
আজকের রাজনীতি পর্যালোচনা করলে একটি বিষয় পৃথিবী ব্যাপী লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, জোটগত রাজনীতিই এখন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য প্রধান পথ। আমাদের দেশেতো এই জোটগত রাজনীতি দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ অনেক আগেই শুরু হয়েছে, তা আজ অব্দি চলছে এবং বলা যায় আগামীতেও চলবে।
একটু জোটগত রাজনীতির কথা লক্ষ্য করি। একেবারেই বর্তমানের রাজনৈতিক বিষয়ে আসি, বর্তমানে রাজনীতির দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাচ্ছে সকল দলই ( কেবলমাত্র বাম রা ছাড়া) কোনো বড় দলের দিকে ঝুকে গিয়ে ক্ষমতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। হোক সেটা পরগাছা হয়ে বা নিজেদের কে কিছুটা বিলিন করে। আমি বলছি না পরগাছা হয়ে রাজনীতি করে ক্ষমতায় গিয়ে ধাপ্পাবাজীর কথা। তবে রাজনীতির মূল লক্ষ্য যদি দেশ সেবা হয়, তাহলে ক্ষমতায়ন হওয়া ছাড়া দেশের জন্য কিছুই করার থাকে না।
আমাদের দেশের বামেরা প্রায় পাঁচ যুগের বেশি দিন ধরে রাজনীতি করেও একজন সাংসদকে নির্বাচিত করতে পারে না। অন্যদিকে বামেরা একত্রিতও থাকতে পারে না। বামেরা নিজেদের কে ভাঙতে ভাঙতে অনু-পরমাণুতে নিয়ে গেছে। ভোটের হিসেব বলতে গেলে কোনো স্ট্যাটিস্টিক্স এর প্রয়োজন হয় না। এক কথায় বলাই যায় জামানত খোয়ানোর হিসেব। বর্তমানে পৃথিবী যেখানে জোটের খেলায় বন্দি হয়ে যাচ্ছে, সেখানে বামেরা তাদের কট্টর মনোভাব পরিবর্তন না করলে , ধারণা করি আরো দশ যুগ রাজনীতি করেও একটি সাংসদ নির্বাচন করতে পারবে না। আর একক ভাবে ক্ষমতায় গিয়ে জনসেবা করার কথা ভাবাতো আকাশ কুসুম ভাবার সমান।
লক্ষ্য করুন, জোটগত রাজনীতির হিসেবটা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে! দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি জোটের মূল্যায়ন ঠিকই বুঝতে পেরে আজকে নিজেদের দিক থেকে অনেক ছাড় দিয়ে একজন প্রথিতযশা ব্যক্তি কে সামনে রেখে ঐক্যফ্রন্ট গড়লো। ফলাফল , সরকার তাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা সংলাপ করবো না থেকে সরে এসে সংলাপ করলো এবং রাজনীতিতে হিমালয়ের বরফ একটু নরম হয়ে আসছে। ধারণা করি সামনে ভালো নির্বাচনের একটি সূত্রও বেড় হয়ে আসবে। একবার ভাবুন তো, আওয়ামী লীগ কি কখনোই কেবলমাত্র বিএনপির সাথে সংলাপ করতো ? উত্তর হচ্ছে না। বরং আওয়ামী লীগ বিএনপি কে ছাড়া সকল দলকে নানান ফন্দি ফিকেরে জড় করে বৃহৎ বিরোধী দল সংসদে তৈরি করে নিতো। তখন আর কেউ বিএনপি কে স্বরণেও রাখতো না। এখানে বলতেই হয় বিএনপি রাজনৈতিক ভাবে প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছে।
আর বামেরা কি রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দেখাচ্ছে ? উত্তর পাওয়া ভার। তবে বলা যায়, তারা তত্ব নিয়ে আরো তাত্বিক হচ্ছে। এইতো মাত্রই দুদিন পূর্বেই কাদের সিদ্দিকী ঐক্যফ্রন্টের শিবিরে এসে সামিল। অন্যদিকে বিকল্পধারা ঐক্যফ্রন্ট থেকে অতি ফালাফালির কারণে ছিঁটকে গিয়ও কিন্তু কালক্ষেপন না করে ঝোপ বুঝে আওয়ামী ঘরে কোপ মেরে জায়গা করে নিচ্ছে। আর বামেরা এখনও আতষ কাচের নিচে তত্বের সমীকরণ করে চলছে।
সত্যি বলতে বামদের রাজনৈতিক ধ্যান ধারণা সঠিকই বটে। তবে এই সঠিক ফরমুলা দিয়ে আমাদের দেশে আর চিরে ভিজবে না। জনগণ সেবা চায়, আর সেটা করতে হলে ক্ষমতায়ন হতেই হবে। এবার বামদেরও উচিত হবে নিজেদের কে একটু ছায়াতলে এনে ঘষামাজা করা। অনেকেই ভাববেন হয়তো আমি বামদের রাজনীতি কলুষিত করার পরামর্শ দিচ্ছি। না , মোটেও তা নয়। বাম রাজনীতি এখন পৃথিবীতে একেবারেই অচল। আমাদের দেশে বামেরা নিজেরাই নিজেদের কলুষিত করে ছারখার করেছে। যে রাজনীতির আগামী শত বছরেও কোনো উজ্জল ভবিষ্যত নাই , সেটাতে পরিশ্রম করেই বা কি হবে? সুতরাং সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ক্ষমতায়ন হতে পারলে যদি ব্যক্তি ইমেজেও কিছু করতে পারে, সেটাই জনগণের কাজে আসবে।
তাই বলছিলাম , ” বাম নামটিই বদলিয়ে ফেলা সময়ের দাবী ” ।
বুলবুল তালুকদার
সহকারী সম্পাদক, শুদ্ধস্বর ডটকম