মানুষের জীবনে বুঝে না বুঝে তো অনেক কিছুই ঘটে । প্রিয় এক বন্ধুর ছোট্ট একটি কাহিনী বলি ( প্রসঙ্গত কারণেই বন্ধুর নামটি উল্লেখ করলাম না ) । বন্ধুটি কোনো এক সময়ে টাঙ্গাইলে কোনো এক পাড়ায় গিয়েছিলো ( আশা করি লেখাটি যারা পড়ছেন , তারা নিশ্চয়ই ” পাড়া ” কি ?  সেটা বুঝতে পারছেন ।) বন্ধুটি সেই পাড়ায় দেহ দানের কর্মীর সাথে অযথাই নানান প্যচালে লিপ্ত হয় । সেই প্যচাল দেখে পাড়ার সর্দারনি এসেই বন্ধু কে ধমক দিয়ে বলে , ” পাড়ায় যে কাজের জন্য এসেছো সেই কাজ করে যাও , এত কথা কিসের ? ” ( এখানেও প্রসঙ্গত কারণেই ভাষাগত পরিবর্তন করা হলো ) । ” অযথা কথার ” নিশ্চয়ই অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে ।

প্রথমেই স্পষ্ট করে বলা ভালো ,  “২১ আগস্ট ” এই  কেলেংকারি ঘটনার জন্য বিএনপিকেই দায়িত্ব নিতে হবে । আবারো স্পষ্ট করে বলছি ” শতভাগ বিএনপি কেই দায়িত্ব নিতে হবে “বিএনপি হাজারো কথা বললেও , এই দায়িত্ব এরানোর কোনো সুযোগ নাই । আজকাল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেক কিছুই চোখের সামনে চলে আসে । সেই সুত্রেই , বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডঃ খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাহেবের একটি সাক্ষাত্কারের  ভিডিও পাওয়া যায় । এই ভদ্রলোক যেভাবে ২১ আগস্ট নিয়ে ভিডিওতে কথা বলছেন সাক্ষাত্কারে ! শুনলে কারো মুখে থুথুর অভাব হবে না । ওনার ভাষ্যনুযায়ী , ” এটা কোনো ঘটনাই না ! পৃথিবীতে বহু দেশে এরকম ঘটনা ঘটে ! এটা নিয়ে এত কান্নাকাটির কি আছে ? ! প্রসঙ্গত উল্লেখ করা ভালো এই ভদ্রলোক এক সময় আবার ছাত্র লীগের সভাপতি ছিলেন !

লক্ষ্য করুণ , ৯০ এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে বিএনপি এবং আ লীগ কিন্তু কাছাকাছিই ছিলো । এই দুইদল যুগপত্ আন্দোলন না করলেও , কর্মসূচির ক্ষেত্রে দুই দলের একটা সমঝোতা সেই সময়ে লক্ষ্য করা যেতো ।  লক্ষ্যণীয় দুই দলের শত বিরোধিতা থাকা সত্বেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা তেমন চড়া ছিলো না । সেই ৯০ এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের কথা কেন উল্লেখ করলাম ? বাংলাদেশের  ইতিহাসের চরম ন্যক্কারজনক ইতিহাস ১৫ আগস্ট এটা নিয়ে আ লীগ যত কথাই বিএনপি কে নিয়ে বলুক না কেন  , তারা ভালো করেই জানে এই ১৫ আগস্টের বেনিফিশিয়ারি বিএনপি হলেও এই ন্যক্কারজনক ঘটনার মূলে ছিলো আ লীগ । এই সুত্রেই বলা যায়, ৯০ এর আন্দোলনে তাই দুই দলের কাছাকাছি থাকাতে তেমন কোনো অসুবিধে হয়নি বা রাজনৈতিক দূরত্ব তেমন প্রকট ছিলো না , গণতন্ত্র বা দেশের স্বার্থে  ।

তাহলে এই দুই দলের দূরত্ব এতটাই প্রকট কেন ?
রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছা থাকাটা অন্যায় তো নয়ই বরং বলা যায় খুবই স্বাভাবিক । ৯০ এ দুই দলেরই ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছা নিশ্চয়ই ছিলো । তারপরেও বলা যায় দেশের এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে , স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দুই দলই এককাট্টা ছিলো । তাহলে প্রশ্ন নিশ্চয়ই করা যায়, বর্তমানে কেন তাহলে সেই একই দলগুলো দেশ বা গণতন্ত্রের স্বার্থে মোটামুটি কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে না ?  এই প্রশ্নটির উওর রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নানান ভাবেই দেন বা দিতে পারেন । সত্যি বলতে ,এই প্রশ্নটির উওরে রাজনৈতিক দলগুলো যত প্যচানো উওরই দিক না কেন , সঠিক উওর তাদের কথায় নিহিত থাকে না । সরাসরি বললে ,সঠিক উত্তর হবে ২১ সে আগস্ট । নির্মম সত্য হলো , এই ২১ সে আগস্টই দেশের রাজনীতিকে গণতন্ত্র থেকে যোজন যোজন মাইল দূরে ঠেলে দিয়েছে । এই ২১ সে আগস্টই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচাইতে বড় বিভেদ বা বাঁধা । এই ২১ সে আগস্টই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচাইতে বড় অবিশ্বাস । এই ২১ সে আগস্টই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হিংসাত্মক রাজনৈতিক জলাতঙ্ক রোগ ।

এই ২১ সে আগস্টের বিচার দেশের স্বার্থেই অবশ্যই অবশ্যই হতে হবে । তবে একথাও স্পষ্ট করে বলা ভালো , এই বিচার যেন আবার রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য না হয় । তাহলে এই দেশ কে আরো মাশুল গুনতে হবে । কেন বললাম এই কথা ? লক্ষ্য করুণ , বিএনপি সেই সময়ে এই বিচারকে নিয়ে কি ছেলে খেলাই না খেলেছিলো !  জাতি দেখেছে বিচারের নামে ন্যক্কারজনক ” জজ মিঞা “ কাহিনী !  বিএনপি যেমন জর্জ মিঞা কাহিনী করেছে ,  সেরকমই এক কাহিনী ” মুফতি হান্নান “  কাহিনীও কেমন জানি প্রশ্ন তুলে দেয় !
লক্ষ্য করুণ , মুফতি হান্নান এই লোকটিকে বছরের পর বছর হাজত থেকে হাজতে , জেল থেকে জেলে , কত ঘাটের পানিই না খাওয়ালো । কোর্টে উঠালো , সাক্ষী দেওয়ালো , দিলো একধরনের সাক্ষী , হলো না , আবার কোর্টে ! হলো না ! চলে গেলো বছরের পর বছর !  অতঃপর ” ঘাদানি  = ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি “  এর সভাপতি জনাব শাহরিয়ার কবির সাহেব এই মুফতি হান্নান এর একটি ভিডিও সাক্ষাত্কার করলেন । যেখানে স্পষ্ট মুফতি হান্নান স্বীকার করলেন , ২১ আগস্ট বিএনপির তারেক জিয়ার সরাসরি হুকুমে করা হয়েছে । এই ভিডিওটিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পাওয়া যায় ।  চমত্কার ! সবাই এখন বিশেষ করে ,আ লীগের লোকজন তো মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তি দেখে খুশিতেই আটখানা! কেননা সাক্ষী চাক্ষুষ পাওয়া গেছে  যে , স্পষ্ট ভিডিওতে বলছে  , ” তারেক জিয়ার ” হুকুমেই সব হইছে ।  কি আনন্দ আকাশে বাতাসে এবার তারেক জিয়া কে ঝুলাও ফাঁসির মঞ্চে । এই বিচারে তারেক জিয়া জড়িত তা প্রমাণ হলে এবং আদালত ফাঁসির আদেশ দিলে , অবশ্যই সাধারণ জনগণ তা মেনে নিবে । কেননা এই ঘটনায় ২২ টি তরতাজা প্রাণের অবসান ।  যুক্তিসঙ্গত এবং ন্যায়বিচারে যে কারো শাস্তি আমরা আম জনতা প্রার্থনা করি , সেটা ফাঁসি বা অন্য কিছু ( যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে যেকোনো ফাঁসির বিরুদ্ধে) । তবে প্রশ্ন  হলো যদি সেই বিচার একমাত্র মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে হয় , সেটা হবে ন্যায়বিচারের উল্টোরথ । জানিনা কিসের ভিত্তিতে বিচার হচ্ছে বা হবে ?   তবে জনাব শাহরিয়ার কবির সাহেবের এই মুফতি হান্নান ভিডিওটি নিয়েই আমার প্রশ্ন । জনাব কবির সাহেব নানান টেলিভিশন পর্দায় জোর গলায় বলেই বেড়াচ্ছেন , ” আমার নিজের করা ডকুমেন্টারি বা ভিডিওসাক্ষাত্কারে মুফতি হান্নান স্বীকারোক্তি দিয়েছেন , তারেক জিয়ার হুকুমের কথা “। বেশ গর্ব করে বলেন বটে ! কেননা কবির সাহেব এই ন্যক্কারজনক ঘটনার একটা সঠিক প্রমাণ বেড় করে এনেছেন । জাতী নিশ্চয়ই এই কঠিন এবং দৃরচেতা কাজের জন্য কবির সাহেবের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে । আমরাও থাকতে চাই কৃতজ্ঞ । কিন্তু সমস্যা হয় থাকতে । লক্ষ্য করুণ , কেউ কি একবারের জন্যও ভেবেছেন , শাহরিয়ার কবির সাহেব এই ভিডিওটি কখন এবং কোথায় করেছেন ?  হ্যাঁ সমস্যাটি সেখানেই । যদিও কবির সাহেব নিজে গর্ব করে মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তির কথা বলেন বটে ! কিন্তু কখনোই উচ্চারণ করেন না , ” ভিডিওটি বা সাক্ষাত্কারটি মুক্ত মুফতি হান্নানের নয় ! বরং বন্দি মুফতি হান্নানের ” বাকি বিষয়টি জনগণ আপনারা নিজেরাই ভাবুন ।
এবার আসি উপরের উল্লেখিত বন্ধুর কাহিনীতে । কাহিনীটি কেন বললাম , আজকের প্রথম আলো পত্রিকায় দেখলাম আ লীগের মাননীয় সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের সাহেবর একটি বক্তব্য ২১ সে আগস্টের রায় নিয়ে । কাদের সাহেবের ভাষ্য ” গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে বিএনপি সংকটে পড়বে ” , ভালো কথা । বিএনপির আমলে ঘটেছে সংকটে তো বিএনপিকেই পড়তে হবে । উপরেই বলেছি দায়িত্ব শতভাগ তাদেরকেই নিতে হবে । কথা হলো আপনি আ লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে ক্ষমতাসীন । এই গ্রেনেড হামলা আপনাদের উপর হয়েছে এবং খুবই স্বাভাবিক কারণেই ক্ষমতায় থাকার সৌজন্য বিচার করার সৌভাগ্যও হচ্ছে এবং এই বিচার আপনাদেরকেই করতে হবে , অন্য দল এসে করে দিবেও না । এখন বিচারটি সঠিক এবং ন্যায়বিচার হলেই দেশ একটি কলঙ্ক থেকে মুক্তি পাবে । আপনারা ক্ষমতায় থাকলেও বিচার করচ্ছে দেশের একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা , নিশ্চয়ই আপনার দল আ লীগ নয় । এই বিচারে রায় নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই বিএনপির বিপক্ষে যাবে বলেই প্রতীয়মান হয় , কেননা ঘটনা ঘটেছে বিএনপির আমলে । সেই সুত্রে বলাই যায় , রায় যাই হোক বিএনপি কতটুকু মানবে সেটা ভবিষ্যতে বুঝা যাবে । আপনি জনাব মাননীয় সাধারণ সম্পাদক সাহেব কেন যেচে পরে রায় নিয়ে অগ্রিম কথাবার্তা বলে রায়টির ভবিষ্যতের ব্যাপারে এখনই প্রশ্নবোধক করে তুলছেন ?  কেন এই সব কথাবার্তা বলে বিচার বিভাগ কে নিয়ে সন্দিহান করে তুলছেন ? বিচার বিভাগ নিয়ে মানুষ কি খুব বেশি স্বস্তিতে আছে ? আবার কেনই বা এই সব কথাবার্তা বলে বিএনপির হাতে ছুঁড়ে মারার জন্য বল্লম তুলে দিচ্ছেন ?  সকল মাননীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের জন্যেই বলছি , আপনাদের কারণেই দেশের রাজনৈতিক মাঠ কিন্তু কথিত সেই ” পাড়া” র চেয়ে মোটেও ভালো পরিবেশ নাই । তাই বলছিলাম , বিচার হচ্ছে, বিচার হতে দিন । যে বিচারের কাজ আপনারা সরকার করচ্ছেন , করুণ । তবে ” এত কথা কিসের ?

সব শেষে শুধু বলবো , এই যুদ্ধ জয়ী স্বাধীন দেশে আগস্ট মাসটিতে যে কলঙ্ক হয়েছে , তার যেমন একটি বিচার সমাধান হয়েছে , সেরকম আরেকটির বিচারও সমাধান হোক । দেশে এই বিচারটিরও ভীষণ প্রয়োজন , দেশ , জাতি, সর্বোপরি কল্যাণ এবং সঠিক ও ন্যায়বিচার , বিচার ব্যবস্থার স্বার্থেই । গণতন্ত্র এবং ন্যায়বিচার ব্যবস্থাই একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র ব্যবস্থার মূল ।

বুলবুল তালুকদার

সহকারী সম্পাদক ,শুদ্ধস্বর ডটকম 

 

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.