কোরবানি ত্যাগের বদলে প্রদর্শনের উৎসব!

ঈদুল আজহা মুসলনমানদের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। ঈদুল আজহা কোরবানির ঈদ হিসেবেও পরিচিত। কোরবানি শব্দের অর্থ উৎসর্গ বা ত্যাগ। পরিভাষায় কোরবানি হলো জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বপর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট জন্তু জবাই করা। যুগ যুগ ধরে এ উৎসব পালিত হয়ে আসছে, এর মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য অনেক। মূলত ঈদুল আজহা হচ্ছে পশু কোরবানির মাধ্যমে নিজের অন্তরের পশুত্বকে জবাই করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ত্যাগ স্বীকার করা।

ঈদুল আজহা মুসলনমানদের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। ঈদুল আজহা কোরবানির ঈদ হিসেবেও পরিচিত। কোরবানি শব্দের অর্থ উৎসর্গ বা ত্যাগ। পরিভাষায় কোরবানি হলো জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বপর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট জন্তু জবাই করা। যুগ যুগ ধরে এ উৎসব পালিত হয়ে আসছে, এর মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য অনেক। মূলত ঈদুল আজহা হচ্ছে পশু কোরবানির মাধ্যমে নিজের অন্তরের পশুত্বকে জবাই করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ত্যাগ স্বীকার করা।
কোরবানি ত্যাগের সাধনা হলেও আমাদের সমাজে অনেকটা প্রদর্শনের বস্তূূতে পরিণত হয়েছে।কোরবানির মূল লক্ষ্য অর্জনের চেয়ে লৌকিকতাই প্রাধান্য পায় বেশি,ফলে আত্মশুদ্ধিতার চেয়ে আত্মম্বরিতা বাড়ছে। আমাদের সমাজে অনেকেই এই পশু কোরবানিকে কেন্দ্র করে বিত্ত প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন। ইসলামে লোক দেখানো ব্যাপারের কোন স্থান নেই। আজ কাল দেখা যায় যে কিছু কিছু মানুষ শুধুমাত্র বেশি করে গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্যে কোরবানি দেয় অথবা লোক সমাজে সুনাম অর্জনের উদ্দেশ্যে মোটা-তাজা দেখে উচ্চ মূল্যের পশু ক্রয় করে এবং তা প্রদর্শন ও প্রচার করে থাকেন যে বড় গরু দিয়ে কোরবানী দিয়েছেন।কোরবানি শুধুমাত্র একটি নিছক আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। লোক দেখানো পশু কেনা ও পশু কিনতে গিয়ে প্রতিযোগিতা বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।অনেকে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ানোর লক্ষ্যেও কোরবানি করতে দেখা যায়। আবার অনেকে মনে করেন কোরবানি এসেছে ভোগের জন্য। কে কত বেশি কবজি ডুবিয়ে খেতে পারেন তার প্রতিযোগিতা চলে। বেশকয়েক বছর ধরে বিশাল আকৃতির গরুর পাশাপাশি আভিজাত্যের ঝাণ্ডাটা মাথা উঁচু করে ধরার জন্য ময়দানে এনে হাজির করা হচ্ছে পর্বতের মত উঁচু উট। কেউ গরুর পরিবর্তে উট কোরবানি দিতে পারলে পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হন। অনেকেই তখন এক সুরে বলে, ওই বাড়িতে বিশাল আকারের উট কোরবানি দেয়া হয়েছে। যেন পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছ থেকে এরকম কিছু শোনার জন্যই এই আয়োজন। এটি ধর্মীয় ও সামাজিক দিক দিয়ে একেবারেই অনুচিত। অনেকে কোরবানির পশুর ফটো ও কোরবানির ঈদে পশু জবাইয়ের পর পশুর ওপর বসে ও শুয়ে সেলফি তোলে গর্বের সাথে ফেসবুকে প্রকাশ করে এবং কত টাকা দিয়ে ক্রয় করছে তাও উল্লেখ করেন। দামি পশু কোরবানি দেওয়ার অহংকার প্রকাশ পায়। কোরবানির গরুর ছবি, গরুসহ মালিকের সেলফি, দরদাম নিয়েও বেশ সরস আলোচনা হয় আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরবানি করবেন সেটা দুনিয়াকে জানানো কি জরুরি? এই লোক দেখানো কোরবানি দিয়ে কি লাভ হয়? উদ্দেশ্য তাদের মানুষের সন্তুষ্টি, আল্লাহর সন্তুষ্টি সেতো অলীক ব্যাপার। কোরবানির ঈদের আগে আরেকটা বিষয় বেশ লক্ষ্য করা যায় তাহলো ফ্রিজ কেনা যাদের একটা ছোট ফ্রিজ আছে তারা আরেকটা বড় ফ্রিজ কিনবে। আর যাদের একটা বড় ফ্রিজ আছে তারাও আবার আরেকটা ডিপ ফ্রিজ কিনবে এটা যেন বাধ্যতামূলক,কোরবানি দিয়ে গোশত জমাতে হবে এবং সেই গোশত সারা বছর খাওয়া হবে তাই। ফ্রিজ এর শোরুমগুলো থেকে কোরবানির ঈদের আগে ভাল ছাড় দেওয়া হয়, যেন সবাই সহজেই কিনতে পারে। আবার কোরবানির আগে ফ্রিজ ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে মোটামুটি খালিও করে রাখে গোশত জমা করার জন্য। কুচক্রী মহল তাদের ব্যবসায়ীক স্বার্থে কোরবানিকে ত্যাগের পরিবর্তে ভোগের উৎসবে পরিণত করছে এবং মুসলিম সমাজকে কোরবানির লক্ষচ্যুত করার অপচেষ্টা করছে। এ সব বিষয়ে সচেতন ও সতর্ক হয়ে কোরবানির মূল লক্ষ্য অর্জনে সচেষ্ট থাকতে হবে। একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য কোরবানি দিন। আল্লাহর হকুম কে পালন করার জন্য কোরবানি দিন। আপনার নিয়ত কে শুদ্ধ করুন,স্বচ্ছ করুন।

লোক দেখানো আমলের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। কাজেই সর্বদা আমাদের নিয়তকে পরিশুদ্ধ রাখতে হবে এবং প্রতিটি কাজ একমাত্র আল্লাহ্‌ পাকের সন্তুষ্টির জন্যই করতে হবে।
কোরবানি হলো আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার এক দৃপ্ত অঙ্গীকার। কোরবানির মাধ্যমে মুসলিম জাতি আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করতে পারে। ইসলামী শরীয়তে কোরবানি যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাওয়াবের কাজ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মহান স্রষ্টার প্রতি যথার্থ আনুগত্য প্রদর্শন, তাঁর সন্তুষ্টি ও মানব কল্যাণে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করার জন্য ধর্মীয় অঙ্গীকার ঘোষণায় সামাজিক আনন্দের উৎসব হিসেবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয় সারা বিশ্বে। এ উৎসব আত্ম-বিশ্লেষণ ও আত্মশুদ্ধিসহ পশুত্ব কোরবানির উৎসব। তাই আমাদের ত্যাগের মানসিকতা তৈরি করতে হবে। মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধকে জাগ্রত করতে হবে। যথাযথভাবে কুরবানি করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য ও বান্দার ভালোবাসা অর্জন করতে হবে। তবেই কোরবানি পালনের যথার্থতা উপলব্ধি করা সম্ভবপর হয়ে উঠবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের কোরবানির ত্যাগ ও উৎসর্গকে কবুল করুন। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কোরবানির মাধ্যমে পরিপূর্ণ সাওয়াব হসিলের তৌফিক দান করুন,আমিন।

আবু জাফর শিহাব

1 thought on “কোরবানি ত্যাগের বদলে প্রদর্শনের উৎসব!

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.