FB_IMG_1543468073139

ডাঃ অর্জুন দে

 

মধ্যপ্রাচ্য, দূর প্রাচ্য আর পাশ্চাত্য, মুসলিম আর অমুসলিম, সর্বত্র, সবার মাঝেই দেখলাম খৎনার ব্যপারে ‘যতো শীঘ্র তত ভালো’ এমন বিশ্বাস প্রচলিত।সন্তান জন্মের পর বাড়ি যাওয়ার আগেই বেশির ভাগ মা বাবা অনুরোধ করেন যেন আবশ্যক কাজটি সেরে ফেলা হয়।
এতে করে বাচ্চাটা কষ্ট বুঝতে শিখার আগেই কষ্টের পালা শেষ হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে এখন বিষয়টি প্রসূতি পরবর্তী সময়ে রুটিন কার্যক্রম এর অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দু একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তোমরা এ উপলক্ষে কোন বিশেষ আয়োজন করবে না? বিস্মিত হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেছে, ওটা কেন!

গ্রামে বড় হওয়া আবার গ্রামে ডাক্তারি করার সুবাদে দেখেছি এই অতি সাধারণ একটি ধর্মীয় রীতি পালন করতে গিয়ে কত লঙ্কা কান্ড! অবশ্য শহরেও কম দেখা হয়নি।উচ্চ মধ্য আর নিম্নবিত্ত, সাধ্য অনুযায়ী (কখনও কখনও সাধ্যের বাইরে!) ব্যয় আর জনসমাগম যেন অপরিহার্য বিষয়।ডাক্তার হিসেবে যথেষ্ট দাওয়াতও পেয়েছি এমন অনুষ্ঠানের!

মনে পড়ে ছোট বেলায় আমার এক দূরন্ত বন্ধু ভয় আর আতঙ্কে এই বিশেষ দিনে সাত সকালে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল।তখন তো আর পাকা রাস্তা অথবা দ্রুত কোন যান ছিলনা, পালাবে কোথায়? ধরে বেঁধে ঠিকই হাজির করা হয়েছিল।বাড়িতে সমাবেশ দেখে নিশ্চয়ই বন্ধুটি মনে মনে চিৎকার করেছে, আমার বিপদে তোমাদের কত আনন্দ! চেম্বারে কত শিশুর ছলছল চোখ আর শঙ্কাগ্রস্ত মুখ মণ্ডল এখনও স্মৃতি পটে ভেসে ওঠে, যেন বলত আমায়, ‘দিন ঘনিয়ে আসছে দ্রুত’ ! আর গ্রাম্য চিকিৎসকের অপচিকিৎসায় নানা জটিলতা ছিল নিত্য ঘটনা।

তথ্য অনুসন্ধানের কিছুটা চেষ্টা করেছিলাম, এত বড় বয়সে এটা করার কোন বিধান আছে কিনা জানতে। Islam Question and Answer নামক একটি ওয়েবসাইট পরিস্কার বলছে, বয়:সন্ধির পূর্বে অবশ্যই কাজটি সারতে হবে। তবে শিশু ছোট থাকতে থাকতেই কাজটি সেরে নেয়া বাঞ্ছনীয়। কারন এতে তার কষ্ট আর কান্না অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকে।

তা ছাড়া এনেসথেশিয়ার প্রতিক্রিয়া থেকেও রক্ষা হয়।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কানুন থাকার তো কথাই না, যেহেতু এটি সার্বজনীন কোন বিষয় নয়। তবে কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে চিকিৎসক পরামর্শ দেন, খৎনা একটা নির্দিষ্ট বয়সের আগে করা ঠিক হবেনা।

ইসলাম ছাড়া আরও দু’ একটা সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় আচার এর অংশ হিসেবে এটি করা হয়। কিছু মেডিকেল কনডিশন এর জন্য অন্য ধর্মাবলম্বীদেরও কখনও কখনও এটি করতে হয় ডাক্তারের পরামর্শে।

এক সময় শক্ত ধারণা ছিল, অমুক বয়সে এটা করতে হবে, বড়সড় বা যেমনই হোক একটা অনুষ্ঠান নিদেনপক্ষে করতেই হবে।

আমার মনে হয় আমাদের ধারণা বদলানোর সময় হয়েছে।উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এই শুভ কাজটি সম্পাদনের যথোপযুক্ত সময়টা মা বাবাকে জানানো প্রয়োজন।

শত বছরের অলিখিত আইন, সংশোধন এত সহজ নয়। আসুন না একটু চেষ্টা করে দেখা যাক, অন্ততঃ হাসপাতালে জন্ম নেয়া শিশুদের দিয়ে শুরু করা যেতে পারে।

অবশ্য সুনির্দিষ্ট ধর্মীয় কোন নির্দেশনা থাকলে এ বিষয়ে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে চাই আর অযাচিত পরামর্শ অবশ্যই প্রত্যাহার করব।

ডাঃ অর্জুন দেঃ চিকিৎসক এবং লেখক

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading