সংসদে বিরোধী নেতা রওশন এরশাদ প্রকৃত বিরোধী দল হওয়ার জন্য প্রধামন্ত্রির কাছে সকরুণ আবেদন জানিয়েছেন । বিরোধী দল হতে সরকারী দলের অনুমতি লাগে এটা মনে হয় বাংলাদেশেই একমাত্র প্রযোজ্য । আমি কিছুদিন আগে লন্ডন ভিত্তিক বাংলা রেডিও বেতারবাংলায় জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান এবং সাবেক মন্ত্রী জি এম কাদেরের সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম । জি এম কাদের বাংলাদেশের রাজনীতিতে কে কয়জন সজ্জন ব্যক্তি আছে তার মধ্যে তিনি অন্যতম । তার কথাবার্তা যে কোন মানুষের কাছেই ভালো লাগবে , তিনি কম কথা বলেন কিন্তু খুব স্পষ্ট কথা বলেন । আমি উনাকে সেই সাক্ষাকারের সময় জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলে ফেলেছিলেন যে জাতীয় পার্টিকে নিয়ন্ত্রন করে বাইরের শক্তি । বাইরের শক্তি বলতে তিনি সরকারকেই বোঝাচ্ছিলেন । রাজনীতির অঙ্গনে একটা কথা সবসময় ভেসে বেড়ায় যে জাতীয় পার্টি সরকারের কথা মতো না চললে এরশাদের মামলা গুলো সচল করার আশঙ্কা রয়েছে তাই এরশাদ মাঝে মাঝে সরকারের সমালোচনা করলেরও পরক্ষনেই আবার সরকারের প্রশাংসা করেন । এছাড়া তার উপায় নেই , তাকে প্রধানমন্ত্রীর দূতের চাকরী দেয়া হয়েছে , সমালোচকরা বলে সেই চাকরী ছেড়ে দেয়ার অধিকার ও তার নেই । গত চার বছরে তিনি কি দূতিয়ালি করলেন তা কেউ জানে না । কাজ নেই কিন্তু তিনি পদে আছেন এরকম পদ কতটা মানসিক যন্ত্রণার তা মনে হয় এরশাদ ছাড়া কেউ জানেনা । আরও করুন অবস্থা হচ্ছে জাতীয় পার্টির যে মন্ত্রীরা সরকারে আছেন তারা দলের সিধান্ত মানে না । মানলে রওশন কে বলতে হতোনা তাদের মন্ত্রী সভা থেকে মুক্তি দিয়ে আমাদের অপবাদ মুক্ত করুন । জাতীয় পার্টি সম্পর্কে আমার লেখার কোন আগ্রহ ছিল না । গতকাল সংসদে রওশনের সকরুণ আবেদন আমাকে ভাবিয়েছে, একটি দেশে একটি রাজনৈতিক দল তার নিজের নীতি নির্ধারণ করার অধিকার রাখে না , এটা আর যাই হোক গণতন্ত্র বলা যাবে না । কিছু দিন যাবত সরকারী দলের নেতাদেরও দেখেছি সংসদের বাইরের বিরোধী দল বি এন পি র সাংগঠনিক বিয়ে মতামত দিতে ,বিএন পি তে কারা নেতা হবে কাদের বাদ দিতে হবে এসব নিয়ে তারা প্রতিদিনই কথা বলেছেন , অনেকে মনে করছেন জাতীয় পার্টির মতো তারা বি এন পি কে নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় । এই রকম আকাঙ্খা গণতন্ত্রের এবং সরকারের জন্য ও শুভ নয় । একটি শক্তিশালী সরকারের জন্য একটি শক্তিশালী বিরোধী দল অপরিহার্য । এটা সরাকারি দলের উপলদ্ধিতে না আসলে সরকারই ক্ষতিগ্রস্থ হবে । আসলে হচ্ছেও তাই । দেশে বিরোধী দলকে রাজনীতি করতে দিলে সরকারী দলের নিজেদের মধ্যকার কোন্দল কিছুটা হলেও প্রশমিত হতো , এত নেতা কর্মীর জীবন বলি হতোনা । বিরোধী দলের মাঠে অনুপস্থিতিতে নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠছে সরকারী দল । চীনের প্রয়াত চেয়ারমান মাও সে তুঙের একটি কথা আছে শত ফুল ফুটতে দাও , আর সেই ফুল ফুটতে না দিলে আগাছায় ভরে যাবে বাগান । মনে হয় ভরেও যাচ্ছে , সেই কথা মাঝে মাঝে আমরা আওয়মী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথা শুনতে পাই ।
হাবিব বাবুল
প্রধান সম্পাদক, শুদ্ধস্বর ডট কম ।