
ভাগ্য বদলানোর জন্য বাংলাদেশের মানুষ কত কিছুই না করে। কারো মুখে বিদেশ পাঠানোর নাম শুনলেই তার পেছনে হন্যে হয়ে ছুটতে থাকে সাধারণ মানুষ। কোন পেশায় পাঠানো হবে, কিভাবে পাঠানো হবে-এসব বিষয় বিচার-বিবেচনা না করেই রাজি হয়ে যায়। আর কম খরচে যাওয়ার কথা শুনলে ভাবে, এই বুঝি আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া গেল। সাম্প্রতিক সময়ে বেড়ে গেছে মানবপাচার ও প্রতারকদের দৌরাত্ম্য। স্বপ্নের খোঁজে বিদেশে পাড়ি দিতে চায়-এমন মানুষ তাদের প্রধান টার্গেট। অবৈধভাবে সমুদ্রপথে যাত্রা করে অনেকে সাগরে মারা গেছে। অবৈধভাবে গন্তব্যে পৌঁছা মানুষের অনেকেরই জীবন হচ্ছে বিপন্ন, বেঁচে থাকলেও পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। জীবনের ঝুকি নিয়ে প্রবাসের উদ্দেশ্যে গ্রাম থেকে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়। যে ছেলেটি কখনও ঢাকা দেখেনি সে ইউরোপ যাওয়ার ট্রানজিট রুট লিবিয়া-তুরস্কের পথ ধরেছে ইউরোপে যাবার উদ্দেশ্যে। মানব পাচারকারী দলের প্রলোভনে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার আশায় বাংলাদেশিরা যে ঝুঁকি নিচ্ছেন তা মরীচিকা মাত্র, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ তুরস্ক হয়ে ইউরোপে পাড়ি দেয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও অনেক বাংলাদেশি এ পথ বেছে নিচ্ছেন এবং সমুদ্র পাড়ি দেয়ার সময় মারা পড়ছেন, যা দুঃখজনক। লাখ লাাখ ডলারের কন্ট্রাকে সে বাড়ী থেকে ইউরোপ উদ্দেশ্যে যাত্রা করছে। দশ জন দালালের হাত বদল হয়ে কেউ বা নির্দিষ্ট গন্তব্রে যেতে পারছে বা মাঝ পথে হারিয়ে যাচেছ। বিদেশ পাড়ি দেবার জন্য জীবনে ঝুকি নেয়। কখনও বিপদজনক শিপে করে তাদের অজানার উদ্দেশ্য যাত্রা করতে হয়। খেয়ে না খেযে তাদের মাসের পর ঝড়বৃষ্টিতে শীপে থাকতে হয়। বিদেশ যাবার প্রবনতা যতটা সহজ তারা ভাবে বাস্তবে অনেক কঠিন। অনেকে মনে করে কয়েকটা দিন কষ্ট করলে অনেক টাকা রোজগার করা যাবে, আসলে জীবন দিয়ে তাদের অনেককে মুল্য দিতে হয়। প্রবাসের এ কঠিন বাস্তবাতা অনেকে জেনে আবার অনেকে না জেনে পাড়ি দিচ্ছে। জীবনের ঝুকি নিয়ে সাগর সাতরিয়ে যে দেশে প্রবেশ করছেন সে দেশেও প্রবাসীরা অবৈধ। বিদেশের অনেক জেল এ প্রবাসীরা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বছরের পর বছর জেল কাটছেন। সবকিছু বিক্রি করে অবৈধভাবে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে এখন অনেকেই নিঃস্ব। অনেকে সবকিছু বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সেই পথে ব্যার্থ হয়ে সবকিছু হারিয়ে তাদের অনেকে এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে পরিবারের মুখোমুখি হচ্ছেন। মানব পাচারের মতো অপরাধ রোধে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ যেমন প্রয়োজন, তেমনি বিদেশ গমনেচ্ছুদেরও সতর্ক ও সচেতন হওয়া জরুরি। মানব পাচার মূলত আন্তঃদেশীয় সমস্যা। কোনো দেশের একার পক্ষে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। মানব পাচার প্রতিরোধে জনশক্তি রফতানিকারী, ট্রানজিট ও জনশক্তি গ্রহণকারী দেশগুলোর একযোগে কাজ করার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত।
লেখক: আবু জাফর শিহাব (এল এল বি)