বাংলা ভিশনের ইলেকশন এক্সপ্রেস অনুষ্ঠানে মান্না, আখতার,দুজনই এখন দুই মেরুর

বাংলা ভিশন টেলিভিশনের ইলেকশন এক্সপ্রেস অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন সত্তর দশকের দুই কিংবদন্তী ছাত্রনেতা মাহামুদুর রহমান মান্না ,এবং আক্তারুজ্জামান। মাহামুদুর রহমান মান্না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারন সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ ডাকসুর দুইবার ভি পি এবং বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের অনুসারী ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক এবং সভাপতি ছিলেন ।আক্তারুজ্জামান স্বাধীনতা পরবর্তী ঢাকার জগন্নাথ কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারন সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ ডাকসুর দুইবার সাধারন সম্পাদক একবার ভি পি ছিলেন, তিনিও ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক এবং সভাপতি ছিলেন ।
মানা ভাইর সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ হয় আমি তার দল নাগরিক ঐক্যের সাথে যুক্ত আছি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করেছেন আমাকে , যদিও আমি দেশের বাইরে থাকি । আখতার ভাইর সাথে মাঝে মধ্যে যোগাযোগ হয় , আজ যখন বাংলা ভিশন টিভি র টক শো হচ্ছিল , আমি তা মনোযোগ দিয়ে দেখছিলাম । টক শো শেষে আখতার ভাইকে ফোন করলাম, তখন তিনি সবে মাত্র অনুষ্ঠান শেষ করে বের হয়েছেন । আক্তারুজ্জামান এখন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য এবং গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একসময় মান্না আখতার জুটি খুব পপুলার ছিল, এখনও দেয়ালের লেখা খোঁজ করলে তাদের নাম পাওয়া যাবে । সেই সময় যারা ছাত্র ছিলেন এখন তারা সমাজে অনেকেই প্রতিষ্ঠিত , তাদের কর্মীরা মন্ত্রী সভার পদ সহ বড় বড় রাষ্ট্রীয় পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন , এখন আছেন বা অবসর নিয়েছেন কিন্তু এই দুজন এখনও সক্রিয় রাজনীতিতে আছেন , মান্না ভাই সার্বক্ষণিক রাজনীতির সাথে যুক্ত ,তার নিজেরই একটা দল আছে , যার নাম নাগরিক ঐক্য , রাজনৈতিক দল হিসেবে নাগরিক ঐক্য বড় না হলেও তার কারনে দেশের রাজনীতিতে এই দল একটি স্থান করে নিয়েছে ।
এই দুই জনের সাথে আমার সম্পর্কের বয়স বাংলাদেশের জন্মের সমান ,আমি আমার কিশোর জীবন থেকে এই দুইজনের সান্নিধ্য পেয়েছি , দেশ ছেড়েছি ৪০ বছরের বেশী , কিন্তু কিন্তু আমার সাথে এই দুজনের সবসময় যোগাযোগ ছিল, তারা যখন দুজনই একই সময়ে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কিমিটির সাংগঠনিক ছিলেন তখনও , তখন আমি রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলাম , তার পরও যোগাযোগ ছিন্ন হয়নি , আজ জার্মান সময় দুপুর আড়াইটা এবং বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় তারা দুজনই বাংলা ভিশনের টক শো বস্লেন, কথা বললেন বাংলাদেশের রাজনিতি নিয়ে, স্বাভাবিক ভাবেই তাদের কথা বার্তা বিপরীতমুখী হবে তারা রাজনীতিতে এখন ভিন্ন মেরুর মানুষ, আমার আবেগী মন ফিরে গিয়েছিলো সেই সত্তর দশকে যখন আমি তাদের নেতৃত্বে ছাত্র রাজনীতিতে ছিলাম , সেই সময়ে আমি কল্পনাও করতে পারিনি আমাদের নেতারা একসময়ে একজন আরেকজনের বিপরীতমুখী অবস্থানে থাকবেন ৪০ বছর পর, কিন্তু রাজনীতি এমনই , রাজনীতিতে কোন চিরস্থায়ী রাজনৈতিক সম্পর্ক থাকে না , তবুও বন্ধুত্ব থাকে , মান্না ভাই আজ আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্পর্কেও বললেন , তিনি বললেন ওবায়দুল কাদের ও তার বন্ধু মানুষ , ভিন্ন রাজনীতি করলেও ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যায় নি , মান্না ভাই জেল থেকে বের হওয়ার পর ওবায়দুল কাদের গিয়েছিলেন ফুল নিয়ে তাকে দেখতে বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে , এখনও ফোনে মাঝে মাঝে তাদের মধ্যে কথা বার্তা হয় তা তিনি টেলিভিশনের শোতেই বললেন । আমার এই লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে , রাজনীতিটা ব্যক্তিগত ভাবে না নিয়ে যদি প্রতিপক্ষের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখা যায় তা হলে অনেক রাজনৈতিক সমস্যারও সমাধান করা যায় । তাই রাজনীতিটা রাজনীতির জায়গায় রেখে ব্যক্তিগত সম্পর্কটার প্রতিও একটু যত্নবান হলে সবার জন্যই মঙ্গলজনক ।
হাবিব বাবুল
প্রধান সম্পাদক,শুদ্ধস্বর ডট কম ।