
OLYMPUS DIGITAL CAMERA
প্রথমেই বলা ভালো , ১৫ আগস্ট যুদ্ধ জয়ী স্বাধীন দেশের সবচাইতে ন্যক্কারজনক এবং মর্মান্তিক ঘটনা । ১৫ আগস্ট নিয়ে শতকথা বললেও এর কোনো প্রতিকার হবে না । পৃথিবীর বুকে যতদিন গ্রিক গ্রেগোরি ক্যালেন্ডার থাকবে , এই ১৫ আগস্ট আসবে এবং এটা একটা কলঙ্ক অধ্যায় হয়েই থাকবে । বাংলাদেশের ললাটে এই দুঃখজনক তিলক কোনো দিন মুছবার নয় ।
একটি কথা স্পষ্ট করে বলা ভালো , বাংলাদেশের ইতিহাস সমন্বয়ে যারা নূন্যতম জানেন বা বুঝেন , ইতিহাস যাদের চর্চার বিষয় বা ইতিহাস যাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় , তারা বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে শত আলোচনা বা সমালোচনা করবে কিন্তু কখনোই কোনো অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে কোনো প্রকার কটূক্তি করবে না বা করতে পারে না । অন্যদিকে যারা ইতিহাস কে কোনো মূল্যায়ন করেন না বা ইতিহাস নিয়ে ভাবতে নাড়াজ এবং বঙ্গবন্ধু কে যারা মানুষ না ভেবে দেবতার আসন দেন , কেবলমাত্র স্বার্থের টানে , তারা বঙ্গবন্ধুর জন্য মঙ্গলজনক কেউ তো ননই বরং তারা ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আ লীগ এবং বঙ্গবন্ধুর জন্য সবচাইতে বিপদজনক । কেননা বঙ্গবন্ধু সেইরকম চাটুকার মানুষদের দাঁড়াই সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন , ইতিহাস সেই সাক্ষ্য দেয় ।
প্রতিপাদ্য বিষয় বিবিসিতে তত্কালীন কর্ণেল ফারুকের সাক্ষাত্কার এবং কিছু প্রশ্ন বিষয়ে আসি ।
লক্ষ্যণীয় যে বর্তমানে ইন্টারনেটের যুগে ইউটিউবে কর্ণেল ফারুকের একটি সাক্ষাত্কারের কিছু অংশ পাওয়া যায় । সেই সাক্ষাত্কারে কর্ণেল ফারুক বলেন সেনাবাহিনীর সিনিয়র অফিসার হিসেবে তার জেনারেল জিয়ার সাথে বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে কথা হয়েছে এবং কর্ণেল ফারুকের ভাষ্যনুযায়ী, জেনারেল জিয়া বলেছেন, ” গো এ হেড ” ( এগিয়ে যাও ) । লক্ষ্যণীয় যে, এই একটিমাত্র সাক্ষাত্কারের উপর ভর করে যে সকল চাটুকার বুদ্ধিজীবীগণ জেনারেল জিয়া কে সরাসরি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী বলে প্রচার করার প্রচেষ্টা চালান নিজেদের স্বার্থের টানে , তাদের উদ্দেশ্যে নিম্নের কতগুলো প্রশ্ন রয়ে যায় ।
১ ) জেনারেল জিয়া গো এ হেড ( এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন ) । সেটাকি বঙ্গবন্ধু কে খুন করার উদ্দেশ্যে “গো এ হেড ” বলেছিলেন , নাকি ভিন্ন কিছু ? নাকি বঙ্গবন্ধু কে গৃহবন্দি করার কথা ছিলো ? সেটাকে সার্পোট দিয়ে ” গো এ হেড ” বলেছিলেন ? কোনটি সত্য ? আসলেই কি সেই অভ্যুত্থান এ বঙ্গবন্ধু কে হত্যার কোনো পরিকল্পনা ছিলো ?
২ ) সেই সময়কালে সেনাবাহিনীতে কে না জানতেন ? কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে । বিশেষ করে সিনিয়র অফিসাররা তো জানতেন বলেই শোনা যায় । তাহলে প্রশ্ন হলো , সেনাবাহিনীর প্রধান নিশ্চয়ই জানতেন ? কি ব্যবস্থা তিনি নিয়েছিলন ? বা কেন তিনি কোনো ব্যবস্থা নেন নি ?
৩ ) বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরিতে যারা সবচাইতে সচল ছিলো , সেটা নিশ্চয়ই সেই সময়কালের জাসদ । সেই জাসদ এখন ক্ষমতার আসনে তাও বঙ্গবন্ধুর কন্যার শাসনকালে ! এটা ১৫ আগস্টের জন্য নতুন কলঙ্ক কি ? চাটুকার বুদ্ধিজীবীগণ এখন কি বলবেন ?
৪ ) সেই সময়কালে বিএনপি নামক দলটির জন্মই হয়নি । তাহলে কেন বঙ্গবন্ধু হত্যা নিয়ে বিএনপি কে দোষারোপ করা ? এটাকি কেবলি রাজনৈতিক দোষারোপ ? ১৫ আগস্ট নিয়ে উল্টাপাল্টা রাজনৈতিক খেলা , এটাকি বঙ্গবন্ধু কে বড় করা হয় ? এই মর্মান্তিক ঘটনাকে কি হাল্কা করা হয় না ?
৫ ) জেনারেল জিয়া ১৫ আগস্টের বেনিফিশিয়ারি , এটাতো চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর কিছু নাই । জিয়া ছাড়া কি অন্যরা বেনিফিশিয়ারি হওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন না ? নাকি জিয়া টিকে গেছেন বলেই সব দোষ জিয়া কে দেওয়া ? আজকে জিয়ার গঠিত দল যদি শক্তিধর না থাকতো , তাহলেও কি জিয়া কে নিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে মিশিয়ে প্রশ্ন তোলা হতো ?
৬ ) বঙ্গবন্ধুর দল আ লীগই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী , এটা কি কেউ অস্বীকার করতে পারবে ?
এখানে স্পষ্ট করে কিছু কথা বলা ভালো যে , জিয়া দেশের সর্ব প্রথম কলঙ্ক , যিনি এই স্বাধীন দেশে প্রথম আর্মির শাসন এনেছেন । জেনারেল জিয়া এই দোষে স্পষ্ট দোষী । স্বাধীন দেশে আর্মির শাসন এনেছেন , প্রয়োজনে সেই বিষয়ে লক্ষ বার বলুন , প্রয়োজনে মরনত্বের বিচার করুন । তার গঠিত দল আজকে আ লীগের প্রতিপক্ষ বলেই কি ১৫ আগস্ট নিয়ে রাজনৈতিক খেলায় মাততে হবে । প্রশ্ন থেকে যায়, সেই সময়কালে তত্কালীন সেনা প্রধান কে এম শফিউল্লাহ্ সাহেবের যদি আজকে একটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল থাকতো , তাহলে কি এই জেনারেল জিয়া কে নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠতো ? এই জেনারেল জিয়ার কোনো কদরই হতো না এবং প্রশ্নও উঠতো না ।
সব শেষে বলবো মাননীয় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা , বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে যত পা চাটা বুদ্ধিজীবী আছে তাদের কে দূরে রেখে , আ লীগ কে আয়নার সামনে দাঁড় করান । এই আ লীগের ভিতরে সেই সময়কালে পা চাটা চাটুকারেরাই বঙ্গবন্ধু হত্যার মূলে ছিলো । বর্তমান আ লীগেও শত শত আপনার পা চাটা দালাল আর চাটুকার সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবী জ্ঞাণপাপিরা আছে । তাদের থেকে আপনি নিজেকে সরিয়ে সরিয়ে রাখুন । এখানে দুটো উদহারণ দিয়ে লেখা শেষ করবো ।
● মীরজাফর এর এলাকা মুর্শিদাবাদ এ একটি কথা চালু ছিলো এবং এখনও আছে , কথাটি হলো
” ক্ষতি করবা যার , গলা ধইরা কান্দো তার “
মানে খুবই স্পষ্ট, বর্তমানে আপনার যারা ক্ষতি করতে পারে তারা আপনার গলায় ধরে নেকি কান্না কান্দে । সুতরাং তাদের কাছ থেকে সাবধান থাকুন ।
● আপনার সত্যিকারের শুভাকাঙ্ক্ষী কারা , সেটার একটা উদাহরণ দেই । ৯৬ তে আপনি ক্ষমতায় থাকা কালিন , আপনার অনুরোধে জিনি দেশের প্রেসিডেনট হয়েছিলেন , ওনার কথা একবার স্বরণ করুণ । যতটুকু জানি সেই সময়ে , মাননীয় সাবেক প্রেসিডেনট শাহাবুদ্দিন সাহেব বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের ব্যাপারে আপনাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন কোনো বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন না করে নিয়মতান্ত্রিক আদালতে বিচার কাজটি সম্পূর্ণ করতে । মাননীয় শেখ হাসিনা , একবার ভাবুন কত চমত্কার এবং সঠিক পরামর্শ আপনি পেয়েছিলেন ওনার কাছ থেকে । অথচ আপনার পা চাটা বুদ্ধিজীবীদের কথাবার্তা শুনলে ভীষণ হাসি পায় । এই সকল পা চাটা বুদ্ধিজীবীরা টিভির পর্দায় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের বিষয়ে বলতে গিয়ে , আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয় । নিয়মতান্ত্রিক আদালতে বিচারের কথা বলে , আপনার দূরদর্শীর কথা বলে , আপনার কি প্রশংসাই না করেন ! অথচ এরা জেনেও , এটা যে মাননীয় শাহাবুদ্দিন সাহেবের উপদেশ ছিলো , তা একবারের জন্যও মুখে আনবে না । কেননা আপনি না আবার বেজার হন , তাতে না আবার সেই সকল বুদ্ধিজীবীদের ভিন্ন কোনো ক্ষতি হয়ে যায় ।
উপরের দুটি উল্লিখিত বিষয় আ লীগ এবং মাননীয় শেখ হাসিনা বিবেচনায় রাখবেন , সেই আশাই রাখি ।
শেষে আবার স্পষ্ট করে বলি ১৫ আগস্ট এই কলঙ্ক ঘুছবার নয়। বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে আলোচনার দাঁড় উন্মুক্ত করে দিন । সংবিধানের ৭ এর ক আর খ ধারা রেখে বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয় না । যেটা সত্য, দেশের এবং ইতিহাসের জন্যেই বেশি প্রয়োজন । লক্ষ্যণীয় যে , ভারতে মাহাত্ম্যা গান্ধী কে নিয়ে স্পষ্ট এবং খোলামেলা কত আলোচনা হচ্ছে , বই বেড় হচ্ছে ( যে বই পর্ণগ্রাফির কাছাকাছি চলে যায় ) কই তারপরেও তো মাহাত্ম্যা গান্ধীর সম্মান নিয়ে কোনো হানি ঘটেনি । মাহাত্ম্যা গান্ধী তো ভারতে তার নিজের জায়গায়ই আছেন । দরজা/ জানালা খোলা রেখে আলো বাতাস ঢুকতে দিলেই স্বস্তি বেশি । ১৫ আগস্টের শোক বাঙালির জীবনে শক্তিতে রূপান্তরিত হোক।
বুলবুল তালুকদার
সহকারী সম্পাদক, শুদ্ধস্বর ডটকম