আজ বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক এবং রাজনিতিক নির্মল সেনের মৃত্যু বার্ষিকী । স্বাধীনতা পরবর্তীতে তার কলমের সাথে আমার পরিচয়, তারপর ব্যক্তিগত ভাবে উনার সাথে পরিচয় ঘটে, স্পষ্টবাদী নির্ভীক এই মানুষটির কথা কখনও ভুলবার নয় ।মৃত্যুর পর তার দেহ দান করে গেছেন মেডিকেলে, আর বলে গেছেন তাকে যেন কখনও কোন রাষ্ট্রীয় পুরুস্কার না দেয়া হয় । রাষ্ট্রের প্রতি তার কোন অভিমান ছিল কি না জানিনা কিন্তু প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতি তার কোন আস্থা ছিল না, তিনি সমাজ পরিবর্তনে বিশ্বাসী ছিলেন তাই তার প্রথম জীবনে ফরোয়ার্ড ব্লক এবং আর এস পি র সাথে যুক্ত থাকলেও তিনি সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি রাজনীতির সাথেও যুক্ত ছিলেন । তিনি আমৃত্যু শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের প্রধান ছিলেন । ১৯৭২ সাল থেকে তিনি দৈনিক বাংলায় অনিকেত নামে উপসম্পাদকীয় লিখতেন , ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তহাহে তার উপসম্পাদকীয় লেখা বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার । নির্মল সেন তার বইতে স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই বইতে লিখেছেন, জাতীয় সংসদে তখন সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো । তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান আমাকে ডেকে পাঠান এবং আমাকে জানিয়ে দেন যে , দৈনিক বাংলায় অনিকেত নামে আমার আর কোন উপসম্পাদকীয় প্রকাশিত হবে না । এরপর তার জীবিত কালে আর কোন উপসম্পাদকীয় দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত হয়নি । তিনি সেই সময়ে স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই শিরনামে কলাম লিখে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন । তিনি লিখেছিলেন আমি স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই । আমি চাইনা আমার মৃত্যুর পর ময়না তদন্ত হোক ।আমি চাই না আমার দেহ শকুনের মতো কেটে ছিরে কেউ দেখুক ।
নিত্যদিন সন্ত্রাস আর শঙ্কার মৃত্যু আমি চাইনা, আমি স্বাভাবিক মৃত্যু চাই । আমি অমন করে মরতে চাই না ।আমি চাই না আমাকে পিটিয়ে হত্যা করা হোক । আমি চাই না আমার বিকৃত দেহ টা দেখে কাঁদুক আমার স্বজন । অশ্রুর প্লাবন নামুক আমার আপনজনের চোখে ।আমি চাই না আততায়ীর গুলি বিদ্ধ করুক আমাকে এক অসতর্ক মুহূর্তে । আমি চাইনা আমার শুভাকাঙ্খিরা একদিন থানা পুলিশ করুক আমার জন্য । আমি চাইনা নিরুদ্দেশের তালিকায় ভীর জমাতে ।
নির্মল দা কথা গুলি লিখেছিলে স্বাধীনতা পরবর্তী সেই অস্থির সময়ে তার লেখায় সেই সময়ে চিত্র ফুটে ওঠে । একজন নির্ভীক সাংবাদিকের প্রতীক ছিলেন তিনি , এখন যারা সাংবাদিকতা করেন তাদের কাছে নির্মল সেন অবশ্যই একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব । আমি নিজেও তার কাছ থেকে প্রাণিত হয়েছি , আমাকে তিনি লিখতে বলেছিলেন সেই সময়ে , বলেছিলেন তুমি ইচ্ছে করলে পারবে । এরশাদ জামানায় তিনি আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে আমকে মাঝে মাঝে চিঠি লিখতেন ঢাকা থেকে তার একটি চিঠি পাঠকদের জন্য প্রকাশ করলাম । সবশেষে বলতে চাই যেখানেই থাকুন নির্মল দা ভালো থাকবেন ।
হাবিব বাবুল
সম্পাদক শুদ্ধস্বর ।
৭ই জানুয়ারি ২০১৮ ।