
কোথা থেকে শুরু করবো ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে প্রথমেই বলি, শব্দ দুটির কম্বিনেশন নিয়েছি মানবাধিকার কর্মি এডভোকেট বন্ধু দিলরুবা শরমিনের কাছ থেকে চেয়ে । সে তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে খুব চমত্কার কম্বিনেশনটি করে লিখেছে, ” মন আর নয়ন “ না পাইলেই সবাই ধানের শীষের দিকে ঝুকে যাচ্ছে! ভেবে দেখলাম তার কম্বিনেশনটি সত্যিই মূল্যায়ন যোগ্য । তবে কেন হচ্ছে? সেটাই ভাববার বিষয় ।
সামনেই জাতীয় নির্বাচন । সমগ্র দেশেই একটি নির্বাচনী ওয়েভ (ঢেউ) দেখা যাচ্ছে। তবে যত না নির্বাচনের ঢেউ তার চেয়েও একটু বেশি দল পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে। দল পরিবর্তনের ঢেউ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানান মত ও দর্শনের মানুষদের হাসি ঠাট্টারও কমতি নেই। তবে যারা একেবারে উল্টো মতাদর্শের দলে ভীড় করছেন, তাদের পরিবর্তন নিয়ে অনেকের যেমন ঘুমের বেহাত হাল হয়েছে, ঠিক অনেকের আবার স্বস্তির ভাবও প্রকাশ দেখা যায় । তবে একথা বলাই যায়, প্রায় অর্ধশতাব্দীর এই স্বাধীন দেশে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মতাদর্শের এমন পল্টি খাওয়া,, সম্ভব এবারই প্রথম ঘটলো।
ক্ষমতার স্বার্থে রাজনীতিতে পল্টি ইতিপূর্বেই অনেক দেখা গেছে। তবে সামরিক জান্তা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এরাশাদের মত পল্টি খাওয়া রাজনীতিতে পাওয়া ভার। লক্ষ্যণীয় গত কয়েকদিন পূর্বেই এরশাদ প্রকাশ্যে বলেছে , রাজনীতিতে তার মত দুঃখি ব্যক্তি আর কেউ নাই। দেশের বর্তমান রাজনীতিতে ঠিক নির্বাচনের পূর্বে এরশাদ কে বারবার হসপিটালে যেতে হয়। সবারই মনে আছে ১৪ এর ০৫ জানুয়ারির নির্বাচনের কথা “গল্ফ থেকে হসপিটাল”। অতঃপর যাহা হইবার তাহাই হইয়াছিলো এবং পাঁচ বছর পাড়। এখন আবার জাতীয় নির্বাচন আর কিছুদিন পরেই। বিশ্ব বেহায়া এরশাদ আবার হসপিটালে! এবার এখন অব্দি গল্ফ থেরাপি হয়নি, তবে একথা জোর গলায় বলাই যায় এরশাদ নির্বাচনের পূর্বেই সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে। এখানে রাখাল আর বাঘের কাহিনীর কথাই মনে পরে। সেই রাখালের চিৎকার “বাঘ এলো বাঘ এলো” কিন্তু এক সময় সত্যিই বাঘ এসেছিলো । সেবার আর রাখালের রক্ষা হয়নি। এরশাদ যদি একবার সত্যি সত্যিও হসপিটালে যায়, তা নিয়েও মানুষ নিশ্চিত সন্দিহান হবে। হয় তো তাকে মরিয়াই প্রমাণ করিতে হইবে, ” আমি অসুস্থ হয়েই হসপিটালে ছিলাম”! আমার তো মনে হয়, এরশাদ যদি হসপিটালে কখনও মৃত্যুবরন করে, তারপরেও না কেউ সন্দেহ করে বসবে যে , তাকে প্রয়োজনেই দুনিয় থেকে সড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য যদি এমনটিই হয়, সেই সন্দেহ সেই সময়কার রাজনৈতিক পরিস্থিতি কি তার উপর নির্ভর করবে বটে। মনে পরে ১৪ এর নির্বাচনেরসময় এরশাদ সাহেব ” পিস্তল ফুল লোড” করে রেখেছিলেন। যদিও গল্ফ থেরাপির পরে সেই পিস্তলের ব্যবহারের কথা শোনা যায় নি!
তবে একটি বিষয়ে এরশাদ কে ধন্যবাদ না দিলেই নয়। সামরিক জান্তা এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ১৪ এর নির্বাচনের সময়, ” ভিন্ দেশি সুজাতার বাংলাদেশের নির্বাচনের ক্ষেত্রে কি নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ ছিলো”! সেটা কিন্তু এরশাদের মত অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মুখ দিয়েই বাজারে এসেছিলো। সেই সময়ে এই নেহাত্ সত্য কথাটির মধ্যে দিয়ে জনগণ ভালো করে জানতে পেরেছিলো আমাদের দেশের নির্বাচনে ভিন্ দেশি দাদারা কেমন হস্তক্ষেপ করেন! ধারণা করি এই একটি কথাই এরশাদ তার নিজের জীবনের প্রথম সত্য কথা। এই ব্যাপারে এরশাদ কে ধন্যবাদ না দেওয়াটি অন্যায় হবে, ধন্যবাদ ।
এবার আসি রাজনীতিতে বর্তমানের পল্টির কথায় । এই পল্টির কথা বলার পূর্বে ডঃ কামাল সাহেবের কথা একটু না বললেই নয়। লক্ষ্যণীয় যে ডঃ কামাল কে সামনে রেখে যখন ঐক্যফ্রন্টের যাত্রা শুরু হলো। তখন অনেকেই ডঃ কামাল কে নানান ভাবে কথা শোনালেন! লন্ডন প্রবাসী এক আ লীগ পতিত সাংবাদিক যিনি কিনা নিজেই এক সময় ” ক্লান্তি মোর ক্ষমা কর প্রভু” বলে আজকে প্রায় চার যুগের উপরে লন্ডন প্রবাসী । সেই ক্ষমাপ্রার্থনা করা সাংবাদিক তো রীতিমতো উৎপত্তি করলেন, ” ডঃ কামাল বঙ্গবন্ধুর সাথেও বেইমানি ” করেছেন ! অবশ্য সেই সাংবাদিকের প্রায়শই সূত্র থাকে হয় মরা মানুষ, নতুবা টেলিফোনে বলেছে! যা কিনা প্রমাণ সাধ্য নয়।
লক্ষ্যণীয় যে, ডঃ কামাল কে যে যত কথাই শুনাক! একটি কথা মানতেই হবে, এই ডঃ কামালে ভর করেই একসময় আওয়ামী লীগের নতুন যাত্রা শুরু হয়। সেটা ছিলো , ৮১ তে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রধান হওয়ার মধ্যে দিয়ে । শেখ হাসিনাকে এই ডঃ কামাল সাহেবই আওয়ামী লীগ কে রক্ষা করার জন্য এনেছিলেন এবং এটা পবিত্র গ্রন্থের মত সত্য যে, সেদিনের ডঃ কামালের সুচিন্তাই শেখ হাসিনার হাত ধরে আজকের আওয়ামী লীগ। ডঃ কামাল যদি সেদিন তার প্রজ্ঞা দিয়ে শেখ হাসিনা কে আওয়ামী লীগের প্রধান না করতেন, তাহলে আজকে আওয়ামী লীগ কোথায় থাকতো? সেটা একটা বড় প্রশ্ন বটে !
আবারো লক্ষ্যণীয় যে, এই ডঃ কামালের উপর ভর করেই বিএনপি নিজেদের অনেকটা পূনঃজন্মের রুপ পেয়েছে। সেটা তো এখন বাজারে পুরোপুরিই স্পষ্ট, ব্যাখ্যার কোনো প্রয়োজন নাই। তাহলে বলতেই হবে, এই ডঃ কামাল সাহেবই বাংলাদেশের প্রধান বা মূল ক্ষমতার দল দুটোরই রক্ষাকবচ হয়ে এসেছেন। তর্ক অনেক করা যাবে, তবে এই সত্য অস্বীকার করা হবে অতি তর্ক ।
সত্যি বলতে পল্টির কথা বলতে গিয়ে নানান কথায় জড়িয়ে যায় । কেননা রাজনীতিতে আদর্শ বলতে কতটুকু কি আছে বর্তমানে? সেটা নিয়েই বলা পল্টির চেয়ে বেশি জরুরি মনে হয়। বর্তমানে রাজনীতিতে পল্টি খাওয়া দেখে , একটি সহজ সরল অংক কষলে দেখা যায় যে, ” প্রথিতযশা বড় বড় মুক্তিযোদ্ধাদের ভীড়ে এখন বিএনপির পাল্লা বেশ ভারী “। এটা অংক কষারও প্রয়োজন নাই, চোখেই পরে। এই সকল মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আপনি শত কথা বলতে পারবেন, শত প্রশ্ন তুলতে পারবেন, নীতি নৈতিকতার কথা বলতে পারবেন। কিন্তু শত চেষ্টা করেও মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সময়ে তাদের নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবেন না। কেননা সেই সময়ে তাদের অবদান ছাড়া এই দেশ স্বাধীন হতো কিনা ? ভেবে দেখবার বিষয় । আর নৈতিকতার কথা যারা তুলবেন, তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে একবার আয়নার সামনে নিজেদের দাঁড় করাবার। কেননা ক্ষমতায় যাবার জন্য এই দেশে এখন অব্দি এমন কোনো রাজনৈতিক দল নাই, যারা নিজেদের আদর্শকে কলঙ্কিত করে নাই। উদহারণ লিখলাম না, কেউ চাইলে সব বলা যাবে।
রাজনৈতিক পল্টির কথা এক এক করে নাম ধরে বলতে গেলে মহা কাব্য হয়ে যাবে। সেই দিকে না গিয়ে কেবল একটি উদহারণ দেই, তিনি অতিব যুবক এবং বাজারের হট কেক। “গোলাম মাওলা রনি “ জ্ঞাণী এবং চাটুকদার কথাবার্তা বলতে পারেন বটে। উনি গত দুইদিন পূর্বেই এক্কেবার ১৮০ ডিগ্রি পল্টি মেরে, আদর্শ কে মাচায় তুলে সরাসরি নৌকা থেকে লম্ফ মেরে ধানক্ষেত ! বলতেই হবে বাহ্হবা ! তবে পল্টি যদি মারতেই হয় এদিক সেদিক কেন সরাসরি মারাই ভালো। কেননা বাংলাদেশের রাজনীতি ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখতে পাওয়া যায়, আগামীর ভবিষ্যত এই দেশে ঘুরেফিরে হয় নৌকা না হয় ধানের শীষ এরাই দেশের ক্ষমতাসীন হবেন। সুতরাং হয় এসপার না হয় ওসপার , কিসের আদর্শ কিসের কি? প্রতীকই আসল, প্রতীকই প্রেম, প্রতীকেই মাথা নত! তাহলে যদি কিছু মিলে।
লেখা শেষে শ্রদ্ধেয় হাবিব বাবুল ভাই ( শুদ্ধস্বরের প্রধান সম্পাদক, জার্মানি প্রবাসী) উনার একটি ফেসবুকের স্ট্যাটাস দিয়ে শেষ করবো। হাবিব বাবুল ভাই লিখেছেন, ” গায়ে মুজিব কোট, মুখে জয় বাংলা স্লোগান, হাতে ধানের শীষ। এরকম এখন অসম্ভব কিছুই না! অন্তত এর মধ্যে দিয়ে ব্যক্তি স্বাধীনতা কিছুটা হলেও বেড়েছে”। গায়ে কি, মুখের বুলি কি বা হাতে কি আছে? সেটার চেয়ে এখন বড়, এই দন্দ মুছে দেশে একটি ভালো নির্বাচন হোক, গণতন্ত্রের জয় হোক এবং দেশ এগিয়ে যাক ভালো রাজনীতিতে ভর করে। ভালো রাজনৈতিক চর্চা মানেই দেশের জন্য মঙ্গল ।
বুলবুল তালুকদার
সহকারী সম্পাদক, শুদ্ধস্বর ডটকম