জানিনা আজকের লেখাটি কে কিভাবে নিবেন । তবে যা লিখতে চাচ্ছি , তা কয়েকদিন যাবত্ মনে আঁটোসাঁটো হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে , তাই গণতান্ত্রিক অধিকার বলেই প্রকাশ করে দিচ্ছি । যার যার সুবিধে অসুবিধে অনুসারে গ্রহণ বা অগ্রহণ করতে পারেন । অবশ্য আমাদের দেশে যে কোনো মতামত যার পক্ষে যায়, তারা ধন্য ধন্য বলেন , আর বিপক্ষে গেলে তো কথাই নাই ! সরাসরি গালাগালি, এমনকি কত টাকায় দালালিতে জোগাল দেওয়া হচ্ছে সে প্রশ্নও উঠা অস্বাভাবিক নয় । এরকমটি হয় তার মূলে হলো , রাজনৈতিক দর্শনে জেনে বুঝে বা না বুঝে নিজেকে বিকিয়ে দেওয়ার কারণে অথবা দেশে যে এক নেত্রীর এক দেশ স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় তার থেকে বেশি গণতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা আমরা করতে পারি না বলে । অন্যভাবে বলা যায় , মুখে যতই বলি না কেন  দেশ সবার আগে, আমাদের দেশের বাস্তবতা হচ্ছে নিজের পকেট আগে , তারপরে দল এবং যদি কিছু অবশিষ্ট ( উচ্ছিষ্ট) থাকে তাহলে দেশ । উদাহরণ চাইলে অনেক দেওয়া যাবে । ছোট্ট করে একটি উদহারণ বলি , লক্ষ্য করলে দেখবেন দেশের ক্ষমতাসীন বা যে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাদের ( উপর থেকে নিচে ) সন্তানেরা প্রায় সকলেই বিদেশে পড়াশোনায় ব্যস্ত এবং সাথে প্রায় প্রত্যেকেরই বিদেশে বসবাসের বন্দবস্থ করা আছে । এই একটি উদহারণ থেকেই বুঝতে অসুবিধে হয় না যে , দেশ বা দল থেকে নিজের আখের আগে । মজার বিষয় হলো সন্তানদের বিদেশ মুখি করা , পূর্বে বামদের মাঝে ছিলো না বললেই চলে । কোনো পরিসংখ্যান দিতে পারবো না , তবে খোঁজ নিলে দেখা যাবে সংখ্যাটি এখন কত বড় । লক্ষ্যণীয় যে ৮০ দশকে দেশে মোটের উপর ৭/৮ টির মতন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো , প্রাইভেট বলতে দুই একটা ইংরেজি বিদ্যালয় ছাড়া আর কিছুই ছিলো না । অথচ সেই সময়েও রাজনীতিবিদদের সন্তানেরা এত বিদেশ মুখি ছিলো না । কিন্তু বর্তমানে সেই অবস্থা পরিবর্তনের পরেও তারা সবাই বিদেশ মুখি , কিন্তু কেন ?   সত্যি বলতে আমাদের নোংরা রাজনীতিই এর জন্য দায়ী বলে মনে হয় । এই নোংরা রাজনীতির কারণেই কেউ আর নিজেদের সন্তানদের , এমনকি গিন্নিদের দেশে রাখতে আর সাহস পান না বলেই মনে হয় । ধারণা করি এটা জীবনের নিশ্চয়তার ভয়ভীতি থেকেই হয় । এবার বুঝুন , যারা আমাদেরকে পরিচালনা করেন , তারা তাদের কর্মের জন্যে এতটাই ভীতু থাকেন , তাহলে আমাদের মত সাধারন জনতার কি হবে ?

আজকেই একটি খবর দেখলাম বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার জনাব পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী দক্ষিণ এশিয়া ভিত্তিক একটি পত্রিকায় লিখেছেন ” নিরেপেক্ষ নির্বাচন হলে আ লীগ লজ্জাজনক সংখ্যালঘুতে পরিণত হবে “  ভয়াবহ কথা । কেননা আ লীগ যদি সংখ্যালঘু দলে পরিণত হয় তাহলে এদেশের ভবিষ্যতে বিপদ আছে । যিনি বলেছেন তিনি আবার ভারতের কূটনৈতিক বলে কথা । তিনি কেন এই কথা বলেছেন তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন । আমরা আম জনতা বিষয়টি দেশের বর্তমান অবস্থা দেখে বুঝার চেষ্টা করি ।  সেটা কি অবস্থা তার কোনো পরিসংখ্যান নাই তবে , বাতাসে তো অনেক কিছুই উড়ে বেড়ায় । অবশ্য এদিক সেদিক নানান পরিসংখ্যান পাওয়াও যায়  বটে ! নানান সংস্থার পরিসংখ্যান যখন যার পক্ষে যায়  , কেবলমাত্র তারা বেতিরেকে অন্য কেউ তা গ্রহণ  করেন না । এমনকি পরিসংখ্যান নিয়ে এমনভাবে প্রশ্ন তোলা হয় , কেবলমাত্র লবিং করিয়ে এই সকল পরিসংখ্যান তৈরি করা হয় ।  বিদেশী সংস্থার পরিসংখ্যান ক্ষমতাসীনদের বিপরীতে গেলেই সেখানে লবিং এর গন্ধ পান , তাহলে তো বলাই যায় যে পরিসংখ্যান সরকারের পক্ষে যায়  সেটাতো সরকার দ্বারাও লবিং হতে পারে বা বলা যায় সরকার আরো সহজভাবে সেটা করতে পারে । কেননা ক্ষমতায় থাকলে লবিং করাটা একটু সহজসাধ্য বিষয় বটে । যাকগে কোন বিদেশী সংস্থার কি কি পরিসংখ্যান এবং কার পক্ষে বিপক্ষে তা আমার বিষয় নয়। আমার বিষয় বর্তমান সরকারের কর্মকা এবং কি করলে কি হতে পারে ।

লক্ষ করুণ ,  এই সরকার ৫ ই জানুয়ারির মত নির্বাচনের পরেও খুবই আরাম আয়েশে পাঁচটি বছর পাড় করে দিলো ! রাস্তার  বিরোধী শক্তিশালী দল বলতে একমাত্র বিএনপি ।  তারা এই পাঁচ বছরে সরকারে লোম্বকেশের একটিও ছেঁড়া তো দূরে থাক ছুঁতেও পারেনি । বলছিলাম আন্দোলন তো দূরে থাক , ভালো করে একটি হুংকারও দিতে পারেনি । বরং উল্টো নিজেদের দলের সাধারণ কর্মিদের আরো বিপদের হাতে তুলে দিয়েছে । হাজার হাজর  মামলা , হাজার হাজার জেলে বীনা আন্দোলন বীনা প্রতিবাদে । যেহেতু দলটি একটি বড় আকাড়ের দল ,  যদি আন্দোলন প্রতিবাদ করতো তাহলে আর কত বেশিই বা জেল , হামলা , মামলা হতো ? যেখানে ছোট্ট শিশু কিশোররা আন্দোলন কিভাবে করতে হয় ক্ষমতাসীনদের দেখিয়ে দিতে পারে , সেখানে এদের যে কোনো হেডম ( ক্ষমতা) নাই তা কি আর লিখে বলতে হবে ।  সত্যি বলতে এখানেই আমাদের রাজনীতির বড় দূর্বলতা । কেননা ক্ষমতায় থাকতে অপকর্মকে প্রাধান্যে দিলে , বিপদের সময় এমনটাই হওয়ার কথা । ভবিষ্যতে আ লী যদি ক্ষমতাচ্যুত হয় , তাদের শত নিবেদিত প্রাণ কর্মি থাকা সত্যেও একি অবস্থায় পড়তে হবে , এটা বলতে কোনো গণক হওয়ার প্রয়োজন নাই ।

সত্যি বলতে যে করেই হোক গত দশ বছর আ লীগ ক্ষমতায় বহাল তবিয়তেই আছে ।  এই দশ বছরে দলটি দেশ কেমন চালালো তার হিসেব নিকেস করতে গেলে অনেক বড় ফর্দ হয়ে যাবে । যে যাই বলুক ছোট্ট করে বললে বলাই যায় এই সরকারে অনেক কিছুর উন্নয়ন ঘটেছে । সেটা বিদ্যুত্, টাকার রির্জাভ, মাথাপিছু আয়, অনেক সামাজিক সূচক, অনুন্নত দেশ থেকে স্বল্প উন্নয়ন দেশে উন্নীত হওয়া, স্যাটেলাইট মহাকাশে , বিমানে নতুন বিমান সংযোজন, নিজেদের টাকায় পদ্মাসেতু, দারিদ্র্য বিমোচন, মঙ্গা দূরীকরণ ইত্যাদি ইত্যাদি । অস্বীকার করলে নেহাত অন্যায় হবে যে উন্নয়ন হয়নি । উন্নয়ন অবশ্যই তুলনামূলক অন্যান্য সরকারের চেয়ে অনেক অনেক বেশি হয়েছে । সমস্যাটি হলো উন্নয়নের পাশাপাশি দুর্বৃত্তায়ন , দূর্ণীতির পরিমাণটিও অনেক অনেক বেশি  বটে যেখানে যে হারে উন্নয়ন হয়েছে , দূর্ণীতিটাও সমানতালে হয়েছে এবং গণতন্ত্রও এই সরকারের আমলে তলানিতে  । এই দূর্ণীতির বিরুদ্ধে সরকার সত্যি বলতে কিছুই করতে পারেনি । আমি বলছি না সরকারের কিছু করার ইচ্ছা নাই , হয়তো বা আছে তবে সরকারের দূর্বলতার  কারণেই সরকার কিছুই করতে পারেনি । সামনে আবার জাতীয় নির্বাচন, সরকারকে এর খেসারত দিতে হবেই বলেই মনে হচ্ছে । নির্বাচন কেমন হবে ? সুষ্ঠু , নির্ভেজাল হবে কিনা ? সেগুলো সময়ে সব উওর পাওয়া যাবে । তবে অন্যভাবে বলা যায়  বর্তমান সরকার ক্ষমতায় ফিরে আসার সর্বাত্মক চেষ্টাই করবে । এই সরকার যদি অন্তত একটি ঘোষণা অগ্রিম দিয়ে রাখে , তাহলে হয়তো ক্ষমতায় ফিরে আশাটা অনেকটাই সহজ হবে বলে অনুধাবন করি ( একান্তই ব্যক্তিগত মত) । আর ঘোষণাটি আসতে হবে স্বয়ং মাননীয়  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজের মুখ থেকে । আমি মনে করি , প্রধানমন্ত্রী যদি প্রকাশ্যে জনসভায় ঘোষণা দেন – ” আগামীতে ক্ষমতায় আসলে যারা এই সরকারের সকল উন্নয়ন কে দূর্ণীতি দ্বারা ধূলিসাত্ করেছে তাদের সকলকে নির্ঘাত ফাঁসির মঞ্চে পাঠাবো এবং এদের অর্পিত সম্পত্তি সরকারিকরণ করবো  । এই একটি ঘোষণা আ লীগ কে নির্বাচনী বৈতরণী পাড় হতে অনেক সহয়তা করবে বলে মনে করি । তবে একথাও সত্য প্রধানমন্ত্রী কে দৃঢ়তার সাথে এই ঘোষণা দিতে হবে এবং সেই সুযোগ যদি আসে তাহলে এর কার্যকারিতা ফলাফলের মাধ্যমে দেখাতেও হবে । বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যা বলেন তা করেনও বটে এবং ওনার প্রতিশ্রুতি অবশ্যই রক্ষা করতে হবে । কেন এই ঘোষণার কথা বললাম । লক্ষ্যণীয় বর্তমানে দেশে শেখ হাসিনার চেয়ে অন্য কেউই ক্ষমতাশালী নন ।  লক্ষ্য করলে দেখা যায়  শেখ হাসিনা কে সকলেই এক প্রকার ভয় করে ( যদিও অনাকাঙিক্ষত) । ভয়টা এসেছে সত্যি বলতে যখন বড়বড় দাম্ভিকওয়ালা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির মঞ্চে পাঠিয়েছে , সেখান থেকেই মূলত । পৃথিবীর কত বড়বড় নেতাদের অনুরোধ কে তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে যিনি যুদ্ধাপরাধীদের ঝুলিয়েছেন , তিনিই শেখ হাসিনা ।  সুতরাং ভয়টা সম্ভবত ওখান থেকেই । সত্যি বলতে সেই সকল যুদ্ধাপরাধীদের এই দেশে আর কেউ ফাঁসিতে ঝুলাতে পারতেন না । যে যত কথাই বলুক ,এই কাজটি করে শেখ হাসিনা সত্যিই একটি মহান কাজ করেছেন । আমি এও মনে করি , শেখ হাসিনা একান্তভাবে চেয়েছেন বলেই করতে পেরেছেন এবং অন্যকেউ পারতেন না । তাহলে কেন তিনি পারবেন না , সেই সকল  দূর্ণীতিবাজদের ম্যানিলা  ফাঁসির রশিতে ঝুলাতে ? তারা দলকে তো ডুবিয়েছেই সাথে সর্বোপরি দেশকেও । কেননা এরাতো যুদ্ধাপরাধীদের চেয়েও ভয়ানক । এদের ফাঁসি জনগণ নিশ্চয়ই একদিন আশা করে ( যদিও আমি যেকোনো ফাঁসির বিরুদ্ধে)। আর এই কাজটি করার মত ক্ষমতা আর দক্ষতা  যদি কারো এই দেশে থেকে থাকে তা একমাত্র শেখ হাসিনার আছে বলেই মনে করি । এতে নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় , সেখানে ফলাফলও ওনার দলের পক্ষে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে । আমি জোর গলায় বলছি , যদি দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে শেখ হাসিনা এই ঘোষণাটি দেন , দেখা যাবে আগামী মাসের মধ্যেই  ৭০% দূর্ণীতিবাজরা দেশ ছাড়া শুরু করেছে । এরা হয়তো কিছু টাকা নিয়ে ভাগতে পারবে , তবে সম্পত্তি সাথে নিতে পারবে না এবং শাস্তি স্বরুপ জীবনটা হবে তাসের ঘর । আবার বলি এই ঘোষণা শেখ হাসিনাকে অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য করতে হবে এবং ওয়াদাও রাখতে হবে ।
লেখার শেষে বলি , হেফাজত কে শেখ হাসিনা বস্তাবন্দি করেছে , বাম আর আ লীগের কিছু বকবকানি নেতাদেরকেউ একপ্রকার ছাগল বানিয়ে রেখেছে , সামনে আবার সুযোগ পেলে জামাতকেউ বারো হাত পানির তলে চুবাবে বলেই মনে হচ্ছে । দেশের পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে যে করেই হোক শেখ হাসিনা ক্ষমতায় বহাল হবেই  , সুতরাং কিছু একটা হোক ।

বুলবুল তালুকদার

সহকারী সম্পাদক, শুদ্ধস্বর ডটকম 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading