
(প্রথম কিস্তি)
মানুষের রক্তের গ্রুপকে নানা ভাবে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান দুটি পদ্ধতি হল এ-বি-ও (ABO) এবং আর-এইচ (Rh)। অন্য পদ্ধতিগুলো নিতান্তই মেডিকেল সায়েন্স এর ভেতরের বিষয়, এখানে আলোচনার তেমন সুযোগ নেই।
মোটামুটি সবাই জানেন ABO পদ্ধতিতে ব্লাড গ্রুপ হলো চারটি A, B, O, AB; আবার Rh পদ্ধতিতে গ্রুপ হল দুটি, পজিটিভ আর নেগেটিভ। অর্থাৎ একজন ব্যক্তির রক্তের গ্রুপ প্রকাশ করার সময় দুটো পদ্ধতি সমন্বয় করে আমরা বলি A পজিটিভ, A নেগেটিভ; B পজিটিভ B নেগেটিভ; AB পজিটিভ, AB নেগেটিভ এবং O পজিটিভ, O নেগেটিভ।
আমাদের রক্ত এই আটটি গ্রুপের যে কোন একটিতে পড়বে, এর বাইরে কিছু নয়। এর মধ্যে পজিটিভ গ্রুপের সংখ্যা নেগেটিভ এর তুলনায় অনেক বেশি। কাকতলীয় ভাবে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই যদি নেগেটিভ গ্রুপের হয়ে থাকেন তাহলে কোন সমস্যা নেই। যদি স্বামী পজিটিভ আর স্ত্রী নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত ধারণ করেন তখন তাদের অনাগত সন্তানের ব্যাপারে একটু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
আজ এ বিষয়টি নিয়েই সংক্ষেপে, সহজ আলোচনা করতে চাই।
পজিটিভ, নেগেটিভ বলতে কি বোঝায়?
পজিটিভ রক্ত বলতে বোঝানো হয় রক্তের লোহিত কণিকায় একটি বিশেষ প্রোটিনের (D) উপস্থিতি। এই বিশেষ প্রোটিন, D এন্টিজেন যার আছে তিনি পজিটিভ, অপর পক্ষে যার নেই তিনি নেগেটিভ। এই থাকা না থাকার মধ্যে দোষের কিছু নেই, কিছু করণয়ীও নেই, এটা শুধুই জন্মগতভাবে প্রাপ্ত একটি বিষয়।
স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ।
স্বামী-স্ত্রী দুজনের রক্তের গ্রুপই যদি পজিটিভ হয়, যেটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে, চিন্তার কিছু নেই। সন্তানের গ্রুপ পজিটিভ, নেগেটিভ যে কোনটিই হতে পারে।
যদি ঘটনাক্রমে এমন হয় স্বামী-স্ত্রী দুজনের রক্তের গ্রুপই নেগেটিভ, ABO সিস্টেমে যাই হোক না কেন, তাহলে তাদের সন্তান নেগাটিভই হবে, অন্য কিছু নয়। এই ক্ষেত্রেও নেগেটিভ-পজিটিভ বিষয় নিয়ে ভাবনার কিছু নেই।
আবার যদি এমন হয় স্বামীর রক্তের গ্রুপ নেগাটিভ কিন্তু স্ত্রী পজিটিভ, এটিও কোন সমস্যা নয়।
তার মানে বেশিরভাগ পরিস্থিতিই আসলে উদ্বেগের কোন কারণ নয়। তাহলে সমস্যা কোথায়?
হ্যাঁ, স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপের একটি কম্বিনেশনই কেবল কিছুটা চিন্তার বিষয়। আসলে চিন্তারও তেমন কিছু নয়, কেবল প্রয়োজন কিছু সতর্কতা, সময়মত কিছু ব্যবস্থা।
সেই কম্বিনেশন টা কি?
সেটি হল, স্বামীর গ্রুপ পজিটিভ আর স্ত্রীর গ্রুপ যদি হয় নেগেটিভ।
এমন পরিস্থিতিতে গর্ভের সন্তানটি কিন্তু পজিটিভ/নেগেটিভ যে কোনটি হতে পারে। যদি দৈবক্রমে সন্তান নেগাটিভ গ্রুপের হয়ে যায় তাহলে কিন্তু বেঁচে গেলেন, এ বিষয়ে চিন্তার কিছু থাকলো না।
কিন্তু সন্তান যদি পজিটিভ হয় তখনই, কেবলমাত্র তখনই কিছু বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক।
লেখক: ডাঃ অর্জুন দে,চিকিৎসক ও লেখক।