
শুদ্ধস্বর রিপোর্ট:
http://www.amazon.com এ বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা সাহেবে প্রকাশিত
” A BROKEN DREAM “ Rule of Law , Human Rights, & Democracy বইটির একটি ছোটো সংস্করণ আছে। বইটির প্রকাশকের নাম জানা যায়নি । অ্যামাজোন এ প্রকাশিত অংশটুকুর কেবল সারমর্ম আমি বাংলা অনুবাদ করে প্রকাশ করলাম।বইটির সংস্করণ অংশেই সাবেক বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা সাহেব তার বহিষ্কারের সার্বিক বিষয় চুম্বক আকাড়ে তুলে ধরেছেন ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সুপ্রিম কোর্টের প্রথম হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান বিচারপতি হিসেবে তাকে অস্বাভাবিকভাবে সরানোর দুই বছর পরে এস কে সিনহা সাহেব তার প্রকাশিত গ্রন্থ “এ ব্রোকেন ড্রিম” এ লিখেছেন যে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন । বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পক্ষে ঐতিহাসিক রায় প্রদান করার পর বর্তমান সরকার তাকে নির্বাসিত করেন ।
১৭ ই জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে এস কে সিনহাকে আওয়ামী সরকারই নিযুক্ত করেন ।জাতীয় সংসদের ১৬ তম সংশোধনীর বিষয়ে প্রধান বিচারপতি সিনহা সহ সুপ্রিম কোর্টের সাত বিচারপতিদের বেঞ্চের বেশির সংখ্যক বিচারপতিদের সমন্বয়ে হাই কোর্টের রায়কে সমর্থন করে সংবিধানের ১৬ তম সংশোধনী যা জাতীয় সংসদ ( জাতীয় পরিষদ) কে উচ্চতর বিচার বিভাগীয় বিচারকদের অপসারণের জন্য, অসমর্থতা বা তাদের বিরুদ্ধে অপব্যবহারের অভিযোগ সঠিক প্রমাণিত হয়, তা সরাতে পারে । ৫ ই মে ২০১৬ তে হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছিলো জাতীয় সংসদের সংশোধনী অবৈধ ও অসাংবিধানিক ছিলো ।
বিচারপতি সিনহা নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের ১ আগস্ট ২০১৭ তারিখে চুরান্ত আদেশ পাসের পর , আওয়ামী সরকার প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এবং সিনিয়র আওয়ামী মন্ত্রীদের পুনরুজ্জীবিত করে সকল জনসভায় প্রধান বিচারপতি সমালোচনা করতে থাকেন । ১৩ ই সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে জাতীয় পরিষদে মার্শালিংয়ের মাধ্যমে একটি প্রস্তাব পাস করার জন্য তার বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান চালিয়ে যাতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অবসান ঘটাতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। বিচারপতি সিনহা তখন সেই অবস্থায় দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন । ২০১৭ সালের অক্টোবরে তিনি অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করেন ।সেই সময় আইনমন্ত্রী জনাব আনিসুল হক সাহেব বিষয়টিকে ভিন্নখাতে বাঁক কাটিয়ে বলেন , প্রধান বিচারপতি তার পুরনো ক্যান্সারের কারণে তার দায়িত্ব থেকে বিরত ছিলেন । সেই সময় একটি চিঠির কথা বলা হয়(!) যা কিনা সিনহার ছিলো ।
বিচারপতি সিনহা সাহেব তার ৬১০ পৃষ্ঠার বইয়ে পরিচিতি প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন যে , “দুর্ভাগ্যজনক এবং অভূতপূর্ব ঘটনাগুলির ধারাবাহিকতা, যা নির্বাহী ও বিচার বিভাগের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং আমার বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপগুলি ১৭ ই সেপ্টেম্বর ২০১৪ থেকে শুরু হয়, সংসদ সদস্যদের বিচারক নিয়োগের ক্ষমতা প্রদানের জন্য সংবিধান সংশোধন করে বাংলাদেশ সরকার ।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাত বিচারকদের চুড়ান্ত রায় জারি করার পর, প্রধানমন্ত্রী ও তার দলের অন্যান্য সদস্যরা আমাকে সংসদ ভবনে যাওয়ার জন্য বাধ্য করে । আইনমন্ত্রী সহ মন্ত্রীপরিষদের অন্যান্য মন্ত্রীরা আমাকে ধর্ষণ,দূর্ণীতর অভিযোগ করে ও দুর্ব্যবহার করে । যদিও আমি আমার অফিসিয়াল বাসভবনে সীমাবদ্ধ ছিলাম এবং আইনজীবী ও বিচারকদের আমার সাথে সাক্ষাতের বাধা প্রদান করে।মিডিয়াকে বলা হয় আমি অসুস্থ এবং চিকিত্সা ছাড়ের জন্য আবেদন করেছি।
বিচারপতি সিনহা আরো লিখেছেন ১৪ ই অক্টোবর ২০১৭ তারিখে, আমার দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হওয়ার কারণে , আমি জনসাধারণের জন্য এক বিবৃতিতে উল্লেখ করে পরিষ্কার করার চেষ্টা করি যে , আমি অসুস্থ নই এবং না আমি দেশকে একবারে ছেড়ে দিচ্ছি। আমি আশা করি যে আমার শারীরিক অনুপস্থিতি কোর্টের নিয়মিত অবকাশের সাথে মিলিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যাবে এবং ভালো জ্ঞান অর্জন করবে । সরকার বুঝতে পারবে যে বিচারের মূল বিষয়টি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বজায় রাখা দেশ ও রাষ্ট্রের জন্যউপকারী ।
বিচারপতি সিনহার কিছু শব্দে বলেছেন “অবশেষে একটি গোয়েন্দা সংস্থার ভয়ঙ্কর হুমকির মুখে আমার বন্ধুমহল এবং আমার পরিবার” তখন আমি বিদেশ থেকে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছি । A broken Dream এ বিচারপতি সিনহা মৌলভীবাজার জেলার তিলকপুর গ্রামে তার প্রাথমিক জীবনের শুরু থেকেই একটি আত্মজীবনীমূলক কাহিনীও,এছাড়াও বাংলাদেশ বিচার বিভাগের একজন কর্মকর্তা জীবনের “বিচার ও দুর্দশা ” সম্পর্কেও নিবন্ধ করেছেন ।
বাংলা অনুবাদে : বুলবুল তালুকদার ।