
সূচনা:
কৃষ্ণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলাকে দীর্ঘ সাতাশ বছরের বন্দী জীবনে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা মানবতাবাদী নেতা হিসাবে বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত করার পর বিশ্বব্যাপী অভিন্ন জনমত,আন্তর্জাতিক চাপ ও কূটনৈতিক অবরোধের ফলে প্রিটোরিয়া সরকার তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।দক্ষিন আফ্রিকার অফুরন্ত খনিজ সম্পদ ও অন্যান্য অর্থনৈতিক অবস্থানজনিত কারনে আন্তর্জাতিক ষডযন্ত্র অব্যাহত স্বত্তেও এ এন সি ও প্রিটোরিয়া (দক্ষিন আফ্রিকা)সরকারের আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে গনতন্ত্রের যে পদক্ষেপ সূচিত হয়েছিলো-পরবর্তিতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেনী,গোষ্টি,সম্প্রদায় সহ সকল বর্নের সম্মিলিত অংশগ্রহনের ভিত্তিতে গনতান্ত্রিক আচরনের বিকাশের যাত্রায় নানা ত্রুটি স্বত্তেও তা এখনো অব্যাহত।নেলসন ম্যান্ডেলা একজন নোবেল বিজয়ী।তারও আগে ১৯৭১’পূর্ব সময়ে বাঙালী জাতির শ্রেষ্ট সন্তান বঙ্গবন্ধু উপাধিপ্রাপ্ত শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ঔপনিবেশিক আচরনের বিরুদ্ধে বাঙালী জাতির স্বাধীকার অর্জনের লক্ষ্যে গোপনে পরিচালিত নিউক্লিয়াসের মাধ্যমে ও প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বনে ধীরে ধীরে পূর্ব বাংলার জনগনের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হলে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ষডযন্ত্রে নানামেয়াদে কারানির্যাতন ভোগ করেন।বিভিন্ন ষডযন্ত্র মামলার মূখোমূখি হন।অবশেষে ১৯৭০’ সালের নির্বাচনে পূর্ববাংলার সর্বসাধারণের ভোটে ভূমিধ্বস বিজয় অর্জন করেন।পশ্চিমারা ক্ষমতা হস্তান্তরে গডিমসি করতে থাকে।ইতিপুর্বে সাংগঠনিকভাবে ছাত্রসমাজ স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে অনেকটা প্রস্তুত ছিলো।অত:পর জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করা হলে সারাদেশ আগ্নেয়গিরির মতো জ্বলে উঠে।বি এল এফ ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে।ধারাবাহিকভাবে জনযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।পাকিস্তানীরা ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে গনহত্যা শুরু করলে জনযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়।বিশ্বের মানচিত্রে একটি নতুন দেশ ও জাতির অভ্যূদয়।জাতির জনক বঙ্গবন্ধু জেল থেকে বীরের বেশে একটি সম্পূর্ন স্বাধীন স্বার্বভৌম দেশে পদার্পন করেন।।জাতিসংঘ কর্তৃক জুলিওকুরী পুরস্কারে ভূষিত হলেন।সদ্য স্বাধীন দেশ।মুক্তিপাগল লোকজন আনন্দে আত্মহারা।চতুর্দিকে বিজয়ডংকা।
রাজনীতিই সমাজের চালিকা শক্তি:
সদ্য স্বাধীন দেশে অস্থিরতার সূযোগকে কাজে লাগিয়ে কায়েমী স্বার্থসংশ্লিষ্ট মহল রাতারাতি অর্থ-বিত্ত অর্জনে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়।স্বপ্নভঙ্গের তীব্রতা মুক্তিযুদ্ধ ফেরত মুক্তিযোদ্ধাদের বিচলিত করে তোলে।একপর্যায়ে বিশ্বাসঘাতক মোশতাক চক্রের ষডযন্ত্রে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শহীদ হলে অবৈধ শাসনের ভিত তৈরী হয়ে যায়।রাজনীতির প্রতি নানা কারনে মানুষের মন বিষিয়ে উঠতে থাকে।রাজনীতির আর রাজনীতিকদের প্রতি মানুষের ঘৃনা জাগরনের উদ্দ্যেশ্য বাস্তবায়নে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠে।ক্রমান্বয়ে রাজনীতিবিদদের প্রতি মানুষের ক্ষোভ ঘৃনায় রূপ পেতে থাকে।কায়েমী স্বার্থসংশ্লিষ্ট চক্রান্তকারীরা এভাবেই ১৯৭৫’ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে শাসনের নামে সামাজিক ও গনতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশের অগ্রযাত্রা রুদ্ধ করে।রাজনীতিতে ভালো ও সৎ মানুষের অস্থিত্বের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সর্বত্র।রাজনীতির কথা বললেই কর্মসূচী ও আদর্শবিহীন ব্যক্তিনির্ভর রাজনীতির প্রতি মানুষের ঘৃনা এখন প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে।তবুও রাজনীতিকে যারা ঘৃনা করে তারা সমাজবদ্ধ জীব কিনা-চতুর্দিক থেকে নানা প্রশ্নের অবতারনা পরিলক্ষিত।তথাপি এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই যে,’রাজনীতিই হচ্ছে একটি দেশ,জাতি ও সমাজের চালিকাশক্তি।কিন্তু এটাকে পরিচালিত হতে হবে জনগনের সর্ব্বোচ্চ স্বার্থে ও কল্যানে।’
গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমের পূর্বশর্ত:
“সকল ক্ষমতার মালিক ও উৎস হচ্ছে জনগন।”বহুল প্রচলিত এই শব্দটির সংক্ষিপ্তসার হচ্ছে ‘জনগনের স্বার্বভৌমত্ব।’জনগনের স্বার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে ঔপনিবেশিক আইন ও বিধির পরিবর্তে, আভ্যন্তরীন পরাধীনতা মুক্ত নিজেদের দেশের উপযোগী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্টার লক্ষ্যে,পূর্ন গনতান্ত্রিক সংবিধান প্রবর্তনই গনতান্ত্রিক সমাজ ও সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মান,পূর্ন গনতান্ত্রিক প্রশাসন ও পূর্ন গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমের পূর্বশর্ত।ধর্ম,বর্ণ,সম্প্রদায় ও লিঙ্গ নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার সমূহ চুড়ান্ত ও পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়ন করা না গেলে জনগনের স্বার্বভৌমত্ব কখনো অর্জিত হবেনা। তাই দেশে পূর্ন গনতন্ত্র প্রতিষ্টিত হয়েছে-সেটাও একটা ফাঁকা বুলি মাত্র।আমাদের আত্মবিস্মৃতি প্রবন জাতি বলে অনেককেই বলতে দেখা যায়।’আমাদের কি মনে আছে যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনাপত্রে বলা হয়েছিলো’,”সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বাংলাদেশের জনগন নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি যে ম্যান্ডেট দিয়েছেন সে ম্যান্ডেট মোতাবেক আমরা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা,আমাদের সমবায়ে গন পরিষদ গঠন করে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগনের জন্য সাম্য,মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্টা করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গনপ্রজাতন্ত্র ঘোষনা করছি”?
ক্ষমতার রাজদণ্ডকে স্থায়ীকরনের প্রচেষ্টা:
১৯৯০’য়ের স্বৈরাচার বিরোধী সফল আন্দোলনের পর নির্বাচন অনুষ্টিত হয়।নির্বাচনের পর থেকেই সংসদের স্বার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়েছে-জোরে শোরে প্রচার করা হয়।যা এখনো চলছে। যাতে ‘জনগনের স্বার্বভৌমত্ব’ শব্দটির প্রতি গনদৃষ্টি ও গনসচেতনতার বহি:প্রকাশ না ঘটে।জনগনের ম্যান্ডেট লাভের জন্য কালোটাকা ছড়ানোর বিষয়টি এখন সর্বজনস্বীকৃত।এটি এখন লাখ নয়-কোটি টাকার বানিজ্য।অথচ আমাদের মহান স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন গোপালগঞ্জ ও কোটালীপাড়া নির্বাচনী এলাকায় মুসলিম লীগ প্রার্থী ওয়াহিদুজ্জামানের সাথে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন-তখন বঙ্গবন্ধুর টাকা পয়সার অভাব ছিলো।কর্মীরা নিজেদের সাইকেল ব্যবহার করতো।হাঁটতে হতো গ্রামে গ্রামে।এক বৃদ্ধা মহিলা ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকে কুঁড়েঘরে ডেকে নিয়ে কিছু পয়সা ও এক গ্লাস দুধ পান করতে দেন।বঙ্গবন্ধু দূধ মূখে দিয়ে অশ্রুসজল চোখে পয়সাগুলো ফেরত দিয়ে বৃদ্ধা মহিলার কাছে দোয়া কামনা করেন।এসব বিষয় এখন যাদুঘরে গিয়ে দেখার মতো।জনশ্রুতি বা পত্র-পত্রিকান্তরে এখন যা দেখা যায়-তাতে অর্থব্যয় ও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচনে প্রতিদন্ধিতা এখন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসাবে জনমনে স্থায়ীভাবে বাসা বেধেঁছে।নির্বাচিত সাংসদরা তাঁদের বেতন-ভাতা,আনুষাঙ্গিক খরচাদি,গাড়ী ক্রয় ও লাল পাসপোর্ট সহকারে বিদেশ গমন-ভ্রমন ছাড়াও নানাভাবে জনগনের উপর শোষনের প্রক্রিয়াকে ১৯৯২’পরবর্তি সময় থেকে জোরদার করেছে।শ্রেনী স্বার্থের প্রতিভূ ও ধ্বজ্জাধারী সাংসদরা জনগনের ভাগ্যোন্নয়নের পরিবর্তে নিজেদের আখের গোছানোয় ব্যস্ত।ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা স্বত্তেও ঔপনিবেশিক আইন ও বিধি বদলিয়ে নিজেদের উপযোগী শাসন ও সামাজিক ব্যবস্থাদি পরিবর্তনের জন্য সাংসদরা কখনো ঐক্যমত্যে আসেনি।নতুন নতুন কালাকানুন সংযোজন করে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে সকলকে তৎপর থাকার কথা প্রচার মাধ্যমেই দেখা যায়।বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেছেন-‘আমাদের দেশের বেশির ভাগ আইন অচল হয়ে গেছে।এসব আইনের কার্য্যকারীতা অনেক কম।এসব আইনের ব্যাপক সংস্কার করা না হলে বিচার বিভাগ আরো মূখ থুবডে পডবে।’তিনি আরো বলেন-‘আমাদের সংসদ সদস্যদের বেশির ভাগ আইন বিষয়ে অজ্ঞ।এজন্য যুগোপযোগী সংস্কার সম্ভব হচ্ছেনা।’জনগন অতীতে এবং এখনো নীরবে সবকিছুই অবলোকন করছে।১৯৭১’য়ের মহান জনযুদ্ধ ও তৎপরবর্তি পঁয়তাল্লিশ বছরের গনতান্ত্রিক আন্দোলনের ফলাফল জনগন ভোগই করতে পারেনি।বারবার আন্দোলনের ফলাফল হাইজ্যাক করে কিছু মুষ্টিমেয় কায়েমী স্বার্থসংশ্লিষ্ট মহল তা ভোগ করছে।তাই বাংলাদেশে প্রকৃত গনতন্ত্র প্রতিষ্টার আন্দোলন ও সংগ্রাম এখনও শেষ হয়নি।দীর্ঘ কয়েক যুগের ব্যবধানে ব্যাপক গনসচেতনতা ও গনজাগরনের ভেতর দিয়ে গড়ে উঠা মূল্যবোধের ভিত্তিতে মহান জনযুদ্ধ সংগঠিত হয়।স্বাধীনতা অর্জিত হয়।অত:পর শ্রেনীস্বার্থের প্রতিভূ শাসকদের হঠকারিতা ও ক্ষমতার রাজদন্ডকে স্থায়ীকরনের জন্য,জনমতামতের তোয়াক্ষা না করে,সুকৌশলে শাসকরা তাদের সুবিধামতো সংসদে আইন পরিবর্তন করে তা প্রয়োগ করতে থাকে।যা দেশ ও সমাজকে কখনো প্রগতির নামে বা কখনো ধর্মীয় চেতনার বাতাবরনে প্রতিক্রিয়াশীলতার শীর্ষে অবগাহন করতে শেখায়।ফলে মুক্তিযুদ্ধ বা জনযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ একসময় পূরোপূরি নির্বাসিত ছিলো।অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে এখন কিছু কায়েমী হাইব্রীডদের উৎপাতে মূল্যবোধের বিপরীতে চেতনা বানিজ্য ও চেতনা ব্যবসা একধরনের অশনী সংকেতও বটে।আমাদের মনে রাখা দরকার-নতুন প্রজন্ম,সকল সামাজিক,সাংস্কৃতিক,রাজনৈতিক প্রগতিশীল শক্তিসমূহের ব্যাপক উপলব্ধবোধ থেকে এবং আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারিক কারনে ধীরে ধীরে জনযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের পূন:প্রতিষ্টার সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করার উৎসাহ,উদ্দীপনা ও প্রেরনা সূচিত হয়।তৎসাথে মৌলবাদী,জনযুদ্ধ বিরোধী শক্তিকে জনগনের সম্মিলিত শক্তি দিয়ে নির্মুল করার গনতান্ত্রিক আন্দোলন একটি শক্ত ভিত তৈরী করে নিলে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি অবশেষে সামনে চলে আসে।যুদ্ধাপরাধের বিচার অবশ্যই অভিনন্দনযোগ্য।তবে গুম,খূন,ধর্ষন,সন্ত্রাস,কমিশন ও ঘুষ বানিজ্য,দূর্নীতি,স্বজনপ্রীতির বিকাশের পরিবর্তে গনমানুষের মৌলিক অধিকার ও গনতান্ত্রিক আচরনের বিকাশকে রুদ্ধ না করে দ্রুত ত্বরান্বিত করতে হবে।শুধু তাই নয়- মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার চেতনা ও মূল্যবোধে শানিত বিকল্প শক্তিশালী বিরোধীদল গড়ে উঠতে দিতে হবে।জাতীয় স্বার্থে ১৯৭১’পূর্ব মহান স্বাধীনতা আন্দোলন ও জনযুদ্ধের সত্যিকারের ইতিহাস দলীয়করনের পরিবর্তে জাতীয়করন করতে হবে।সংগ্রাম ও হাজারো বীরদের কাহিনী গনমানুষের দোরগোডায় পৌঁছে দিতে হবে।বঙ্গবন্ধু সমগ্র জাতির।কোন দল বা পরিবারের একক সম্পদ নয়। শুধু তাই নয়-এভারেষ্টশৃঙ্গসম বঙ্গবন্ধুকে সম্মানিত করতে হলে,প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মানুষের হৃদয়ে প্রোথিত করতে হলে-হিমালয়ের চতুর্পাশ্বের পর্বতরাজিকেও সুশোভিত,আলোকিত করে তুলতে হবে।আমাদের অনেক কিছুই বিবেচনায় রেখে তা স্মরন রাখতে হবে।অনেক কিছুই এখনও প্রমান করার জন্য যথেষ্ট যে,বাংলাদেশের গনতান্ত্রিক আন্দোলন প্রান পেয়েছে উপনিবেশবাদ বিরোধী জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের অগ্নিগর্ভে।আভ্যন্তরীন পরাধীনতা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে।
পবিত্র সংবিধানের মূলনীতি সম্পর্কিত:
স্বাধীনতা লাভের পর আমাদের পবিত্র সংবিধান প্রনয়ন একটি বড়ো অর্জন।রক্তাক্ত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অর্জিত সংবিধান নিয়ে নানা অভিমত ও মতপার্থক্য থাকলেও সংবিধানের চার মূলনীতি মুক্তিযূদ্ধের মূল্যবোধের প্রতিফলন।তবে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে,১৯৭৫’ পরবর্তি সময় থেকে মূল সংবিধান বারবার হোঁচট খেয়েছে।ধর্মান্ধগোষ্টী ও মৌলবাদকে উৎসাহিত করে ক্ষমতার রজ্জুকে শক্ত করে ধরে রাখার জন্য কায়েমী প্রতিক্রিয়াশীল চক্র আমাদের পবিত্র সংবিধানের মূল চরিত্রকে আমুল বদলিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছে।বিশ্বের ইতিহাসে সংবিধানের মূল চরিত্র বদলের ইতিহাস নেই।শুধু তাই নয়-ঘাতক ও হত্যাকারীদের রক্ষার্থে ইমডেমনিটি বিল আমাদের জাতীয় চরিত্রকে বিশ্বের কাছে অপমানিত ও কলঙ্কিত করেছিলো।প্রতিক্রিয়াশীলরা ভূলে গিয়েছিলো এবং আমরাও অনেকে ভূলতে বসেছি যে,’হাজার বছরের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অনুপম বিশেষত্বে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।এটি এখন বিশ্বের তিন নম্বর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ।কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এই যে,বাংলাদেশের জন্মের আদি শেকড় সম্পূর্ন ধর্মীয় মতবাদ ও পরিচয়ের বাইরে পূর্ন বাঙালী জাতিস্বত্তা ও হাজার বছরের সংস্কৃতির লালন ও সংরক্ষনের মধ্যেই সুপ্ত অবস্থায় লুক্কায়িত ছিলো।ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয় যে,ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের শোষন,বন্চনা,অত্যাচার,অবিচার আর আভ্যন্তরীণ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তার চুড়ান্ত বিস্ফোরণ ঘটে।অত:পর একটি সফল অথচ রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অবশেষে বিজয় ছিনিয়ে নেয়।’-বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর কথা।তদুপরি আমাদের যেটি বেশী করে স্মরন রাখা দরকার তা হচ্ছে “জনগনকে ‘ইসলাম’ও’মুসলমানের’নামে শ্লোগান দিয়ে ধোঁকা দেওয়া যায়না।ধর্মপ্রান বাঙালী মুসলমানরা তাদের ধর্মকে ভালবাসে;কিন্তু ধর্মের নামে ধোঁকা দিয়ে রাজনৈতিক কার্যসিদ্ধি করতে তারা দিবেনা এ ধারনা অনেকেরই হয়েছিল।জনসাধারণ চায় শোষনহীন সমাজ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতি।”-মহান স্থপতির কথা।
পবিত্র সংবিধান ও জনগনের সম্মিলিত কর্তৃত্ব:
দ্বাদশ সংশোধনী বাংলাদেশের জনগনের রাজনৈতিক সচেতনতার প্রতিফলন।সংসদীয় গনতন্ত্রে উত্তরণের মাধ্যমে গনতান্ত্রিক অভিযাত্রার ক্ষেত্রে একটা শুভ পদক্ষেপের সূচনা সূচিত হলেও এই সংবিধানের অন্তর্ভূক্ত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী সংবিধানে বর্নিত ১৪২ নং অনুচ্ছেদটির সূযোগ ও সূবিধা গ্রহনের ভেতর দিয়ে ইতিপুর্বে ১৯৯২’য়ের ১৬’ই ডিসেম্বরের পর থেকে একের পর এক সংবিধানের সংযোজন,সংশোধন,পরিবর্তন,প্রতিস্থাপন বা রহিতকরণের মাধ্যমে বারবার মৌলিক অধিকার ও রাষ্ট্রযন্ত্রের পরিচালনার মূলনীতি সমূহ হয় স্থগিত নয়তো আমুল বদলানোর ব্যবস্থা গ্রহন করেছে।জনগনের স্বার্বভৌমত্ব সাংবিধানিক কায়দা অবলম্বনে(সংসদে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্টতার জোরে) জনগনের হাত থেকে একে একে ছিনিয়ে নিয়েছে।জনস্বার্থের নামে জনবিরোধী,জনঅপমান ও জনকলংকের এসব রাস্তা অবলম্বনের পুনরাবৃত্তি যাতে ঘটতে না দেয়া যায়-তবে সমস্যার প্রকৃত উৎসমুখের সন্ধান করতে হবে।তাকে দ্রুত চিহ্নিত করতে হবে।১৯৯০’য়ের বিজয়ী জনতার দাবী,১৯৭১’য়ের মহান জনযুদ্ধের মূল্যবোধের দাবী তৎসহ গনতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রকৃত সত্যকে প্রতিষ্টিত করতে হলে সংসদীয় ও গনতান্ত্রিক সরকার ও তাবৎ শক্তিসমূহই নয়-গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজদেহের প্রতিটি স্তরে,অনুতে-পরমানুতে সত্যিকার গনতন্ত্র প্রতিষ্টার,মৌলিক ও মানবাধিকার প্রতিষ্টার সাংবিধানিক ব্যবস্থাদি অতি দ্রুত গ্রহন করতে হবে।সংসদীয় স্বেচ্ছাচারিতা প্রদর্শনের যেমন-গনভোটে নির্বাচিত সাংসদরা জনস্বার্থ বিরোধী ও মৌলিক অধিকার হরনের মত আইনসমূহ প্রনয়নের যে সূযোগ সংবিধানে থাকে-তখন সেখানে জনগনের স্বার্বভৌমত্ব কিভাবে বাস্তবায়নের সূযোগ থাকে-তা কারো বোধগম্য হওয়ার কথা নয়! যেহেতু সংবিধানে লিপিবদ্ধ মৌলিক অধিকারের গায়ে হাত দেয়ার ক্ষমতা সংসদেরও থাকেনা।রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনার মূলনীতি সংশোধনের ক্ষমতাও গনতান্ত্রিক সংবিধান অনুসারে সংসদেরও থাকতে পারেনা।একমাত্র জনগনের এবং জনগনের স্বার্বভৌম ইচ্ছার বহি:প্রকাশ হিসাবে জনঅনুমোদনের ভিত্তিতে শুধু এসব নীতিমালা পরিবর্তিত হতে পারে।আমরা যেনো ভূলে না যাই-গনতান্ত্রিক আন্দোলন,সংগ্রাম ও রক্তাক্ত বিপ্লবের পথ বেয়ে যে পবিত্র সংবিধানের জন্ম-জনগনের সম্মিলিত কর্তৃত্বে অর্জন করার দায়িত্ব তাই আমাদের সকলের।
সংখ্যালঘু জাতিসকলের আত্মনিয়ন্ত্রনাধিকার:
১৯৭২’সালের মূল সংবিধানে পরবর্তিতে রাষ্ট্রধর্ম সংযোজনে সংখ্যালঘু জাতি সকলের সাংবিধানিক স্বীকৃতি স্বাধীনতার এত বছর পরও কাঙ্খিত লক্ষ্যে না পৌঁছানোর বিষয়টি দেশে-বিদেশে আলোচিত-সমালোচিত।আমরা ভূলে যাই যে,’১৯৮৮ সালে স্বৈরশাসক এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করলে সেই সময়ের সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করার অঙ্গীকার করেন।বি এন পি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জাতিকে বিভক্ত করার কারন দর্শিয়ে সংশোধনী গ্রহনযোগ্য নয় বলেন।অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে জামাত এই সংশোধনীকে ভন্ডামী বলে আখ্যায়িত করে।’রাষ্ট্রধর্ম সংবিধানে সংযোজন একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ হলেও কিংবা নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বললেও রাষ্ট্রধর্ম সংযোজনজনিত কারনে সংখ্যালঘূ সম্প্রদায় নিত্যদিনের শঙ্কা ও সংশয়ে তটস্থ।পার্ব্বত্য চট্টগ্রামের জাতিস্বত্তাসমূহের মৌলিক ও মানবাধিকার মূলত: নিশ্চিত কিনা-তা পরিস্কার নয়।ঘটন-অঘটন,আদিবাসী নারীদের ধর্ষনের খবর কিংবা অগ্নিসংযোগ,গোলাগুলি এখনও আগের মতোই প্রতিদিনের খবর।শান্তিচুক্তি সম্পাদনের পরেও কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে-তাও পরিস্কার নয়।শান্তিচুক্তির প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে সরকার কতটুকু আন্তরিক তা নিয়েও প্রায়শ:আলোচনা-সমালোচনার অন্ত নেই।অনেকের লেখনীতে উপরে উপরে কথার ফুলঝুরি স্বত্তেও বাঙালী উপনিবেশ বন্ধ করার কোন সৎ উদ্দ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি।জাতীয় মর্যাদায় সকল সংখ্যালঘুদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে অভিষিক্ত করার লক্ষন স্পষ্ট নয়।সংখ্যালঘু জাতিস্বত্তাসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রনের জাতিগত নৈতিক অধিকার এখন জাতিসংঘ চার্টারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।শুধুমাত্র ব্যক্তির অধিকারের কথা বলা কখনো গনতন্ত্র সম্মত হতে পারেনা।১৯৭২’সালের সংবিধানের মূলনীতি সেক্যুলার রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে সাংবিধানিকভাবে ১৯৭৫’ পরবর্তি সময়ে অনৈতিকভাবে মুক্তিযূদ্ধের মূল্যবোধের পরিপন্থী সিদ্ধান্ত গ্রহন করে যখন সরে আসে-তখন থেকেই বাংলাদেশ মূলত:একটি অধ:পতিত সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের রূপ পরিগ্রহ করেছে।আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে ‘গনতন্ত্রকে সকলের কাছে অর্থবহ করে তুলতে হলে রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা করার বিকল্প নেই।’আর তা না করা হলে অযুত রক্তের বিনিময়ে কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ও মহান জনযুদ্ধের মূল্যবোধ বিসর্জিত-বিবর্জিত হতে থাকবেই।এটি ব্যাপক রাজনৈতিক সচেতনতা ও গনজাগরনের মাধ্যমেই আবারও অর্জনের বিষয়।আমাদেরকে সবসময় এটা স্মরন রাখতেই হবে।
স্বাধীনতা বিরোধীদের পূনর্বাসন ও মৌলবাদের রমরমা:
এটি এখন দিবালোকের মতো পরিস্কার যে,সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নির্মম-বর্বর হত্যাকান্ডের পর থেকেই জামাত,মুসলিম লীগ,নেজামে ইসলাম,পিডিপি সহ ১৯৭১’য়ের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির পূনর্বাসন,ধর্মান্ধ মৌলবাদী শক্তির উত্থান অতি সুকৌশলে ত্বরান্বিত হয়।শুধু তাই নয়-সেনাবাহিনী সহ বিভিন্ন বাহিনীতে কর্তব্যরত জনযুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত উর্ধতন কর্মকর্তা,অফিসার থেকে শুরু করে সাধারন সিপাহীকে নানা অজুহাতে হয় হত্যা,নয়তো ফাঁসী কিংবা বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়ে ক্ষমতার সিঁড়ি নি:স্কন্ঠক করার প্রয়াস আর কারো অজানা থাকার কথা নয়।শুধু তাই নয়-মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের জেল-জুলুম আর রাজনৈতিক চরিত্র হননের অব্যাহত প্রক্রিয়া জনযুদ্ধের মূল্যবোধ আর চেতনাকে সূদূর পরাহত করতে থাকে।তবে সত্যের ডঙ্কা দেরীতে হলেও বেজে উঠে।অবশ্য গনতান্ত্রিক আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও ঘাতক-দালাল নির্মুল জাতীয় সমন্বয় কমিঠি-উপনিবেশবাদের ঘনিষ্ট সহযোগী,মৌলবাদী স্বাধীনতা আন্দোলন বিরোধী শক্তির উত্থান পর্বের পেছনে বিগত স্বৈরশাসক এরশাদ হঠাও আন্দোলনে,মৌলবাদী জামাতের সাথে প্রধান বিরোধী দলগুলোর আঁতাত-দাঁতাত এবং অহেতুক অনর্থক মৌলবাদীদের সূযোগ দেয়াটা রাজনীতিবিদদের চরমতম একটি ভূল সিদ্ধান্ত ছিলো বলে চিহ্নিত করতে দ্বিধা করেনি।প্রয়াত জাহানারা ইমাম বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতায় তা বলেছেন।আ স ম রব,কাদের সিদ্দিকী সহ আরো অনেক বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ লোকদের তখনকার বক্তৃতা,বিবৃতি ও লেখায় তা পত্রিকান্তরে খুঁজলে পাওয়া যাবে।সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী নায়ক গোলাম আজমের আগমন,নাগরিকত্ব লাভ থেকে শুরু করে জামাতের আমীরের পদলাভ সর্বোপরি নিজামী মুজাহিদীদের মন্ত্রিত্ব অর্জন-তাদের প্রকৃত অবস্থানকে নিশ্চিত করেছিলো।তাই সহজে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে,রাষ্ট্র থেকে ধর্মের বিচ্ছিন্নতার স্থায়িত্ব বিধান করা গেলে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ বিরোধী শক্তির উত্থান আজ এত সহজে ঘটতো না।সমস্যাগুলো এতো জটিল আকার ধারন করে যে-অবশেষে জনগন ধীরে ধীরে জেগে উঠতে শুরু করে।আন্দোলন আর জনমতের চাপে একসময় মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়।বিচারের বানী নিভৃতে কাঁন্দার দিন অনেকেই শেষ বলে মনে করে।তবে এটা মনে করে আত্মতৃপ্তির স্বাদ অর্জন এতো সহজ হবেনা।আমাদের স্মরন রাখতে হবে-বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপঠে সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম পরিবর্তনের বিষয়টি স্পর্শকাতর।মৌলবাদের,ধর্মান্ধতার,গোঁডামীর যে ক্যান্সার দীর্ঘ কয়েক যুগের ব্যবধানে সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে-তা থেকে এতো সহজে মুক্তি মেলা সহজ কথা নয়।মুক্তির জন্য আরো বেশী করে ব্যাপক জনসচেতনতা ও গনতান্ত্রিক আচরনের বিকাশের বিকল্প নেই।সরকার ও বিরোধী দলকে জনযুদ্ধের মূল্যবোধে শানিত হতে হবে।
বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্থ নারী সমাজ:
সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনে ১৯৭৫’পরবর্তি সরকার সমূহের কর্মকান্ডে সংখ্যালঘূ সম্প্রদায় নিজেদের অরক্ষিত বলে মনে করে।জান-মালের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত থাকে।বলা চলে-বাংলাদেশের সংখ্যালঘূ সম্প্রদায় ও ক্ষুদ্র জাতিস্বত্তাসমূহের অনেক সমস্যার এখনও রাজনৈতিক সমাধান নিশ্চিত হয়নি।রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও আইন বিশেষজ্ঞদের কথায়-‘ধর্মকে রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে বিচ্ছিন্ন না করার জন্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নারী সমাজ।আদালতে সাক্ষাৎদানযোগ্য ব্যক্তি হিসাবে গন্য হবার সহজাত ক্ষমতা,সম্পত্তির উত্তরাধিকার প্রথা ও বিবাহ সংক্রান্ত ইত্যাকার বিভিন্ন পারিবারিক আইনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রযন্ত্রের আইন প্রযোজ্য না হলে যে কোন অধিকারকে সমান হয়েছে-বলতে পারিনা।ধর্মীয় উৎসজাত এসব পারিবারিক আইনের গন্ডী থেকে নারী সমাজের মুক্তির সম্ভাবনা কখনো পরিলক্ষিত হয়নি বললে চলে।মূলত: লিঙ্গের ভেদাভেদ চুড়ান্তভাবেই গনতন্ত্র ও জনগনের স্বার্বভৌমত্বের পরিপন্থী।’
শ্রমজীবী,কর্মজীবী,পেশাজীবী ও সামাজিক অসাম্য:
রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রশাসনের সর্বস্তরে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এখনো সূদূর পরাহত।ক্ষুদ্র ভূমিহীন কৃষক ও শ্রমিকশ্রেনী ছাড়াও বিভিন্ন কর্মজীবী,পেশাজীবীর বিবিধ সমস্যার আলোকে প্রশাসনে এদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা না গেলে জনগনের স্বার্বভৌমত্ব অনেকটা স্বাধীন দেশে পরিবর্তনশীল বিশ্বে ফাঁকা বুলির মত শোনাবে।দেশের মুদ্রা ও করনীতি,বৈদেশিক ব্যবসা নীতি,অর্থনৈতিক বিনিয়োগ নীতিমালা ও মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারনে উৎপাদক কৃষক-শ্রমিক আর সহযোগী কর্মজীবী,পেশাজীবীদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্টা হয়নি।শ্রমের মজুরীর আসল হার বজায় রাখার জন্য মূল্যস্তর বৃদ্ধির সূচক অনুসারে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রক পরিষদে এদের তেমন কোন প্রতিনিধিত্ব নেই।আমাদের মনে রাখতে হবে-একক শ্রম থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সম্মিলিত শ্রমের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করি-তাতে দেখা যাবে,সম্পদের প্রশ্নটির সমাধান করাও সম্মিলিত জনগনের স্বার্বভৌমত্ব অর্জনের আওতাভূক্ত একটি দিক।জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নতিই যদি লক্ষ্য হিসাবে নির্ধারিত হয়-তাহলে অর্থনৈতিক উন্নতির প্রশ্নটিকে শেষ বিচারে আমাদের ঐতিহাসিক মহান জনযুদ্ধের মূল্যবোধের,আভ্যন্তরীন পরাধীনতামুক্ত সামাজিক ন্যায়বিচারের আলোকে একটি বড় রাজনৈতিক প্রশ্ন।এটি রক্তাক্ত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অর্জিত একটি স্বাধীন দেশের গনতন্ত্রের সবচেয়ে বড়ো অগ্নিপরীক্ষা।
দেশরক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষা ব্যবস্থার মৌলিক সংকট,পররাষ্ট্রনীতি:
পত্রিকান্তরে সকলেই অবগত যে,বাংলাদেশের বর্তমান দেশরক্ষা ব্যবস্থাদি চুড়ান্তভাবেই আমলাতান্ত্রিক।স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই দারিদ্র ও বন্যা কবলিত পীড়িত দেশে স্থায়ী দেশরক্ষা বাহিনী জাতীয় সম্পদের শতকরা হিসাবে অধিকাংশ ভাগ ভোগ করে।যদিও শিক্ষার উন্নয়নে চতুর্দিকে চিৎকার শুনা গেলেও কোটি কোটি সাধারন নিম্নআয়ের,নিরন্ন মানুষের শিক্ষার জন্য শতকরা চার-পাঁচ ভাগও ব্যয় করা হয়না।শিক্ষাক্ষেত্রে চরম নৈরাজ্যকর অবস্থা।সমন্বয়হীনতা।ভাষাগত শ্রেণীগত অবস্থানের তীব্রতা দিন দিন প্রকট হচ্ছে।সরকারী বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্টান সমূহে সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্টীর সামগ্রিক উন্নয়নের বিষয়টি প্রকট।তবুও দেশরক্ষা বাহিনীর গনতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি সর্ব্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করে অনেককে বলতে দেখা যায় যে,সাধারন মানুষের জীবন-জীবিকার গ্যারান্টি ও অধিকার বন্চিত করে জনগনের সম্পত্তি বিনষ্ট করার অধিকার জনগন কাউকে দেয়নি।দেশরক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষাব্যবস্থার সমন্বয় সাধন কিংবা গনতান্ত্রিক দেশরক্ষা ব্যবস্থার জন্য জনগনকে প্রশিক্ষনের মধ্য দিয়ে,উদ্ভুদ্ধকরনের মধ্য দিয়ে জনগনের উপর ভরষা করার জন্য সকল পথ,পন্থা ও পরিবেশ শ্রেনীচরিত্রগত কারনে কোন সরকারই গড়ে তোলেনি।নজর দেয়াতো দূরের কথা।গনতন্ত্র ও জনগনের স্বার্বভৌমত্ব অর্জনের জন্য এ প্রশ্নটি মীমাংসিত হওয়া প্রয়োজন।মহান জনযুদ্ধের অঙ্গীকার ও গনতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক এমনকি পবিত্র সংবিধানে উল্লেখিত থাকলেও জনগন পররাষ্ট নীতিতে দীর্ঘ কয়েক যুগের ব্যবধানে এখনো নিরপেক্ষ চরিত্র অর্জিত হয়নি বলে মনে করে।অনেকক্ষেত্রে নতজানু পররাষ্ট্রনীতির সম্প্রসারনের বিষয়টি আলোচিত-সমালোচিত।বিশ্বব্যবস্থার আমুল পরিবর্তনজনিত কারনে,তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের ধারায় নিজস্ব সম্পদ ও জনবলকে কেন্দ্র করে পরনির্ভরশীলতা কাটিয়ে স্বনির্ভরভিত্তিক নীতিমালা প্রনয়ন করে এবং তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করা না গেলে জনগনের স্বার্বভৌমত্ব অবশ্যই প্রশ্নসাপেক্ষ।অবশ্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির প্রায়োগিক বিচারে শাসকদের কথা ও কাজের অসঙ্গতি কিংবা মিল খূঁজে না পাওয়াতে সাধারন জনগন কখনো বিভ্রান্ত কখনো সন্দেহের দোলায় দূলছে।তবে কূটনীতিতে দীর্ঘদিনের ব্যবধানে দক্ষ জনবল কেন গড়ে উঠেনি-সে প্রশ্নটিও দীর্ঘদিনের।
গনতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামের প্রদত্ত ওয়াদার বরখেলাপ:
স্বার্বজনীনভাবে জনযুদ্ধের মূল্যবোধ সংরক্ষনে সকলের জানার কথা যে,মৌলবাদ,উপনিবেশবাদ,স্বৈরাচার ও সাম্রাজ্যবাদ পরস্পর সহযোগী।গনতন্ত্রের পূর্নতা প্রাপ্তির জন্য তাদেরকে পরাজিত করতে হবে।অন্যথায় যে কোন শাসকশ্রেনী জনগনের স্বার্বভৌমত্ব বাস্তবায়নের দোহাই দিলে তা হবে মূর্খতা ও জঘন্য মিথ্যাচারীতা।গনতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামের প্রদত্ত ওয়াদা মোতাবেক জনগন নির্বাচন কমিশন,দূদক ও বিচার বিভাগের পূর্ন স্বাধীনতার স্বাদ এখনো পরিপূর্নভাবে উপভোগ করতে পারেনি।প্রায়োগিক পদ্ধতি আলোচিত-সমালোচিত।বিভিন্ন সময়ে নানা প্রশ্নের উদয় হয়েছে।জনস্বার্থ সংরক্ষনের নামে বিশেষ ক্ষমতা আইনের বলে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে মৌলিক ও মানবাধিকার লুন্ঠনের কথা বিশ্বের নানা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মূখে উত্থাপিত ও উচ্চারিত হতে দেখা যায়।গনতন্ত্রের আলখেল্লায় যা স্বৈরশাসনামল সমূহকেও ছাপিয়ে গেছে বলে পত্রিকান্তরে,অনেকের লেখায় ও কথায় প্রকাশিত।প্রয়াত মনিষী আহমদ ছফার ভাষায়-‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে এরশাদ একটা নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করছেন।হাসিনা-খালেদার সাধ্য নেই এরশাদকে কোথাও ছূঁডে ফেলে দেয়ার।কারন হাসিনা-খালেদা যে ধরনের রাজনীতি করছেন এরশাদের অবস্থান সে রাজনীতির মধ্যেই।’ লেবাসটা বেসামরিক মাত্র।১৯৭৫’ পরবর্তি রাজনৈতিক ধারাবাহিকতায় দুর্নীতির বিষবাস্প সমাজের উপরতলা থেকে নীচতলা পর্য্যন্ত যেভাবে ছড়িয়ে গেছে-সুশাসনের অভাবে তা থেকে মুক্তির পথ সুদূরপরাহত বিধায় সাধারন জনগন শংকিত।গনতান্ত্রিক আচরনের বিকাশের পরিচর্যায় বিভিন্ন দেশের ডেমোক্রেটিক থিংকট্যাংক গুলো সরকার কর্তৃক অগনতান্ত্রিক পদক্ষেপ ও আচরনকে সামনে রেখে তাদের বলতে দেখা যায় যে,’যখনই কোন সরকার জনগনের জীবন,স্বাধীনতা ও সূখান্বেষা ধ্বংস করতে লিপ্ত হবে-তখনই সে সরকার বদলানোর বা উৎখাত করার অধিকার জনগনের হাতে থাকবে।অধিকার থাকবে নিজেদের নিরাপত্তা ও সূখের সাথে সঙ্গতিপূর্ন নীতিমালার ভিত্তিতে এবং রূপরেখা অনুযায়ী ক্ষমতার বিন্যাস ঘটিয়ে নতুন সরকার গঠনের।’আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষনায় বর্নিত এই গনতান্ত্রিক নীতিটি জনগনের স্বার্বভৌমত্বের ফলিত প্রকাশ।দুনিয়াব্যাপী বিভিন্ন আন্দোলন ও বিপ্লবের ক্ষেত্রে তা প্রতিফলিত।আমাদের জনযুদ্ধের মূল্যবোধেরও প্রতিফলন বলা যায়।বস্তুত: বিপ্লব বা আন্দোলনের অধিকার ব্যতিত জনগনের স্বার্বভৌমত্ব আমাদের মতো কৌশলে পরিবর্তিত মূল্যবোধের দেশে কথামালার ফানুষ মাত্র।তাই বাংলাদেশের সংবিধানে এই অধিকার অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।রাজনৈতিক ও গনতান্ত্রিক অধিকারই মানবাধিকারসমূহের শ্রেষ্ট অধিকার।
সর্বস্তরে জনগনের কর্তৃত্ব ও সর্বসাধারণের মুক্তির লক্ষ্যে:
অবৈধ সামরিক শাসন,স্বৈরশাসনামল বাদ দিয়ে সংসদীয় ব্যবস্থায় বাংলাদেশের দূ’টি বড় দলের শাসনামলের দিকে থাকালে সংসদীয় ব্যবস্থায় সাধারন জনগনের মতামতও যে গুরুত্বহীন হয়ে যেতে পারে-তা ধরা পড়ে।অবশ্য ১৯৭৫’পরবর্তি বিশ্বাসঘাতকতা,হত্যা ও ষডযন্ত্রের রাজনীতি পলাশীর আম্রকাননকেও ম্লান করে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা,জেলে চার জাতীয় নেতা হত্যা,পঙ্গুবীর কর্ণেল(অব:)আবুতাহেরকে জেলের অভ্যন্তরে বিচার ও ফাঁসী,বহুদলীয় গনতন্ত্রের নামে জিয়ার একক স্বেচ্ছাচারিতা,দল ভাঙ্গন প্রক্রিয়ার শুরু ও দ্রুত ত্বরান্বিতকরন,রাজনীতিবিদদের মেধা ও চরিত্র হনন,মুক্তিযোদ্ধা নিধন,মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির পূনর্বাসন,মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার ইতিহাসের নির্বাসন,ক্যূ এবং পাল্টা ক্যূ’য়ের ভিতর দিয়েই স্বৈরাচারী ব্যবস্থাসমূহ নিরীক্ষন ও পর্যবেক্ষন করা যেতে পারে।দলদাসত্বের বিপরীতে দাঁড়িয়ে যদি দেখা যায়-তবে সন্দেহের অবকাশ থাকার কথা নয় কিংবা মানতেই হবে যে,একক স্বেচ্ছাচারী ব্যবস্থা ও পদ্ধতির জন্য দূ’টি রাষ্ট্রপতি হত্যা ত্বরান্বিত হয়েছিলো।তাই সত্যিকারের পূর্ন গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রযন্ত্র ও রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বাদ গ্রহনের জন্য,প্রকৃত গনতন্ত্র ও জনগনের স্বার্বভৌমত্বের পূর্ণতা প্রাপ্তির জন্য বিদ্যমান ব্যবস্থায় শাসন পদ্ধতি সংসদীয় মোড়কে রেখে গোটা রাষ্ট্র কাঠামোটির আমুল নৈতিক ও গনতান্ত্রিক পরিবর্তন সাধন করতে হবে।জনসংখ্যার উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রনে জনস্বার্থে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরনে এখনো কোন উদ্দ্যোগ যথাযথভাবে পরিলক্ষিত হয়নি।পার্লামেন্ট স্বাধীন দেশের আলোকে ও উপযোগী পদ্ধতিতে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট হবে কিনা-তা নিয়ে একাডেমিক ও রাজনৈতিক আলোচনা-সমালোচনা দরকার।সকলের আন্তরিক অংশগ্রহণে জাতীয় সংকট উত্তরন কিংবা পূর্ন বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য কিভাবে পার্লামেন্টের সংস্কার সাধন করা যায়-জনগনের স্বার্বভৌমত্বের আলোকে তা নিশ্চিত করতে হবে।সত্যিকারের জনগনের স্বার্বভৌমত্ব ও জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনের অন্তরায় এবং এর উৎসস্থল খূঁজে বের করে এর বিরুদ্ধে মৌলবাদ বিরোধী গনতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে ব্যাপক গন সচেতনতা,গনজাগরন ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে গনপ্রতিরোধ গড়ে তোলার ব্যবস্থা ও দায়িত্ব গ্রহন করতে হবে।সর্বস্তরে জনগনের কর্তৃত্ব কায়েম করা,শ্রমজীবী,কর্মজীবী,পেশাজীবি মানুষের মুক্তি এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য পূর্ন গনতান্ত্রিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে স্থায়ীভাবে গড়ে তোলার আন্দোলনে সবাইকে অবতীর্ণ হতে হবে।
সরকারের সাথে জনগনের দূরত্ব ও ব্যবধান:
সালতামামী।
একদিকে দেশের চতুর্দিকে সন্ত্রাস,গুম,খূন,রাহাজানি ও দূর্নীতির মতো জঘন্য ক্যান্সারের আক্রমন,শেয়ার বাজার,হলমার্ক,বিসমিল্লাহ ও ডেসটিনি,বেসিক ব্যাংক,সহ রাজকোষে হানা জনমনে ইতিমধ্যে আতঙ্ক তৈরী করেছে।বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়টি এখন খোলাখূলি বলাবলি করতে দেখা যায়।বিশ্বাসের জায়গাটি এখন বড়ই ঠুনকো।হাইব্রীড আর ফড়িয়াদের উৎপাতে মানুষ দিশেহারা।পারিবারিক,সামাজিক মূল্যবোধে সর্বত্র ধ্বস নেমেছে।কেবলমাত্র দলীয় আচার-আচরনের কথা বাদ দিলেও ছাত্রছাত্রী,তরুন আর যুব সমাজের আচার-আচরনে শিষ্টাচার লংঘনের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে।বিশ্ববিদ্যালয় সহ শিক্ষা প্রতিষ্টানে ১৯৯১’ সালের পর থেকে ছাত্রসংসদের নির্বাচন হয়নি।মেধা-মননে সমৃদ্ধ প্রজন্মের আগামীর নেতৃত্ব বন্চিত দেশ।শিক্ষাপ্রতিষ্টানসমূহে পেশী শক্তি সম্প্রসারিত হয়েছে।([আমাদের স্মরন রাখতে হবে যে,বিশ্ববিদ্যালয় সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্টানে সন্ত্রাসের জন্য ছাত্রদের দায়ী করে জনমনে ছাত্রদের সম্পর্কে এক ধরনের অসচ্ছ আবহ তৈরী করে ছাত্রদের বিবেকী শক্তিকে জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা ক্ষমতার ঝান্ডাধারীদের পুরনো প্রক্রিয়া।যাতে দলীয় আনুগত্যের বাইরে গিয়ে সাধারন ছাত্রছাত্রীরা স্বাধীন স্বত্তার উপর দাঁডিয়ে জনস্বার্থে আন্দোলন থেকে বিরত থাকে।কতিপয় সামরিক বেসামরিক আমলাচক্র,কালোবাজারী,মূনাফাখোর,রাজনৈতিক কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্টী সহ অছাত্র ও উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের মাধ্যমে এরা সন্ত্রাসের ইন্ধন যোগায়।এদের সৃষ্ট সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা জনগনের স্বার্বভৌম ইচ্ছার প্রতিফলনকে প্রলম্বিত করে এবং সেই সূযোগ তারা কাজে লাগায়।অবশ্য শেষ বিচারে ছাত্রছাত্রীরা জনগনের পাশে এসে দাঁড়ায়।)]সর্বোপরি জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির জন্য মধ্য ও নিম্ন আয়ের গনমানুষের চোখে-মূখে অন্ধকার আর কালোছায়া।নিরন্ন আর বস্তিবাসীর কথা বাদই রইলো।এসব কিছুকে কেন্দ্র করে চতুর্দিক থেকে আওয়াজ উত্থিত্ত হচ্ছে।অন্যদিকে সূযোগ বুঝে দাতাগোষ্টী সরকারকে নির্দেশ প্রদান করছে।জনজীবনে বিশৃঙ্খলা চুড়ান্ত পর্যায়ে অবস্থান করছে।এসব কিছুর সূযোগ নিয়ে মৌলবাদ,উপনিবেশবাদ ও স্বৈরাচারী ব্যবস্থার প্রেতাত্থারা বর্তমান সরকারের ভিতরে ও ক্ষমতার আশপাশে এমন শক্ত অবস্থান নিয়ে গেডে বসেছে যে,ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও তদীয় সরকারের সাথে জনগনের দূরত্ব ও ব্যবধান তৈরী হয়ে গেছে। যা খোলা চোখে দেখা যাওয়ার কথা নয়।এমনকি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসার কথা নয়।কারন চতুর্দিকে হাইব্রীড আর তোষামোদকারী কিংবা পা চাটার দল।
বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও গনতান্ত্রিক আচরন বিকাশের থিংকট্যাংকের বিশ্লেষনে দেখা যায়-যখন কোন সরকার মৌলবাদের সাথে সম্পৃক্ত সহযোগী ব্যতিত সর্বত্রই দেশপ্রেমিকদের দেশদ্রোহী কিংবা সবখানে যখন ষডযন্ত্রের গন্ধ খূঁজে বেড়ান তখন মনে করতে হবে-সেই সরকারের পতনের ঘন্টাধ্বনি শুনা যাচ্ছে।’কারন ষডযন্ত্রের গন্ধ অন্তত: সরকার বাহাদূরের খোঁজার দরকার পড়েনা।ষডযন্ত্র বন্ধের জন্য তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহনের মতো সরকারের নানা এজেন্সী সমূহ সবসময় তৎপর থাকার কথা।আসলে দীর্ঘ কয়েকযূগ ধরে জনগনকে বোকা বানানোর প্রক্রিয়ায় আমাদের দেশের শাসক সম্প্রদায় সিদ্ধহস্ত।তাইতো বর্তমান সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতার সূযোগকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দলীয়করন করার বিরুদ্ধে জনগনের অবস্থানকে সূদৃঢ করার তাগিদ নীরবে সর্বত্রই অনভূত ও অনুসৃত হচ্ছে।আন্দোলনকেও দলীয়করন মুক্ত রেখে সম্মিলিত জনগনের শক্তির ভিত্তিতে সংগঠিত করা হলে যে কোন আন্দোলন তার নিশ্চিৎ লক্ষ্য অর্জন করবেই।আর সরকার যদি জনগনের সম্মিলিত শক্তির ও ইচ্ছার প্রতি প্রয়োজনীয় তাগিদ অনুভব না করেন কিংবা জনগনের স্বার্বভৌমত্বের পরিপন্থী কর্ম প্রক্রিয়া গ্রহন করছে বলে প্রতীয়মান হয়-তখন “জনগনই সকল শক্তির উৎস”বলে সকল সরকারী প্রচারনা জনগনের কাছে অর্থহীন হয়ে দাঁড়াবে।তাই জনগনের প্রকৃত স্বার্বভৌমত্ব কায়েমের জন্য সম্মিলিত শক্তি নিয়ে এগুতে হবে।সকল সূযোগ কাজে লাগাতে হবে।অন্যথায় জনগনের স্বার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।
তথ্যসূত্র:
শেখ মুজিবুর রহমান:অসমাপ্ত আত্মজীবনী,দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড,চতুর্থ মুদ্রন:জানুয়ারী ২০১৪
সিরাজুল আলম খান:দ্বিতীয় ধারার রাজনীতি,প্রকাশকাল:জানুয়ারী’২০১১
এস কে সিনহা:প্রধান বিচারপতি,বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।এপ্রিল ০২/২০১৬ বাংলামেইল২৪ডটকম।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জিল্লুর রহমান খান:Rethinking Democratization:Consensus Building for Results.http://rc37.ipsa.org
অধ্যাপক ও গবেষক আলী রিয়াজ:ফেসবুক ষ্ট্যাটাস’এপ্রিল ০৪/২০১৬ ও ‘রাষ্ট্রধর্ম বনাম আদর্শিক সংগ্রাম’৩১’শে মার্চ,২০১৬।প্রথম আলো ডটকম।
অধ্যাপক ও গবেষক সলিমুল্লাহ খান:জেনারেল এরশাদের রাজনীতি লইয়া আহমদ ছফার দুইটি নিবন্ধ।shorbojon.wordpress.com
অধ্যাপক ও এক্টিভিষ্ট আনু মুহাম্মদ:জাতিগত নিপীড়ন ও উন্নয়ন দর্শন,২২’শে ফেব্রুয়ারী,২০১৬।www.bonikbarta.com
ব্যারিষ্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া: আইনজীবি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট-আদিবাসী,পার্ব্বত্য চট্টগ্রাম ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সম্পর্কিত কিছু ফেসবুক ষ্ট্যাটাস।
ফরাসী বিপ্লব ও বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ওয়েবসাইট।
সিকদার গিয়াসউদ্দিন, লাস ভেগাস,
যুক্তরাষ্ট্র
One of the best & honest expressions articulated ever I had gone through. Thank you GIAS. Our new generations should know the factual truth and hopefully they would understand & make rightful decision for constructive, POSITIVE politics. Sharing your writeup.