
OLYMPUS DIGITAL CAMERA
তৃতীয় শক্তি নিয়ে দেশে এখন অনেক কথা হচ্ছে । মূলত কথাটি শুরু হয়েছে যুক্তফ্রন্টকে ঘিরেই । যদিও অনেকেই বলছেন , যুক্তফ্রন্ট নিয়ে এত ভাবনার কিছুই নাই । এদের না আছে নিজেস্ব কোনো ক্ষমতা , না আছে কোনো ভোটের পার্সেন্ট । ঘুরেফিরে এদের কে কারো ঘাড়ে সাওয়ার হতে হবে ক্ষমতায় যেতে হলে । প্রশ্ন হলো এই ফ্রন্ট যেহেতু নির্বাচনের আগ মূহুর্তে গঠন হয়েছে , তাহলে কি কেবলি ক্ষমতার জন্য না দেশ নিয়ে ভিন্ন চিন্তাভাবনা আছে ? যদিও ফ্রন্ট থেকে তেমনভাবে কোনো জোড়ালো বক্তব্য এখন অব্দি আসেনি । যতটুকু পাওয়া যাচ্ছে তা কেবলমাত্র শ্রদ্ধেয় মান্না ভাইয়ের বক্তব্যের মাঝেই বিরাজ করছে । মান্না ভাই যদিও বেশ জোরেসোরেই আওয়াজ তুলছেন নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কিন্তু লক্ষ্যণীয় যে মান্না ভাইয়ের বক্তব্যেতেও এখন অব্দি বিএনপির সাথে জোট গঠনের ক্ষেত্রে জামাত নামক দলটির বিষয়ে কি হবে তা কোথাও স্পষ্ট হয়নি । একমাত্র মান্না ভাইয়ের দৃরচেতা বক্তব্যে ছাড়া অন্যান্যদের বক্তব্যের মাঝে কেমনজানি নির্বাচনটাই মুখ্য বিষয় । অন্যদিকে মাননীয় ডঃ কামাল সাহেবতো কয়েকদিন পূর্বে টিভির পর্দায় স্পষ্ট করেই বললেন ( যমুনা টিভি) জোট হবে দলগুলোর সাথে । এমনকি সেখানে এরশাদ , বিকল্প ধারার দ্বিতীয় প্রধান মেজর মান্নান ( জিনি পাকিস্তান আর্মির হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন) বা জামাত সে কথাগুলো খুবই চমত্কার ভাবেই এরিয়ে গেলেন । উনি বিজ্ঞ মানুষ চমত্কারভাবে এরিয়ে গেলেও সাধারণ জনগণ কিন্তু সব কিছুই লক্ষ্য করেন এবং ভিন্ন কিছু আশা করে ।
অন্যদিকে বিএনপি এত বড় দল হয়েও কেমনজানি ছন্নছাড়া অবস্থা ! বলছিলাম যুক্তফ্রন্টকে কারো ঘাড়ে সাওয়ার হতে হবে ক্ষমতায় যেতে হলে । অথচ বাস্তবতা হচ্ছে এই ফ্রন্ট গঠনের পরে মনে হচ্ছে বিএনপিই সবচাইতে ব্যস্ত এদের ঘাড়ে সাওয়ার হওয়ার জন্য । দূর্বলতা কাকে বলে ? বিএনপি থেকে প্রতিনিয়তই বলা হচ্ছে প্রয়োজনে বড় ছাড় দিতে রাজি এবং দেবে বলেও বাজারে প্রচার আছে । এই বড় ছাড় যে কি তা বুঝা বড়ই মুশকিল । সেটা কি জামাত না কেবল সিট ভাগাভাগি ? এলডিপির মাননীয় কর্ণেল ওলি আহমেদ সাহেবের কথায় ফ্রন্ট নাকি ১৫০ আসন চাচ্ছে , আর ওলি সাহেব নিজেও ৩০ আসনের দাবিদার! বিএনপির আবার নিজস্ব ২০ দলিও জোট , ওলি সাহেব কে বাদ দিয়ে থাকে আরো ১৮ দল । এই ১৮ দলের জন্য যদি আরো ২০ আসন ছাড়া লাগে বাকি থাকে আর মাত্র ১০০ আসন । ধারনা করি বিএনপি যদি সব কিছু বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের কাছে ১০০ আসন চায় তাহলে তো আর কোনো ভেজালই থাকে না । কেননা আওয়ামী লীগ যে করেই হোক ক্ষমতায় আসতে চায় । ১০০ আসন যদি বিএনপি দাবি করে আওয়ামী লীগতো হেসে খেলেই বিএনপিকে দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চাইবে । গ্রাম বাংলায় একটা কথা আছে ” কুশা নৌকায় পাটের আঁটির বহর যায় না ” ।
তাই বলছিলাম যে , তৃতীয় শক্তি ক্ষমতা না নতুন ভাবধারা ? যদি কেবলমাত্র নির্বাচনই একমাত্র উদ্দেশ্য হয় , সেটাও পরিষ্কার করে বলা ভালো । আর যদি সত্যিকারের ভবিষ্যত বাংলাদেশের গণতন্ত্র, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ , সুষ্ঠু নির্বাচন ,সুশাসন এবং সর্বোপরি দেশের কল্যাণ তৃতীয় শক্তির ভাবধারা হয় , তাহলে সেইদিকে গচ্ছিত চিন্তাভাবনা নিয়েই অগ্রসর হওয়া বাঞ্ছনীয় ।
লক্ষ্যণীয় যে , বাম মোর্চার একটি ফ্রন্ট আছে । তাদের কে যতই ছোটো করে দেখা হোক বা অবহেলা করা হোক , তাদের কিন্তু দেশের ভবিষ্যত নিয়ে স্পষ্ট লক্ষ্য এবং বক্তব্য আছে । কার্যকারিতার দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে , তার একমাত্র কারণ দেশের পুঁজিবাদী চরিত্রের নোংরা রাজনৈতিক চর্চা । বামেরা যা নিয়ে সর্বক্ষণ চিল্লাচ্ছে , সেটা কিন্তু রাজনীতিতে টাকার খেলা । একবার ভাবুন যদি এই টাকার খেলা না চলতো , তাহলে বামদেরকেও গণনার বাহিরে রাখা যেতো না বলেই মনে করি । এখানে বলতেই হয় , রাজনীতিতে এখন সবাই কৃষ্ণপক্ষ । লক্ষ্যণীয় যে দেশের পবিত্র সংসদে নাকি প্রায় ৭০% ব্যবসায়ী! পুঁজিবাদীর আর নমুনা লাগে কি ?
বাজারে শোনা যাচ্ছে মাননীয় কাদের সিদ্দিকী সাহেব অচিরেই আওয়ামী লীগের জোটে যোগদান করবেন । কিছুদিন পূর্বেই কিন্তু কাদের সিদ্দিকী সাহেব , ডঃ কামাল হোসেন সাহেব এবং বি চৌধুরী সাহেবদের একটি জোট বাজারে ছিলো । হঠাত্ কেন কাদের সিদ্দিকী সাহেব এই ফ্রন্টের সাথে নাই ? প্রশ্নটি খুবই স্পষ্ট । শোনা যাচ্ছে কাদের সিদ্দিকী সাহেব কোনো অবস্থাতেই জামাত যেখানে আছে সেখানে থাকবেন না , শ্রদ্ধা এবং সালাম । কাদের সিদ্দিকী সাহেবের এই সিদ্ধান্ত থেকেই অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যায় ফ্রন্টের ভবিষ্যত কোন দিকে মোড় নিতে পারে । এখন সামনে দেখার বিষয় বিএনপির বড় ছাড় কি জামাত না সিট ? এবং সেই ছাড়ের কোনটা যুক্তফ্রন্ট গ্রহণ করে ? এই গ্রহণ বা অগ্রহন থেকেই অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে , সেই অব্দি আম জনতাকে অবশ্য আরো কিছুদিন অপেক্ষাই করতে হবে ।
লেখার শেষে ভোটের একটা হিসেব দেখার চেষ্টা করি । জামাতের ৫ % থেকে ৭ % একটা ভোট ব্যাংক নিশ্চিত আছে । অন্যদিকে সুইং ভোটের হিসেবটাও আগের চেয়ে একটু ভিন্ন রকমই মনে হয় । কোনো জরিপ নাই , তারপরেও শোনা যায় এই সুইং( দোদুল্যমান) ভোটের বর্তমান পরিমাণ ২০% থেকে ২৫% এর কাছাকাছি আছে । আবার বর্তমানে তরুণ বা একেবারেই নতুন ভোটারের সংখ্যাও নাকি কোটির উপরে । একটা কথা নিশ্চিত বলা যায় এই সুইং ভোট আর নতুনদের ভোট , জামাত যাদের সাথে আছে তাদের দিকে ঝোঁকার কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না । তাছাড়া তরুণরা তো ভীষণ সচেতন বলেই মনে হয় । সুতরাং তরুণদের ভোট জামাতের সাথে যাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ । বিএনপির মত বড় দল বিষয়টি সঠিক চিন্তায় নিতে পারলে লাভ বিহীন ক্ষতির সম্ভাবনা কমই হওয়ার কথা । মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পক্ষের দাবিদার দল , যে দলে মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতও কম নয় , রাজনীতির ছলচাতুরি ছেড়ে এরকম দলের সময়ের সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোটাও সময়ের দাবী বলেই অনুমেয় হয় । সামনে কি হবে তা সময়েই সব বুঝা যাবে । তবে আমরা আম জনতা সব সময়ই চাই দেশে রাজনীতির একটা সুষ্ঠুধারা আসুক । দেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৭ বছর তো পেরিয়ে গেল , আর কত সময় লাগবে যুদ্ধ জয়ী স্বাধীন দেশের একটা নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক ধারা আসতে ? কেননা সব শেষে গণতন্ত্রই যে একটি দেশের মূল ভিত্তি ।
বুলবুল তালুকদার
সহকারী সম্পাদক ,শুদ্ধস্বর ডটকম