
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, সরকার প্রতিদিন সংলাপের আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করছে। এ প্রত্যাখ্যান সরকারের করুণ পরিণতি ডেকে আনবে। জনগণের অভ্যুত্থানের মুখোমুখি সরকারকে হতেই হবে।
তিনি বলেন, আগামীতে জনসংহতি আন্দোলন সাধ্য অনুযায়ী আন্দোলন চালিয়ে যাবে। সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ সরকারকে সংলাপে বসতে বাধ্য করা হবে। এ আন্দোলনে বিরোধী দলগুলোকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
শুক্রবার প্রেসক্লাবে সামনে আয়োজিত এক জনসভায় সভাপতির বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, আর ৩ মাস পরেই নির্বাচন। কিন্তু নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়েও জনগণের মাঝে সংশয় কাজ করছে। কারণ সরকার একতরফা নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, যত দিন যাচ্ছে মনে হচ্ছে, সরকার ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চায়। কোনো দল যেন নির্বাচনে না আসে সরকার সেটাই চায়। সংবিধানের দোহাই দিয়ে ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে।
উন্নয়নের নামে লুটপাটতন্ত্র চলছে মন্তব্য করে জোনায়েদ সাকি বলেন, এ সরকারের উন্নয়ন মানে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা, যাতে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করা, কিন্তু এ ঘনবসতিপূর্ণ দেশে তার পরিণতি কী হবে, তার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এ সরকারের উন্নয়ন মানে ধ্বংসযজ্ঞ। জনগণ ও দেশের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয় না। কত অবকাঠামো নির্মাণকে উন্নয়ন বলা হয়। কিন্তু ঢাকা পরিবহন সংকট নিরসনে কী করা যায়, সে বিষয়ে মনোযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি ব্যাংকে সর্বস্ব লুটপাট করা হচ্ছে। ব্যাংক ব্যবস্থাকে ধসিয়ে দিয়ে আগামীতে দিনে অর্থনীতিতে ভয়াবহ অশনিসংকেত ডেকে আনছে। সরকার এ লুটপাটতন্ত্র চালিয়ে যেতে চায়।
সরকার জমিদারিতন্ত্র কায়েম করতে চায় উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, সংবিধানের মধ্যেই গ্লগোল আছে, এর মধ্যেই ভূত আছে। এ সংবিধানে এক ব্যক্তিকে এমন ক্ষমতা দেয়া আছে, যা জমিদারতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের প্রধান ভিত্তি। সব ক্ষমতা একজন ব্যক্তির হাতে দেয়া আছে। সরকার তার হাতে তো আছেই, সংসদও তার দাস। বিচার বিভাগও নিয়ন্ত্রণ করেন। নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান তার মুট্টির মধ্যে থাকে। এসব জায়গায় যাদের নিয়োগ দেয়া হয়, তারা দলদাস হিসেবে নিয়োগ পায়। যদি কেউ বিরোধী করেন তবে সাবেক প্রধান বিচারপতির মতো ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, বিরোধী মতকে দমন করতে একের পর এক আইন করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। সম্প্রচার নিয়ন্ত্রণ আইন করা হচ্ছে। আর সরকারি কর্মকর্তারা যদি অপরাধও করে তবুও তাকে অনুমতি গ্রেফতার করা যাবে না। এক দেশে দুই আইন করা হচ্ছে। একদিকে সরকারি কর্মকর্তাদের ইনডেমনিটি দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে জনগণকে কুক্ষিগত করতে আইন করা হচ্ছে।
জনসভায় গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক পরিষদ ও সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্য বক্তব্য রাখেন।এরা হলেন আরিফুল ইসলাম, আবু বকর রিপন, মুরাদ মোর্শেদ, মনিরুদ্দিন পাপ্পু, হাসান মারুফ রুমী, আবুল হাসান রুবেল প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, দেশে লুটপাটতন্ত্র চলছে। উন্নয়নের নামে একের পর এক প্রকল্প নেয়া হচ্ছে, আর পরিবারের সবাই মিলে সেটার ভাগ-বাটোয়ারা করছেন। এসবের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে রাষ্ট্রদ্রোহী আখ্যা দিয়ে জেল-জুলমের শিকার হতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, জনগণকে সরকারের ইচ্ছায় হাসতে হবে, সরকারের ইচ্ছায় কাঁদতে হবে, সরকারের সুবিধামতো কথা বলতে হবে। এ পরিবেশ বজায় রাখতে একের পর এক স্বৈরাচারী আইন করা হচ্ছে। যাতে দুর্নীতি করার চেয়ে দুর্নীতির তথ্য প্রকাশকারীকে বেশি সাজা দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।
তারা আরও বলেন, দেশে ন্যূনতম আইনের শাসন নেই। সরকার বিচারব্যবস্থাকেও দলীয়করণ করছে।