
গত ১৬ অক্টোবর রাতে একাত্তর টেলিভিশনের একাত্তর জার্নাল নামের সংবাদভিত্তিক এক টকশোতে নারী সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির প্রতি অশোভন আচরণ ও কটূক্তি করেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন । এজন্য এখনো তিনি প্রকাশ্যে ক্ষমা চাননি। এমনকি এখন পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে তিনি অনুতপ্ত এমন কোনো মনোভাবও প্রকাশ্যে দেখাননি। বরং সম্প্রতি কয়েকটি বিষয়ের মাধ্যমে তিনি নিজের এমন বিকৃত আচরণকেই সঠিক হিসেবে প্রমাণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
একাত্তর টেলিভিশনের টকশোতে মাসুদা ভাট্টি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি কি জামায়াতের প্রতিনিধি হয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে অংশগ্রহণ করেছেন? এর উত্তরেই মাসুদা ভাট্টিকে মইনুল হোসেন বলেন, ‘আপনি চরিত্রহীন বলে মনে করতে চাই।’ অবশ্য মাসুদা ভাট্টির প্রশ্ন ছিল প্রাসঙ্গিক, কারণ এর মাত্র দুদিন আগে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের একটি অনুষ্ঠানে যোগদান করেছিলেন এবং সেখানে বক্তব্য প্রদান করেছিলেন। বলেছিলেন, তাঁর সঙ্গে শিবিরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। ব্যারিস্টার মইনুলের ওই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুঁজলে এখনো পাওয়া যায়।
মাসুদা ভাট্টিকে লাইভ টকশোতে চরিত্রহীন বলার পর ক্ষমা না চেয়ে বরং নিউ নেশন নামের একটি পত্রিকার প্রকাশক হিসেবে এক বিবৃতি দিয়েছেন মইনুল হোসেন। সেই বিবৃতিতে তিনি এই ঘটনার পূর্বাপর যে বিশ্লেষণ করেছেন, তা এক প্রকারের আত্মপক্ষ সমর্থন। মইনুল হোসেন বিবৃতিতে বলেছেন, ফেসবুকসহ নানা রকম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি ঐ নারী সংবাদ কর্মী সম্পর্কে অনেক খারাপ তথ্য পেয়েছেন। এখন প্রশ্ন হলো, খারাপ তথ্য পেলেই কি একজন সংবাদ কর্মীকে, একজন নারীকে কুৎসিত অরুচিকর কথা প্রকাশ্যে বলা যায়। অবশ্য ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন সবসময় এধরনের অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ এবং নোংরা ভাষায় কথা বলার জন্য প্রসিদ্ধ।
নারী সাংবাদিককে নিয়ে কটূক্তির ঘটনার পর সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। মইনুল হোসেন ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে ঐ নারী সাংবাদিকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তবে, যেহেতু ঘটনাটি প্রকাশ্যে একটি লাইভ টকশোতে ঘটেছিল, সেজন্য বিভিন্ন মহল থেকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার জন্য সোচ্চার দাবি উঠেছে। এমন সোচ্চার দাবি করলেও দেখা যাচ্ছে যে, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে সমর্থন যোগাচ্ছে ছাত্রশিবির ও জামাত মতাবলম্বীদের সোশ্যাল মিডিয়াতে সক্রিয় গ্রুপগুলো, এর মধ্যে ফেসবুক গ্রুপ বাঁশের কেল্লার নাম উল্লেখযোগ্য। জামাত-শিবিরের সোশ্যাল গ্রুপগুলোর ভাষ্য, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন সঠিক কথা বলেছিলেন। জামাত শিবিরের এমন ভাষ্যের মধ্যে দিয়েই প্রমাণ হলো, ব্যারিস্টার মইনুলকে জামাতের প্রতিনিধি বলার যৌক্তিকতা।
নারী সাংবাদিকের প্রতি কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের জন্য ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে ক্ষমা চাইতে বলেছিলেন ড. কামাল। কিন্তু মইনুল হোসেন ড. কামালকে বলেছেন, তিনি ক্ষমা চাইবেন না। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এই বিষয়টা নিয়ে বিব্রতকর ও অস্বস্তিকর অবস্থাতে পরলেও অন্যকেউ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে বলার সাহস পর্যন্ত পাচ্ছেন না। এদিকে মইনুল হোসেনের সমর্থক গোষ্ঠি জামায়াত-শিবির এই ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার তৎপরতা চালাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন হলো সেই লোক যিনি ১৯৭৪ সালে বাকশাল হওয়ার প্রতিবাদে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর খুনি খন্দকার মোশতাক রাজনৈতিক দল খোলেন। মইনুল হোসেন সেই খুনিদের রাজনৈতিক দলের সদস্য হয়েছিলেন। বাংলাদেশের যতগুলো অশুভ রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়, প্রতিটি পরিবর্তনে ব্যারিস্টার মইনুলের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সেই মইনুল হোসেনের কাছ থেকে নারীদের প্রতি কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের চেয়ে ভালো কিছু কী আশা করা যেতে পারে?