আসমানী কিতাব তো একটিই। তাহলে বলাই যায় সংবিধান নিশ্চয়ই অপরিবর্তনীয় নয়। দুঃখজনক হলো বর্তমান সরকার সংবিধান কে যেভাবে আসমানী কিতাবের পর্যায়ে নিজেদের সুবিধায় নিয়ে গেছে! সেটা একটি প্রশ্নবোধক বিষয় বটে। তাহলে প্রশ্ন করা যাবে কি, ভবিষ্যতে সংবিধান আর পরিবর্তন হবে কি ? নাকি সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আবার তারাই সংবিধান পরিবর্তনে রাজপথ গরম করবেন? সংবিধান যেকোনো ছুঁতায় পরিবর্তন নিশ্চয়ই কাম্য নয়। সমস্যা হলো বর্তমানের এই সংবিধান কেন আসমানী কিতাবের  আসন পেলো? ইতিমধ্যেই তো অনেকগুলো পরিবর্তন হয়েছে। তাহলে বর্তমানে কেন নয়?

অনেক বড় গলায় শোনা যায়, ” সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে” ভালো কথা। প্রশ্ন করা যাবে কি, পৃথিবীর কোন গণতান্ত্রিক দেশে এক সংসদ কে বহাল রেখে অন্য সংসদের নির্বাচন হয়? নাকি আমারা পৃথিবীর নতুন গণতন্ত্রের রোলমডেল হতে যাচ্ছি?  সেটাতো অন্য গণতান্ত্রিক দেশ কখনোই গ্রহণ করবে না। তাহলে বুঝাই যায় এ কর্মকায় ভেজাল আছে। যেখানে ভেজাল নিশ্চিত, তা জনগণ গ্রহণ করবে কেন ?

বর্তমান সংবিধান যদি আসমানী কিতাব হয়, তারপরেও তো বলা যায় এটা পরিবর্তন করা যায়। কেননা সংবিধান সংশোধনের কথা তো এই আসমানী সংবিধানেও স্পষ্ট করে বলা আছে। একটি উদহারণ তো আমরা সবাই জানি, ৯১ সালে এরশাদের পতনের পর ১২ ঘন্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো বিচারপতি শাহবুদ্দীন সাহেব প্রেসিডেনট হবেন। সেই সমঝোতায় সংবিধান বহির্ভূত বিষয়ও সংযোজন করা হয়েছিলো । সেটি ছিলো বিচারপতি আবার উনার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবেন। সবাই একমত হলেন এবং সব হয়ে গেলো।  তাহলে সেই উদহারণ থেকে বলা যাবে কি, যারা চিল্লাছেন সংবিধান সংশোধনের সময় নেই! সেটা পুরোপুরিই ভুল বা অনিচ্ছি।

উপরের কথাগুলো সবার জানা এবং মুখস্থ।  এই সকল প্যাচাল শুনতে শুনতে মানুষের কান মনে হয় ঝালাপালা হয়ে গেছে। তবুও জনমানুষের ইচ্ছার কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। সমস্যা মনে হয় ভিন্ন জায়গায় । মূলত সমস্যাটি ১৪ এর ৫ ই জানুয়ারি নির্বাচন । আবার সেই একই পুরোনো প্যাচাল করতে হয়। সেই সময় ১৫৪ সিট বিনি ভোটে নিয়ে নিলেন, আবার সেটা যায়েজ করার জন্য গত পাঁচ বছর যাবত্ শুধু বলেই চলচ্ছেন, “নির্বাচনটি নৈতিকভাবে ঠিক হয়নি কিন্তু আইনগতভাবে সঠিক!” কি আশ্চর্য, যাহা নৈতিকভাবে ঠিক নয় সেটাকে আইনগত বৈধতা দিলে যে আইন নিয়েই প্রশ্ন উঠে। ভিন্নভাবে বলা যায় আইনতো বর্তমান আসমানী কিতাব সংবিধানেই অন্তর্ভুক্ত! তাহলেতো সেই আসমানী কিতাবে ভেজাল আছে। সেই ভেজাল যুক্ত কিতাব জনগণ মানবে কেন ? তাছাড়াও আসমানী কিতাবে ভেজাল থাকবে এটা শুনতেও তো অবিশ্বাসের জন্ম দিবে। তবে এই আসমানী কিতাবেই স্পষ্ট লিখা আছে, ” জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে” নির্বাচন হবে! সেটার কি হলো বা হবে?

সত্যি বলতে প্রতিটি দেশেরই কিছু প্রতিষ্ঠান থাকে, যেগুলো কে স্য়ংক্রিয় বা স্বায়ত্তশাসিত থাকাটা অতিব জরুরি । তা নাহলে সবকিছুতেই হ জ ব র ল অবস্থা  হয়। যা কিনা বর্তমানে আমাদের দেশেও চলছে। সেই প্রতিষ্ঠান গুলোকে সুরক্ষা বা পাহারা জনগণকেই দিতে হয়। জনগণ কিন্তু আপনাদেরকে ২০০৮ সালে সেই পাহারাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলো। আর আপনারা কি সেই দায়িত্ব কি সঠিক পালন করেছেন? নিজেদের কেই প্রশ্ন করুন । তাই বলছিলাম, অবস্থা সাপেক্ষে মনে হচ্ছে জনগণ শুঁটকির হাটে বেড়ালদের পাহারাদার করেছিলো! এখন সামনে নির্বাচন, নিশ্চয়ই জনগণ সেই শুঁটকির হাটে বেড়ালদের আর পাহারাদার হিসেবে চাইবে না। তাহলে করণীয় কি ? করণীয় হতে হবে আসমানী কিতাবের পরিবর্তন । এমনকি এই কিতাব সুরক্ষার ঘর সংসদকেউ ভেঙে দিয়ে নতুন করে তৈরি করা। আর সঠিক পাহারাদার নিযুক্ত করা। প্রশ্ন করবেন না, কারা পাহারাদার হবে? এর সমাধান সর্ব প্রথম  আপনাদের উপরেই বর্তায় । কেননা এই আসমানী কিতাব যে আপনারাই বহন করছেন। সময় মত এর সমাধান না দিলে, এই আসমানী কিতাবের ভার ভবিষ্যতে বহন করা কিন্তু অস্বাভাবিক হতে পারে।

43128000_1380807028719293_6513620768297844736_n

বুলবুল তালুকদার

সহকারী সম্পাদক,শুদ্ধস্বর ডটকম 

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading