
নির্বাচন কমিশনার “কবিতা খানম” আপনার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাতে বাধ্য হচ্ছি। একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের একজন দায়িত্বশীল কমিশনার হয়ে, আপনার দায়িত্বকে আপনি নিজেই ছোটো করে দেখছেন বলে আমাদের অতীব লজ্জা হয়। এত বড় একটি দায়িত্বশীলপদে থেকে, সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করার পূর্বে আপনার আরো সতর্ক এবং নিশ্চিত হওয়া উচিত বলে মনে করি। আপনার বক্তব্য,
“পৃথিবীর কোথাও শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না” !!!
দীর্ঘ প্রবাস জীবনে নিজের বসবাসের স্থান অস্ট্রিয়ার সাম্প্রতিক কালের একটি উদহার দেই, তাহলেই আপনার ভুল তথ্যের উত্তর সরাসরি পাবেন বলে আশা করি। ২০১৬ সালে ২২ মে তারিখে অস্ট্রিয়ায় প্রেসিডেনট নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে প্রফেসর ভানদেয়ার বেলেন ৫০,৩% এবং নোরবেয়্রাত হফেয়ার ৪৯,৭% ভোট পান। নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভানদেয়ার বেলেন সামান্য কিছু % নিয়ে জয়ী । কিন্তু একটি সমস্যা বাঁধে “চিঠিভোট” নিয়ে । এখানে বলা ভালো যে, চিঠিভোট মানে , যারা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে না , তাদের সেই ভোট চিঠির মাধ্যমে দেওয়ার সুযোগ আছে। সেই চিঠিভোটের কিছু অংশের ফলাফল মূল ভোট গণনার পূর্বেই প্রকাশ হয়ে যায়, যা কিনা অস্ট্রিয়ার ভোট গণনা পদ্ধতির পরিপন্থী । এই বিষয়টিকে সামনে এনে নোরবেয়্রাত হফেয়ারের পার্টির প্রধান “হাইন্স ক্রিস্টিয়ান স্ট্রাখে” ভোট গণনার আইন ভঙ্গ করার বিষয়টিকে নিয়ে আদালতের স্বরণাপর্ণ হন। পরবর্তীতে আদলতের আদেশে ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ নতুন করে অস্ট্রিয়ায় প্রেসিডেনট নির্বাচন পরিচালনা করেন। বর্তমানে অস্ট্রিয়ার প্রেসিডেনট ” প্রফেসর ভানদেয়ার বেলেন”।
এই বছর জুলাই মাসে আমার প্রকাশিত বই ” নীলকণ্ঠে স্বগতোক্তি “ তে অস্ট্রিয়ার ভোট প্রদান পদ্ধতি নিয়ে লেখা “গণতান্ত্রিক দেশে এক সপ্তাহ আগেই ভোট দিলাম “ নিচে সংযোজন করিলাম। এই লেখাটিতেই স্পষ্ট বুঝা যাবে কিভাবে ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়ায় শতভাগ নিশ্চিত ভোট হয়।
মাননীয় কবিতা খানম আপনার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, ইউরোপের দেশগুলোতে ভোট সঠিক হয়না কেবল , শতভাগ সঠিক হয়, এ কথা জোর গলায় বলা যায় । সেই পাথর যুগের উদহারণ বর্তমানের ক্ষেত্রে মোটেও প্রযোজ্য নয়। আমেরিকায় সেই জর্জ বুসের সময় “ইলেক্ট্রনিক ভোটের” ফুটো নিয়ে যে সমস্যা হয়েছিলো, সেটা কেবল একটি ইনসিডেন্ট (দুর্ঘটনা) ছিলো বলেই আদালত ফলাফল দিয়েছিলো তাও নানান জটিলতাকে এরানোর জন্য, কেননা আমেরিকার ভোট পদ্ধতিটি এখনও কিছুটা জটিল বলে। সেই একটি উদহারণ আমাদের দেশের অনেকেই সুবিধা অনুযায়ী উদহারণ হিসেবে ব্যবহার করেন। কবিতা খানম ,ওনার মাথায় যদি জর্জ বুস উদহারণ হয়, তাহলে জাতির কপালে খারাপই আছে। কেননা আমাদের দেশেও ইভিএম ব্যবহারের কথা শোনা যাচ্ছে।
সব শেসে শুধু বলবো, সমগ্র জাতি উদ্গ্রীব হয়ে আছে একটি সুষ্ঠু ভোটের জন্য । নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে জনগণকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। আর যদি সন্দিহান হন সঠিক দায়িত্বটি পালন করতে পারবেন না, তাহলে সসম্মানে পদ ছাড়ুন। পদ ছাড়লেও সম্মান পাবেন, কিন্তু ভুল কাজটি করলে সেটার খেসারত একদিন না একদিন দিতে হবে এবং জনগণের সম্মুখীন হতেই হবে।
ণতান্ত্রিক দেশে
এক সপ্তাহ আগেই ভোট দিলাম :
অস্ট্রিয়ায় আগামী রোববার ১৫/১০/২০১৭ তারিখে পার্লামেন্ট ভোট হবে। ভোটের তোড়জোড় যা চোখে পরে তা প্রতিদিনই টিভির পর্দায়, খবরের কাগজে বেশী । কোথাও কোথাও রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন দলগুলোর কিছু আনাগোনা দেখা যায় । তবে তা খুব কমই চোখে পরার মতো। হয়তো কোনো দল ছোট্ট একটি টেবিলে ( যা ডেক্সের মতো) কয়েক জন মিলে কিছু লিফলেট, বাচ্চা দের কে পার্টির নাম সম্বলিত বেলুন , চকলেট বা কোনো পানিও জাতীয় বোতল , অমায়িক ব্যবহারের মাধ্যমে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে ( যদি নিতে সম্মতি হোন) হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে । সাথে চমত্কার হাসি ঠাট্টা করে ( রাজনীতি নিয়ে) ভোটটা সম্ভব হলে দেওয়ার অনুরোধ করছে। এই হলো সার্বিক ভাবে ভোটের প্রচারণা । দীর্ঘ দিনের ইউরোপের প্রবাসী জীবনে ভোটের সময় আজ অব্দি দেখিনি কোনো মিটিং মিছিল বা ওমুক ভাই/ তমুক ভাই , ফুলের মতো চরিত্র বা দেশ নেতা/ নেত্রী , জণ নেতা/নেত্রী ইত্যাদি ইত্যাদি ।
যাকগে, আমার ধারণা এই বিষয় গুলো প্রায় সকলেই মোটামুটি জানেন । যে বিষয়টি হয়তো আমাদের দেশের অনেকেরই জানা নাই , তাই আমি আজ বলবো।
বিষয়টি হলো , ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশেই আপনি ভোটের নির্দিষ্ট দিনক্ষণের প্রায় দুই/তিন সপ্তাহ পূর্বেই আপনার ভোটটি প্রদান করতে পারেন। কিভাবে সম্ভব, পদ্ধতিটি কি ? , বিস্তারিত লিখলে অনেক বড়ো হয়ে যাবে বিধায়, সংক্ষিপ্তভাবে লিখার চেষ্টা করছি।
খুবই সহজ, ভোটের দুই/তিন সপ্তাহের পূর্বেই আপনার পোস্টবক্সে একটি সরকারি চিঠি পাবেন। যে চিঠিতে একটি অংশে আপনার ভোটার নাম্বারের কাগজ, স্পষ্ট করে আপনার ভোটার নাম্বারটি লেখা থাকে। এই নাম্বার দিয়ে আপনার পরিচয় পত্রের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ভোট কেন্দ্রে ভোটের দিন ভোট দিতে পারবেন। একি চিঠিতে ভিন্ন আরো একটি অংশের কাগজ থাকে , যেখানে ছোট্ট একটি ফর্ম থাকে। আপনি ফর্মটি পূরোণ করে আপনার ভোট দানের কাগজ ( ব্যালোট পেপার) আপনার নিকট বাসায় পাঠানোর অনুরোধ করতে পারেন। চিঠির ভিতরে একটি ঠিকানা সম্বলিত খাম আছে, ওই খামে ভরে পোস্টবক্সে ফেলে দিলে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে আপনার ব্যালোট পেপার আপনার নিকট চলে আসবে। এবার আপনার দায়িত্ব কেবল ভোট দেওয়া, যাকে খুশি তার যায়গায় একটি ক্রস চিহ্ন দিয়ে খামটি বন্ধ করে ফের পোস্টবক্সে ফেলে দিন। আপনার মূল্যবান ভোটটি জায়গা মতো শতভাগ নিশ্চিত চলে যাবে এবং ভোটের দিন নির্দিষ্ট সময়ে গণনার জন্য প্রদান হবে।
নির্দিষ্ট দিনক্ষণের পূর্বে ভোট দেওয়ার আরো সহজ পদ্ধতি যা কিনা আমি নিজে আজ প্রয়োগ করেছি, তা কিভাবে বলার চেষ্টা করছি। আজ সকালে আমি ব্যক্তিগত কাজে সিটি মেয়রের অফিসে (রাথহাউজ=সিটি করপোরেশন) গিয়েছিলাম। নিজের জরুরি কাজ সেরে , সেই অফিসের দোতালায় যেখান থেকে পরিচয় পত্র দেখিয়ে ব্যালোট পেপার নিজ দায়িত্বেই জোগাড় করা যায় এবং ওখানেই ভোট দেওয়ার বুথ আছে ,গোপনীয়তা রক্ষা করে ভোট দিয়ে ব্যালোট পেপার অফিসে জমা দিয়ে আসলাম। আমার মূল্যবান ভোটটি ঠিক আগামী রোববার সমগ্র অস্ট্রিয়ার ভোট দেওয়ার নির্দিষ্ট সময় সুচি শেষ হলেই , অন্যান্য সকল ভোটের সাথে আমার ভোটটিও গণনা করা হবে।
সংক্ষিপ্তভাবে এই হলো সত্যিকারের গণতান্ত্রিক দেশে অগ্রিম ভোট দেওয়ার পদ্ধতি । আজকে সহ অনেকবারই আমি নির্দিষ্ট ভোটের দিনের আগেই ভোট দিয়েছি । প্রতিবারই ভোট দিয়েছি এবং ভেবেছি , আজকেও অগ্রিম ভোট দিলাম আর ভাবলাম, সেই একি ভাবনা!!! আমরা যুদ্ধে জয়ী একটি দেশ আমরা কবে পারবো???
বুলবুল তালুকদার
সহকারী সম্পাদক, শুদ্ধস্বর ডটকম