————————————– রেহানা আক্তার
আজ ক’দিন ধরে যাচ্ছে না ভাল শরীরটা, ভাল থাকার তো কথাও না, বয়স যে চলছে বেড়ে।
শীত শীত আসছে আসছে করছে, এ সময়ে কনকনে বাতাসের সাথে নিয়ে আসে শত রোগ, আজ সকাল হতে চলছে জ্বর সর্দির সাথে কাশি । গরম জলে লেবুর রস আর মধুর মিশ্রণ খেতে বলতেন দাদী।
কাজের বুয়াটাও নেই, তাইতো আছি একাকী, খেতে ইচ্ছে করছে না কিছুই। ফ্রিজে আছে সবই রান্না যা করি পছন্দ আমি। মাইক্রোওভেনে গরম করে খেতে হবে তাই আর হলো না খাওয়া আজ। ঘুমও আসছে না নির্জন বাড়িতে পায়চারি করছি, রাস্তায় কুকুরের কান্নার শব্দ, বারান্দায় গিয়ে দেখছি আর ভাবছি আমার মতই ও একা, পশু আর প্রাণীর নেই কোন ভেদাভেদ। গান শূনতে ইচ্ছে করছে, কি গান শূনবো? হুম বারী সিদ্দিকীর গান ” সূঁয়া চান পাখি ” গানটি শুনে চোখে পানি চলে এলো কেন? না, মাথা টা খুব ধরেছে । কেউ যদি থাকতো এখন আমার পাশে , দিতো মাথায় হাত বুলিয়ে গল্প করে পাড়াতো ঘুম, ভেজে আনতো পাপড় আর পপকন্। দূ’বছর হতে চললো নয়ন পাড়ি জমিয়েছে ধনীর এক দূলালীর হাত ধরে সূদুর আমেরিকাতে।আজ বড়ই ইচ্ছে করছে নয়নকে পাশে পেতে , মানুষ অসূস্থ্য হলে কি প্রিয়জনদের কাছে পেতে চায়, হয়তো চায়, যেমন আমার মনটি চাইছে। কেন এত নিঃসঙ্গ লাগছে, এভাবে যায় কি বাচাঁ আর? বিধাতা, তুমি কি পরীক্ষা নিচ্ছো আমার? জীবনে পরীক্ষা দিতে দিতে আমি ক্লান্ত। সন্তান জন্ম না দেবার দোষ কি ছিল শুধুই আমার একার? না আর ভাবতে পারছি না, মাথা ঘুরছে, বমি বমি লাগছে। আচ্ছা, এই শূন্য বাড়ীতে আমি যদি মরে পড়ে থাকি, লাশ পঁচে গন্ধ ছড়াবে বাড়িময়, বহুদিন পর বুয়া ফিরলে দেখতে পাবে আমার গলিত লাশ। পাড়া পড়শীরা করাবে আমায় গোসল, সাদা কাফনের গালিচায় মুড়িয়ে রাখবে আমার দেহ। ধ্যাৎ কিসব আজে বাজে ভাবছি আমি এসব। একা আমি, না কি নারী বলে? কোনটাই না।
বিশাল এই পৃথিবীর সব মানুষই তো একা। দিন শেষে বাড়ী ফিরে যখন যায় ঘুমিয়ে, তখন তো সবাই একা। শত কাজের ভিড়ে ঐ ঘুমের কাছে আমরা করি নতিস্বীকার ।
এত কিছুর পরও একাকী এই জীবনে রাত বিরাতের নির্জনতায় বড় বেশী প্রয়োজন ছিল তোমার। তাইতো নি:সঙ্গতার মাঝে ঘুরে ফিরে আমার আমি।
