
মামলা। গ্রেপ্তার। ব্যক্তিগত আক্রমণ। কথিত কথোপকথন ফাঁস। নবগঠিত বিরোধী জোট ঐক্যফ্রন্টকে চাপে রাখতে অবলম্বন করা হচ্ছে নানা কৌশল। সরকারি দলের পক্ষ থেকে শুরুতে এ জোটকে গুরুত্ব না দেয়ার কথা বলা হয়। স্বাগতও জানানো হয়। এখন অবশ্য প্রতিদিনই এ জোটের নেতাদের সমালোচনা করছেন সরকারি দলের নেতারা।
গতকাল সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাফ জানিয়ে দেন, ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার একটিও মানা হবে না।
গত কয়েকদিনে ঐক্যফ্রন্টের তিন গুরুত্বপূর্ণ নেতার ঠাঁই হয়েছে কারাগারে। সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে নিয়ে মানহানিকর মন্তব্যের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে। মানহানির মামলায় অনেকটা নজিরবিহীনভাবে কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাকে। এখন অবশ্য প্রতিদিনই তার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। তার গ্রেপ্তার নিয়ে এরই মধ্যে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। কোন গ্রাউন্ডকে মইনুল হোসেনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে তা নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে কৈফিয়ত দাবি করেছেন তিনি। হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, এ নিয়ে একদিন বিচারের মুখোমুখি হতে হবে আইনমন্ত্রীকে। ঐক্যফ্রন্টের আরেক উদ্যোক্তা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগে একাধিক মামলা করা হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার এক দিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করেছেন আদালত। ফ্রন্টের আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা মনিরুল হক চৌধুরীরও জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঐক্যফ্রন্ট গঠনের নেপথ্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, মনিরুল হক চৌধুরী- তিন জনেরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও চট্টগ্রাম এবং সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন। গ্রেপ্তার অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে। ফ্রন্টের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের মধ্যে দুই-এক জন ছাড়া সবার বিরুদ্ধেই একাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তারা আদালতে নিয়মিত হাজিরাও দিয়ে থাকেন। এই মামলাগুলোর কার্যক্রম নিয়ে এরই মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। ফ্রন্টের অনেক নেতাই মনে করেন, ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচনে চায় না সরকারি দল। এজন্য নানারকম চাপ তৈরি করা হচ্ছে যেন ফ্রন্ট নির্বাচনের ময়দান ছেড়ে দেয়। ফ্রন্টের কয়েকজন নেতার কথিত ফোনালাপ ফাঁস নিয়েও নানারকম বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ওদিকে, সরকারি দলের প্রায় সব পর্যায়ের নেতারাই একযোগে ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সমালোচনায় মুখর। তাদের সমালোচনার প্রধান লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে ড. কামাল হোসেনকে। ফ্রন্টের নেতারা মনে করেন, এটাও পরিকল্পিত।
এদিকে, তফসিল ঘোষণাকে সামনে রেখে পরবর্তী কৌশল নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা চলছে ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে। সরকারি দলের নেতারা এরই মধ্যে এ বার্তা পরিষ্কার করেছেন, ফ্রন্টের কোনো দাবিই মানা হবে না। এ অবস্থায় দিন দশেকের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার আগে ন্যূনতম নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে চায় ফ্রন্ট। এজন্য সব বিভাগীয় শহরেই সমাবেশ করা হবে। সিলেটের পর চট্টগ্রামে সমাবেশ হচ্ছে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগীয় শহরেও সমাবেশ হবে। সর্বশেষ ঢাকার সমাবেশ থেকে আন্দোলন নতুন মোড় নিতে পারে। যদিও ঢাকায় সমাবেশের তারিখ এখনো ঘোষিত হয়নি। ফ্রন্টের বেশিরভাগ নেতাই নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে। আওয়ামী লীগকে আর কোনো ওয়াক ওভার দিতে চান না তারা। তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে অংশ নেয়া সহজ হবে না।