বুলবুল তালুকদারের কলাম ” রাজনীতি বা ভোট , হ্যাঁ বা না এবং ব্যক্তিগত ভবিষ্যদ্বাণী “

OLYMPUS DIGITAL CAMERA
প্রথমেই বিখ্যাত একটি উক্তি বলি :
” হ্যাঁ বা না কথা দুটো সবচাইতে পুরানো এবং সবচাইতে ছোটো । কিন্তু এ কথা দুটো বলতেই সবচাইতে বেশি ভাবতে হয় ” পীথাগোরাস
এই বিখ্যাত উক্তিটি কেনো বললাম , সেটা বলতে গেলে বিশদ করে বলতে হবে , তা নাহলে ভুল বুঝার সম্ভবনা থাকে । তবে চেষ্টা থাকবে ছোটো করে বলার । লক্ষ্যণীয় যে আমাদের দেশটির জন্মই রাজনীতির হাত ধরে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ভিতর দিয়ে । যে রাজনীতি হাতের কথা বললাম , সেই রাজনীতিতে জড়িয়ে ছিলো এ দেশের যুবক/যুবতী, তরুণ/তরুণী , কৃষক/শ্রমিক মেহনতি মানুষের সাথে সর্বময়ের মানুষের বন্ধন । একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে । ৭-ই মার্চের ভাষনে তরুণ/তরুণী থেকে আবাল/বৃদ্ধা কোন শ্রেণীর মানুষ ছিলো না ? এতেই বুঝা যায় সেই সময়ে মানুষ রাজনীতিতে এককাট্টা ছিলো । হোক সেটা প্রয়োজনে বা অধিকার আদায়ে , হোক সেটা অন্যায়ের বিপরীতে বা ন্যায়ের স্বপক্ষে , হোক সেটা জুলুম বা জালিমের পতনে কিংবা দেশমাতার স্বপক্ষের বিপ্লবে ।মূলকথা হলো মানুষ রাজনীতি কে মনে প্রাণে ধারন করেছিলো এবং সত্যের পথের রাজনীতি মানুষকে ধারণ করেছিলো বলেই আজকের বাংলাদেশ ।
আজকের বাংলাদেশের দিকে তাকালে কি দেখা যায় ? সত্যের পথে রাজনীতি বা মানুষের জন্য রাজনীতি কতটুকুন অবশিষ্ট আছে ? মানুষ কি সত্যি রাজনীতি মুখি না বিমুখ ? তরুণ প্রজন্ম কেন রাজনীতি বিমুখ ? মেধাবীরা কেন রাজনীতির নামে উল্টি করে ? মানলাম , ৭১ পূর্ব রাজনীতি ছিলো একটা ভিন্ন আবহের । ৭১ না হয় বাদই দিলাম । ৯০ তে কি রাজনীতির প্রতি মানুষের এতটা বিমুখতা ছিলো ? স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তরুণ বা মেধাবীদের অংশগ্রহণ কি অবমূল্যায়ন করা যাবে ? সত্যি বলতে আজকের মূল রাজনীতি বা ছাত্র রাজনীতিতে , রাজনীতি চর্চা করা কতজন ভালো রাজনীতিবিদদের পাওয়া যাবে ? পূর্বের রাজনীতিতে একটা চমত্কার স্লোগান ছিলো ( সময়ের তাগিদেই ) ” কেউ খাবে কেউ খাবে না ,তা হবে না ,তা হবে না ” আর এখন , চারিদিকে খাই খাই ভাব। কে কাকে কতটা মেরে খেতে পারে ! এটা কি কোনো মিথ্যা কথা ? এখন স্লোগান নাই , তবে ” আমি খাবো আমি খাবো , কেউ পাবে না , কেউ পাবেনা ” ভাব । ছাত্র রাজনীতি করে দামী গাড়ি/বাড়ির মালিক বনা যায় ! ছাত্র নেতাদের পাঞ্জাবির বাহার দেখলে চোখ কপালে উঠার জো হয় । টোস্ট বিস্কুট চায়ে ভিজিয়ে নাস্তা কথার মত একজন পদাবলীর ছাত্র নেতা পাওয়া যাবে কি ? । ছাত্র নেতারা উড়োজাহাজ বা হেলিকপ্টারে উড়ে রাজনীতি করেন ( আমি সবার কথা বলছি না ) । এখানে একটা টাকার প্রতিযোগিতা হরহামেশাই চলছে , সেটা গত অনেক বছর ধরেই , সেটা যে দলই ক্ষমতায় ছিলো বা আছে । এই যদি হয় ছাত্রনেতার হাল , তবে সাধারণ বা মেধাবী ছাত্ররা কেনোই বা রাজনীতিতে আকর্ষিত হবে ? কেননা সাধারণ বা মেধাবীরা এই কাজগুলো খুব বেশি চাতুর্যের সাথে বা চক্ষু লজ্জায় করতে পারে না বলেই ধারণা করি । এখানে ছাত্র রাজনীতির একটা উদহারণ দেই । একসময়ের দু-দুবারের ডাকসুর ভিপি মান্না ভাইয়ের মুখে শোনা । সেই সময়ে নিউমার্কেটের বলাকা হল এলাকায় কতগুলো দোকান নিয়ে বেশ গন্ডগোল চলছিলো । কোনো কিছুতেই মালিক পক্ষ সমাধান করতে পারছিলেন না । তখন তাড়া ডাকসুর নেতাদের শরণাপন্ন হন এবং সমস্যার একটি সমাধান চান । সমাধান করে দিলে ডাকসুর নেতাদের ছয়টি দোকান দিয়ে দিবে । মান্না ভাইয়ের মুখে শোনা , এই কথা শুনে ওনারা অনেকটা বোকা বনে গিয়েছিলেন । ওনারা ভাবতেই পারেননি ছাত্ররা দোকান দিয়ে কি করবে ? পরবর্তীতে সমস্যার সমাধান হয়েছিলো এবং ছাত্র নেতারা দোকান নেওয়ার কথা মাথায়ও আনেননি । ভাবুন ওনারাও ছাত্র নেতা ছিলেন । এখানে বলতেই হয় , বর্তমান ছাত্র রাজনীতি বা মূল রাজনীতি কে, না বলা পীথাগোরাস এর সুত্র অনুযায়ী চিন্তাভাবনা করে সময় নিয়েই না বলা । এর পরিত্রাণ হওয়া নিশ্চয়ই প্রয়োজন, তবে সেটা পারেন কেবল আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ । আশা করি ওনারা বিষয়টি বিবেচনায় নিবেন , এটা মনে হয় এখন অনেকটাই চুড়ান্ত সময় ।
এবার আসি ভোটের কথায় । লক্ষ্যণীয় যে , যে দলই যখন ক্ষমতায় থাকেন তারা পরেরবার আবার ক্ষমতায় আসার জন্য ভোটের উপর ভর করতে চান না । আশ্চর্যজনক অবশ্যই নয় , কেন ভোটকে এত ভয় পান । আর ক্ষমতাসীনরা নিজেদের কর্মকার জন্য এই ভয়ে রুজু হন । সেই কারণেই আজ অব্দি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন পদ্ধতি বা সিসটেমকে কোনো দলই দাড় করাতে পারেনি বা বলা যায় করেনি । এদেশের মানুষ কম শিক্ষিত হলেও আশ্চর্যজনকভাবে সেই পূর্বে থেকেই ভোটের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্তটিই নিতে পারে । তার চুড়ান্ত উদহারণ ৭০ এর নির্বাচন । আর স্বাধীন দেশে ৯০ এর পরে তথাকথিত গণতন্ত্রের ক্ষেত্রেও জনগণ ভোটের বেলায় ভেবেচিন্তেই জায়গা মত হ্যাঁ বলেছে বরাবর । যদি সত্যিকার অর্থেই দেশে বড় দুইদল ছাড়া অন্য কোনো অপশন থাকতো , জনগণ নিশ্চিত এতদিনে এই বড় দুইদলকে দশ হাত ভোটের মাধ্যমে দেখিয়ে দিত । তবে এও বলতে হয় , সেই চন্দ্রমুখের জন্য জনগণ কে আরো দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকতে হবে। আর ভবিষ্যতে কে ক্ষমতায় বসবে , সেটা দেখতে হলে একটা সঠিক ভোটের প্রয়োজন মাত্র । যদি সঠিক একখান ভোট হয় , তাহলে জনগণ এক্ষেত্রেও পীথাগোরাস কে স্বরণ করবে এবং সময় নিয়ে ভেবেচিন্তেই জায়গা মত হ্যাঁ বলবে ।
ব্যক্তিগত ভবিষ্যদ্বাণী:
প্রথমেই স্পষ্ট করে বলা ভালো যে এটা একান্তই ব্যক্তিগত ভবিষ্যদ্বাণী । এর সাথে রাজনৈতিক দল গুলোর বা জনগণের পার্সেপশনের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নাই । নিজের মনের ভিতরের হিসেব নিকেশ থেকে উপলব্ধি মাত্র । ভবিষ্যদ্বাণীটি মন থেকে বলার ইচ্ছে হলো , তাই গণতান্ত্রিক অধিকার বলেই প্রকাশ করে দিচ্ছি ।
* আগামীতে আ লীগ ক্ষমতায় আসবে ( আসবেই)।
* নির্বাচনের আগে মাননীয় খালেদা জিয়া ছাড়া পাবেন।
* বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে ।
* বিএনপি ৭০ এর কাছাকাছি সিট পাবে ।
* আ লীগ দুই তৃতীয়াংশ সিট পাবে ।
* আ লীগ দুই তৃতীয়াংশ সিট থেকে ৩০ টির মতন সিট মহাজোট কে দিবে এবং মহাজোট কে কানে ধরিয়ে নিতে বাধ্য করবে ।
* এরশাদ আরো বড় ভেড়ায় পরিণত হবে ।
* আ লীগ এবার কম করে হলেও ১৫০ টি আসনে ভালো এবং তরুণ ও নতুনদের নমিনেশন দিবে।
* বিএনপি বেশির ভাগ পুরানোদের নমিনেশন দিবে এবং নমিনেশন দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশি জগাখিচুড়ি করবে।
* মাননীয় শেখ হাসিনা আগামীতে ক্ষমতায় এসে কিছু বড় দূর্ণীতিবাজ কে , সা কা চৌ ( ডমফাইকারি) মত লটকাবে ( ফাঁসি )
* আ লিগ এবার ক্ষমতায় কিছুটা গণতান্ত্রিক আচরণ করবে ( তুলনামূলক) ।
আমার এই ভবিষ্যদ্বাণী গুলো ঠিক হলো কি হলো না , তা আমি নিজেই আবার ভবিষ্যতে স্বরণ করিয়ে দেবো ।
বুলবুল তালুকদার
সহকারী সম্পাদক, শুদ্ধস্বর ডটকম ।