দ্বিপক্ষীয় সিরিজ যদি বাদ দেন, বাংলাদেশ কখনো ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালও জেতেনি। বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালের কথা না হয় বাদই থাকল। এই শূন্যতা রীতিমতো হাহাকারে পরিণত। ফাইনাল জেতার সুযোগ তারা পেয়েছিল গত জানুয়ারিতে মিরপুরে, পেয়েছিল গত মার্চে কলম্বোয়। বাংলাদেশ আরও একবার ফাইনাল উঠেছে এবার দুবাইয়ে। ফাইনাল হারের দীর্ঘ দিন ধরে বয়ে বেড়ানো যন্ত্রণা বাংলাদেশ কী এবার দূর করতে পারবে? ক্ষতে প্রলেপ দিতে?

শুধু বাংলাদেশেরই নয়, আফসোসটা দূর করার মোক্ষম সুযোগ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজারও। অবশ্য এ কথায় অধিনায়কের আপত্তি আছে। নিজের ক্যারিয়ারকে একটা ট্রফি দিয়ে মাপতে চান না, আজ ফাইনাল-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে সেটি পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন মাশরাফি, ‘নিজেকে অত সস্তা ভাবি না, একটা ট্রফি দিয়ে নিজেকে বিচার করি না। ক্রিকেট একটা ট্রফির জন্য খেলি না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একটা শিরোপা হয়তো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো একদিন হয়তো শিরোপা জিতবে বাংলাদেশ। এ কারণেই বললাম, তরুণ প্রজন্ম যারা ক্রিকেটে আসতে চাচ্ছে বা এখনো দলে আছে বা বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলছে তারা হয়তো অনেক উজ্জীবিত হবে। এ কারণে একটা ট্রফি দরকার। সেটা কাল না হলে বড় সমস্যা, তা নয়। ব্যক্তি মাশরাফিকে ট্রফি দিয়ে বিচার করবেন কি না সেটা আপনার ব্যাপার, আমি নিজেকে এত সস্তা ভাবি না।’

তাই বলে মাশরাফি কাল শিরোপা জয়ের স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নামবেন না? অবশ্যই নামবেন। তবে শিরোপার চিন্তায় বিভোর হয়ে অতিরিক্ত চাপে দল যেন ভেঙে না পড়ে, সে কারণেই হয়তো মাশরাফি জানিয়ে দিয়েছেন ট্রফি জয়ের প্রত্যাশাটা একটু কমিয়েই রাখতে চান। কিন্তু ফাইনালে ভারতকে হারানোর উপায় কী? টি-টোয়েন্টি সংস্করণে হওয়া গত এশিয়া কাপের ফাইনাল তো আছেই। বাংলাদেশ ভারতকে একটি ম্যাচেও হারাতে পারেনি গত নিদাহাস ট্রফিতে। এবার এশিয়া কাপের সুপার ফোরেও বড় ব্যবধানে রোহিত শর্মাদের কাছে হেরেছেন মাশরাফিরা। কাল দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ কী সূত্র মেনে এগোবে? অধিনায়ক বললেন, ‘জয়ের উপায় মাঠেই তৈরি হয়। সেটা একটা ভালো ইনিংস হতে পারে, ভালো ফিল্ডিং হতে পারে। এটার চেয়ে সহজ উপায় তো নেই। এটার জন্য দরকার মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা, শতভাগ ফিট থাকা। শারীরিক ধকলটা যে কাটিয়ে ওঠা দরকার ছিল সেটির কথা ভেবে এখন আর লাভ নাই। আমরা এখন মানসিকভাবে শতভাগ প্রস্তুত থাকার চেষ্টা করছি। আর সত্যি বলতে ভালো কিছু ইনিংসই পার্থক্য গড়ে দেয়। যেমন (গত ম্যাচে) মুশফিক-মিঠুনের জুটিটা। আশা করি এই জুটি এত পরে না হয়ে আরও আগে হবে। এ রকম কিছু হলে সম্ভব (ভারতকে হারানো)।’

এবারের এশিয়া কাপটা একটু অন্যভাবে ধরা দিচ্ছে বাংলাদেশের কাছে। কারণও আছে। গত তিনবারই তো টুর্নামেন্টটা হয়েছে বাংলাদেশে। এবার হচ্ছে আরব আমিরাতের কঠিন কন্ডিশনে। কঠিন কন্ডিশন জয় করেই বাংলাদেশ উঠেছে ফাইনালে। আর ফাইনালে ওঠার পথে কত ঘটনা! তামিম ইকবাল কবজি ভাঙলেন, সে ম্যাচেই নেমে পড়লেন হাতে স্লিং ঝুলিয়ে। এক হাতে ব্যাটিং করলেন। মুশফিকুর রহিম টানা ভালো খেলে চলেন পাঁজরের চোট নিয়ে। সাকিব-তামিম না থাকার পরও দল ভেঙে পড়ছে না। মাশরাফি মনে করেন, এই এশিয়া কাপটা অন্যরকম লাগছে তাঁর কাছে, ‘প্রতি ম্যাচের আলাদা গুরুত্ব থাকে। ত্রিদেশীয় সিরিজে যে ফাইনাল খেলেছি, ২০১২ সালে যে ফাইনাল খেলেছি বা গত এশিয়া কাপের যে ফাইনাল খেলেছি, সবই এক একটা পরিস্থিতি পেরিয়ে খেলেছি। এটাও ধরেন, আরও কঠিন অবস্থা ছিল। যেহেতু একের পর এক খেলোয়াড় হারাচ্ছি। সন্দেহ ছিল মুশফিক খেলবে কিনা, ওভাবেই সে খেলছে এবং ভালো করছে। আসলেই ওদের কাছে অনেক শেখার আছে। তামিম যখন ভাঙা হাত নিয়ে মাঠে নামে, তখনই এশিয়া কাপ জিতে গেছি। এবারের এশিয়া কাপের গুরুত্ব একটু বেশি।’  সুত্র:  প্রথম  আলো

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.