বুলবুল তালুকদারের কলাম “যুক্তফ্রন্ট/মুক্তফ্রন্ট=কাবাডি,তাবিজ,পুরনো কাসুন্দি”

দেশের রাজনীতিতে একটা বড় পরিবর্তন দরকার। কেননা যে যত কথাই বলুক, সত্যিকারের গণতান্ত্রিক চর্চা আমাদের দেশে স্বাধীনতার পর থেকে আজ অব্দি হয়নি। একটি যুদ্ধ জয়ী স্বাধীন দেশে ৪৭ বছর বেশি না হলেও এক্কেবারে কম নয়। এই সময়ে অনেক সরকার গেলো এলো, কিন্তু গণতান্ত্রিক চর্চার বিষয়ে কেউ কোনো দিন এগিয়ে আসেনি! কথায় বলে না, “যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবন”। সম্ভবত ক্ষমতাই এটার পিছনে বেশি কাজ করে। কেন গণতান্ত্রিক চর্চা হয়নি সেই প্যাচালে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, কেননা আমাদের দেশের জনগণ কিছু বুঝুক আর নাই বুঝুক রাজনীতির বিষয়টিতে রাজনৈতিকভাবেই বেশ সচেতন বলেই মনে হয়।

দেশে সামনেই একটি জাতীয় নির্বাচন হবে বা হতে বাধ্য, সময়ের কারণেই। সেই জাতীয় নির্বাচন নিয়েও অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেন, হবে কি হবে না ? এই হবে কি হবে না? এই একটি প্রশ্নেই বুঝা যায় আমাদের রাজনৈতিক অবস্থা। ভাত রান্নায় সব ভাত তো আর টিপে দেখতে হয় না। সেটা ভিন্ন বিষয় । সূর্য ডুববে আবার সূর্য উঠবে, ঠিক সেই নীলাভো রাজনৈতিক  আকাশে রাজনৈতিক দলগুলোর নানান তত্পরতায় বেশ সরগরম বুঝা যাচ্ছে। এই সরগরমে সবচাইতে সরব হলো এই যুক্তফ্রন্ট। কেননা বর্তমানের শক্তিশালী বা অতীব শক্তিশালী ক্ষমতাশালীদের বিপরীতে আরেক  পূর্বের ক্ষমতাশালীদের সাথে যুক্তফ্রন্ট। স্বাভাবিক কারণেই দেশের রাজনীতিতে এটা একটি বড় ফ্যাক্টর বটে!

এই যুক্তফ্রন্ট যখন থেকে রাজনৈতিক দরবারে আলোচনায় এলো, সেই সময়েই দেশের রাজনৈতিক স্বার্থেই শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছিলাম এবং এও লিখেছিলাম এই যুক্তফ্রন্ট যেন আবার অচিরেই  মুক্তফ্রন্টে রূপান্তরিত না হয়। কেননা যুক্তফ্রন্ট হবে, প্রথম যখন ঘোষণাটি বাজারে এলো, সময়টি হিসেবে নিলে বলতেই হয়, এই ফ্রন্টের হিসেবে নির্বাচনই প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য। যদিও ফ্রন্টের নেতারা মুখে বলছেন, যুক্তফ্রন্ট নিয়ে কার্যক্রম দীর্ঘদিন যাবত্ চলছে এটার সাথে নির্বাচন কে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়। দীর্ঘদিনের আলোচনার পরিপ্রেক্ষীতেই আজকে যুক্তফ্রন্ট হতে যাচ্ছে, এখন সামনে নির্বাচন না থাকলেও এই সময়ে যুক্তফ্রন্টের রূপরেখা চলে আসতো। তাহলে ভাবতেই হবে নির্বাচনের সময়কাল ফ্যাক্টর ন! যদি তাই হয়, তাহলে কি বলা যাবে, ২১ আগস্টের যে রায় গত কয়েক দিন পূর্বে হয়ে গেলো, সেটার সাথে নির্বাচনের কোনো সম্পর্কই নাই? সরকারও তো বলছে দীর্ঘদিনের কষ্টার্জিত কার্যক্রমের শেষেই রায় হয়েছে। সামনে নির্বাচন, এটার সাথে রায়ের কোনো সম্পর্কই নাই। যুক্তফ্রন্টের যুক্তি মেনে নিলে সরকারেরটি অযৌক্তক কেন হবে ?

এ কথা স্বীকার করতেই হবে, যুক্তফ্রন্টের নেতারা জ্ঞাণ গাম্ভীর্যের দিক দিয়ে ভীষণ বড় মানের। কোনো যুক্তিতেই তাদের ছোটো করে দেখার সুযোগ নাই। দেশের ভোটের হিসেবে ইনারাই আবার ভীষণ রকমের ছোটো, এটাকেও মেনে নিয়ে কথা বলতে হবে। অবশ্য এই ফ্রন্টের নেতারা এটা স্বীকার করে থাকেন। সত্যি বলতে আমাদের দেশের রাজনীতিতে বড় বড় নেতা আছেন অনেক কিন্তু কেন জানি এদের সমর্থন থাকে না! কেন সমর্থন থাকে না? একটু দেখার চেষ্টা করি। লক্ষ্যণীয় যে, যুক্তফ্রন্ট শুরুর দিকে মূলত আলোচনায় দেশের বীজ্ঞ এবং সবচাইতে সিনিয়র দুইজন রাজনীতিবিদদের নিয়ে। এই দুইজন ব্যক্তিত্ব ডঃ কামাল আর বি চৌধুরী কে সামনে রেখেই ফ্রন্টের সকল কার্যক্রম শুরু। সম্মান রেখেই বলছি, এত সিনিয়রাই যখন রাজনীতিতে কাবাডি খেলেন! কিভাবে একে অপরকে ল্যাং মারবেন, চেপে ধরবেন, উল্টে ফেলবেন বা সাইজে রাখবেন, এই ধরনের কার্যক্রমে লিপ্ত হন! তারপরেও ওনারা জনসমর্থনের আশা করবেন, সেটা কি দেশের জনগণ দিবে? এটা কি আশা করাও ঠিক? অবশ্য বলতেই হয়, আমাদের দেশের জাতীয় খেলা কাবাডি, রাজনীতিতে খেলতেই যখন হবে, সেই অর্থে জাতীয় খেলা কে রাজনীতিবিদরা বেছে নিয়েছেন (সব দল বা জোটেই) এটা অবশ্যই সম্মানজনক নিশ্চয়ই!

গতকালই যুক্তফ্রন্টের সম্মিলিত(!) ঘোষণা পত্র প্রচার হলো! তবে এক অংশকে মুক্ত করে। যে আশংকার কথা অনেক পূর্বেই লিখেছিলাম। ফ্রন্টের ঘোষণা পত্র বাজারে এলো, সাথে টিভির পর্দা সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এলো আবার সেই পুরানো তাবিজ! টেলিফোন কনপ্রেন্সি বা তারষড়যন্র! এখানে একটা কথা বলা দরকার, আমাদের দেশের সাংবাদিক ভাইরা বেশ উচ্চমার্গের বটে! ওনারা তারষড়যন্র বেড় করার ক্ষেত্রে বেশ পারদর্শী বটে! কিন্তু এর বিপরীতে কারা এই তারষড়যন্র বাজারে ছড়ায় তা আজ অব্দি বেড় করতে পারেনি! এই সরকারের আমলে যত তারষড়যন্র বাজারে প্রচার হয়েছে, কারা করেছে? সেটা আগামীতে ভিন্ন কোনো সরকার না আসলে, কখনোই এটা আমাদের সাংবাদিক পারদর্শী ভাইয়েরা বেড় করতে পারবেন না, এটা জোর গলায়ই বলা যায় । কেননা ২০ কোটি টাকার গুণাগুণ তো নৈতিকভাবে থাকতে হবে।
এবারের তারষড়যন্রের স্বীকার মান্নাভাই আর মাহী বি চৌধুরী। মান্না ভাইয়ের অবশ্য ইতিপূর্বেই এই অভিজ্ঞতা আছে। প্রথমে বলতেই হবে, যুক্তফ্রন্টের সম্মিলিত ঘোষণায় যখন এক অংশ মুক্ত থেকেছে, সেই ক্ষেত্রে ফ্রন্টের নেতাদের মাঝে টেলিফোন আলাপ হতেই পারে। প্রশ্ন হলো সেই আলাপ বাজারে প্রচার করাটা কতটুকু যৌক্তিকতার মধ্যে পরে? এর নাম যদি সাংবাদিকতা হয় তাহলে কোনো প্রশ্ন নেই। তবে ভেবে দেখবার বিষয়, বিষয়টি কতটুকু নিম্ন রুচির।

এই তারষড়যন্রে কি কি কথা হয়েছে তা বলার প্রয়োজন নাই, কেননা এটা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই প্রচার হচ্ছে। তবে এখানে এই তারষড়যন্রের একটি লাইন নিয়ে বলি। কথাটি ছিলো, ” রাজনীতিতে এরকমটি হয়”। মানে দাঁড়ায় রাজনীতির সেই পুরানো কাসুন্দি, অলিখিত সংবিধান, ” রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছুই নেই”! যদি তাই হবে, তাহলে তো বলাই যায় ঘোষণা পত্রের সাত দফা বা সম্মিলিত(!) এগুলোও তো সব বলার জন্যেই বলা! কেননা শেষ কথা বলেতো কিছুই নেই।

লেখার মাঝেই বলছিলাম সহচাইতে জ্ঞাণী, বীজ্ঞ জনেরাই এই ফ্রন্টের সাথে। রাজনীতিতে রাজনীতিবিদরা মূলত হলেন আলোর নিশান, পথ প্রদর্শনকারি অথচ আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা বর্তমানে কতটা পথ প্রদর্শনকারি, সেটা একটা প্রশ্ন বটে! অবস্থা পরিপ্রেক্ষীতে বর্তমানে রাজনীতিবিদরা তাদের নিজেদের তাঁবেদারি, চাটুকারিতা বা হঠকারিতার কারণেই মুখের সামনে মোমের আলো জ্বালিয়ে দেখাতে হয়, দেখো আমি আলো! সেই আলোতে জনমানুষের বিশ্বাস রাখতে বললে, ফলাফল যা হবার তাই হবে। বীজ্ঞ,জ্ঞাণী বা মাঠের পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ যেই হোক, যতদিন পর্যন্ত রাজনীতিবিদরা নিজেস্ব আলোয় জনমানুষ কে আলোকিত করতে না পারবেন, ততদিন পর্যন্ত রাজনীতিতে এই কাবাডি, কাবাডি, কাবাডি চলতেই থাকবে। জনগণও সুযোগ পেলে এই কাবাডি খেলায় ল্যাং মেরে দেবে।

43128000_1380807028719293_6513620768297844736_n

বুলবুল তালুকদার
সহকারী সম্পাদক,শুদ্ধস্বর ডটকম

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.