়ে শুনি, এমনকি জামায়াতকেউ হালাল হিসেবে গ্রহণ করি!
জামায়াত ধীরে ধীরে এই দেশে এখন বড় রাজনৈতিক দলে পরিণত হচ্ছে। আশ্চর্য হবার আর কিছুই নাই, আমাদের দেশে যে রাজনৈতিক চর্চা হয় বা হচ্ছে, তাতে করে আগামীতে এই বিষফোঁড়াটি আরো বড় আঁকাড় ধারণ করবেই বলে মনে হচ্ছে। এই দলটি আজকে এত বড় আঁকাড় ধারণ করেছে , এর পিছনে যতটুকু আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো দায়ী ঠিক ততটুকু আমাদের আদালতও দায়ী। জানি , আদালত নিয়ে কথা বলা বিপদের বিষয় । তবে আদালতের রায় নিয়ে নিশ্চয়ই কথা বলা যায় । আদালতই আমাদের শেষ ভরসা। তবে সত্যি বলতে আদালতের উপর ভরসা রাখা, এখনও মনে হয় জনগণ শতভাগ ভরসা পান না। সেটা ভিন্ন আলোচনা ।
লক্ষ্যণীয় যে, আমাদের আদালতই প্রয়াত গোলাম আজম কে তার নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়েছিলো! নিশ্চয়ই সবার মনে আছে, এই কুক্ষ্যাত গোলাম আজম দেশ স্বাধীনতার পরে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে তার অসুস্থ মা কে দেখতে বাংলায় এসেছিলো। তার মা কে দেখতে আসার পিছনে একটি কুটিল চাল ছিলো বলেই ধারণা করা যায় । কেননা সেই আসাই তার এই দেশে আবার প্রবেশদ্বার খুলে দেয়। সুযোগ বুঝে নাগরিকত্বের জন্য আদালতে আবেদন এবং আদালত কর্তৃক আদেশের বিনিময়েই এই দেশে থেকে যাওয়া। যদি মেনেও নেই আদালত আইন কানুক মেনে নিয়ম মোতাবেকই গোলামের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়েছিলো। তারপরেও কি আদালতের এই বিচারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলা যাবে কি? তিরিশ লক্ষ মানুষের রক্ত আর দু লক্ষ মা বোনের ইজ্জত কি আদালতের জানা ছিলো না? আদালত তো কত কিছুই নিজ উদ্বেগে বিচার করেন । কত প্রকার সুমোটম জারি করেন। কত সম্মানিত মানুষ কে আদালতের প্রাঙ্গনে দাঁড় করিয়ে রাখেন। প্রশ্ন করা যাবে কি, কেন সেই কুক্ষ্যাত গোলামের বিরুদ্ধে সেই সময় আদালত এত রক্ত কেন বিবেচনায় নেন নি ? যদি সেই সময় আদালত এক ধাপ এগিয়ে আসতেন, তাহলে কি এই জামায়াত নামক বিষফোঁড়াটি এই দেশে এতটা বিস্তার লাভ করতে পারতো ?
এখন আসি বর্তমানের ভোট আর জামায়াতের বিষয়ে । বিএনপি, এই দলটি কোনো ভাবেই জামায়ত কে হাত ছাড়া করবে না! আর করবেই বা কি করে ? তাদের বড় ভয় , হাতছাড়া হয়ে গেলে আওয়ামী লীগ আবার হেফাজতের মত জামায়াত কেউ রেলের জমি বা কোনো না কোনো সার্টিফিকেটের মাধ্যমে নিজেদের দলে ভিরিয়ে নেবে। কেননা আওয়ামী লীগও ক্ষমতাকেই প্রধান করে দেখে! সেই ক্ষমতার প্রশ্নে আওয়ামী লীগও নিজেদের আদর্শের বিসর্জন দিতে একটুও পিছ পা হয় না!
যাকগে এই প্যাঁচাল করা মানেই বেহুদা প্যাঁচাল। সত্যি হলো যে কোনো রাজনৈতিক বেড়াজালেই হোক জামায়াত নামক দলটি বিএনপির কাছ থেকে ২৩টি নমিনেশন বাগিয়ে নিয়েছে! সাথে নাকি আরো দু-তিনটি স্বতন্ত্র হিসেবে লড়বে। যেহেতু এই বিষফোঁড়াটি এই দেশে রাজনীতিতে একটি ফ্যাক্টর হয়ে আছে! নির্বাচন তো করবেই। এদের দলের নিবন্ধন থাকুক আর নাই বা থাকুক। ৪ থেকে ৫ % সার্পোটার তো এদের এই দেশে আছেই, এই কথা তো আর অস্বীকার করা যাবে না। কি আর করার।
যা করা যায় বা করা উচিত বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বা আশা করি, সেটাই বলি। বিএনপিতেও লক্ষ লক্ষ মানুষ আছে যারা এই দলটিকে গলার কাঁটা মনে করে। আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি, সত্যিকারের বিএনপির এক নিষ্ঠ কর্মীরা জামায়াতের বাক্সে ভোট দিতে পারে না। তাছাড়া প্রশ্ন হলো জামায়াত কি বিএনপির প্রার্থী কে সত্যি ভোট দেয়? নাকি যতবারই বিএনপি ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসেছে, ততবারই সুইং ভোটে জিতে এসেছে? শত হিসেব বাদ দিয়ে সরাসরি বলি, ভোটে জামায়াত নামক দলটি বিএনপির সাথে এবং ধানের শীষ নিয়ে আছে ! থাকুক , শতবার থাকুক, তবে যেখানে জামায়াত ভোটে লড়ছে দল মত নির্বিশেষে কেউ জামায়াতের বাক্সে ভোট দিয়েন না। কতটুকু সুষ্ঠু নির্বাচন হবে সেটা নিয়ে নানান জটলা তো আছেই, সেটা ভবিষ্যতে দেখা যাবে। তবে জামায়াতের কোনো প্রার্থী ভোটে জিতে যেন আর পবিত্র সংসদে আসতে না পারে। এদেরকে সংসদের বাহিরে রাখতে পারলেই ধীরে ধীরে এদের ক্ষমতা কমে আসতে বাধ্য হবে। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এদের পূর্বের কর্মকাকে বিবেচনায় নিয়ে এদের বিচার করুণ। রাজনৈতিক দলগুলো কি করেছিলো, কি করছে বা ভবিষ্যতে কি করবে? সেই দিকটা বিবেচনায় না নিয়ে নিজে সিদ্ধান্ত নিন এদের ব্যাপারে । এরা আজ অব্দি ক্ষমা প্রার্থনা তো করেই নি বরং এরা নিজেদেরকে অনেক কিছু ভাবে ! ধর্ম এদের রাজনৈতিক খেলা। তাই বলি, একবার নিজের বিবেককে গভীরভাবে জিজ্ঞাসা করুণ এবং দেখুন কি উত্তর পান? আমি নিশ্চিত আপনি সুস্থভাবে চিন্তা করতে পারলে, আপনি এদের কে ভোট প্রদানে নিশ্চিত বিরত থাকবেন। শেষে শুধু বলবো, সুষ্ঠু ভোট হোক এবং এই জামায়াত নামক দলের কেউ জানি আর এই সংসদে প্রবেশ করতে না পারে, সেটা হবে দেশের জন্য শতভাগ মঙ্গল ।
এখানে স্পষ্ট করে আরো একটি বিষয় বলি, আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা নিয়ে এই দেশের বিরুদ্ধে সরাসরি পাকি আর্মিদের হয়ে যুদ্ধ করা এবং পাকি আর্মিদের সাথে পরাজয় বরণ করা লোকও ভোট যুদ্ধে লড়ছে, সেই ব্যক্তি বিকল্প ধারার ” মেজর মান্নান” ! শত প্রমাণ আছে। আসুন এই লোকটিকেও পরিত্যাগ করি। আমিতো মনে করি আওয়ামী লীগের কেউ এই লোকটিকে ভোট দিতে পারে না। সাথে এ কথাও বলে রাখি, স্বৈরাচার এরশাদের লাঙল মার্কাকে পরিত্যাগ করুণ। ভুলে যাবেন না, এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এই দেশের তরুণরা সাড়ে নয় বছর রক্ত ঝড়িয়েছে। ভোট দেওয়ার সময় ,সেই সময়কে স্বরণ করুণ। যে তরুণরা এরশাদের আমলে পারাপারে চলে গেছে, এরা আমাদের কে ক্ষমা করবে না।
বুলবুল তালুকদার
সহকারী সম্পাদক, শুদ্ধস্বর ডটকম