ধর্মের নামে ধর্মের দোহাই দিয়ে তথাকথিত পাকিস্তানীরা আমাদের স্বাধীন স্বত্তাকে আমাদের স্বাধীনতাকে আমাদের গনতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে রুখে দিতে পারেনি।আমাদের মহান স্বাধীনতা আন্দোলনের আগে ও ১৯৭১’ সালে জনযুদ্ধ চলাকালীন ধর্মের নামে সীমাহীন বন্চনার উৎপীড়নের,নিপীড়নের,অমানবিকতার,বর্বরতার,নৃশংসতার,অনাচার,অত্যাচারের সর্বশেষে গনহত্যার বিষয়টি দেশের ও সারাবিশ্বের সকলেই জ্ঞাত।বাঙালী জাতিকে ধর্মের নামে বা ধর্মের দোহাই দিয়ে কিছুদিনের জন্য শাসন শোষন করা গেলেও যোগবিয়োগের ফলাফলে বাঙালী জাতি বারবার জেগে উঠেছে।স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জনের মধ্য দিয়েই তা দিবালোকের মতো দস্তুরমতো প্রতিভাত।দীর্ঘ কয়েকযুগের ব্যবধানে আমাদের পবিত্র সংবিধানের বিশ্ব ইতিহাসের নজীরবিহীন কাঁটাছেড়ার মধ্য দিয়ে ধর্মের নামে ধর্মের দোহাই দিয়ে অবৈধ শাসন ও শোষন আর ভন্ডামীর ধারা অব্যাহত ছিলো।যুদ্ধাপরাধের শাস্তি ও কার্য্যক্রম অব্যাহত থাকলেও ধর্মকে ব্যবহারের প্রক্রিয়ায় এখনও তেমন ব্যাপক কোন পরিবর্তন দেখা দেয়নি।১৯৭৫ সাল পরবর্তি সময় থেকে শিক্ষাঙ্গন ম্যানিপুলেটেড তথা বিকৃত ইতিহাসে ভরা।স্বাধীনতা পূর্ববর্তি ও ১৯৭১’এর জনযুদ্ধের জাতীয় ও স্থানীয় নায়ক ও বীরদের নিয়ে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের কথা বাদই দিলাম।এমনকি স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যলয়ের ১৯৭১’পরবর্তি প্রজন্মরাও আমাদের সত্যিকার ইতিহাস নিয়ে কনফিউজড।বেসরকারি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় আর যত্রতত্র মাদ্রাসা গড়ে উঠার কারনে ইংরেজী ও আরবী ভাষা বিকশিত হচ্ছে।এসব প্রতিষ্টানসমূহে বাংলা ভাষা বিকাশের বিষয়টি হাস্যকর।সর্বক্ষেত্রে একুশের ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধে উদ্ভুদ্ধ হয়ে বাংলাভাষা সকল সেক্টরে চালু করা না গেলে আমাদের কপালে আরও দূ:খ আছে।
বিষয়টির গুরুত্বপূর্ণ বিধায় ব্যাপক সচেতনতা তৈরীতে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কর্মীদের ষ্ট্রাটেজী গ্রহন করতেই হবে।শুধু তাই নয়-স্বাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বিকাশের বিরুদ্ধে প্রগতির অগ্রযাত্রা রুখে দিতে ধর্মান্ধ গোষ্টী ইতিমধ্যেই একটা আবহ তৈরী করার কথা মূখে মূখে শুনা গেলেও সাংস্কৃতিক আন্দোলন যেভাবে বিকশিত হওয়ার কথা তা কেন হয়নি বা কেন সাংস্কৃতিক কর্মীদের মধ্যে বিভক্তি ও দন্ধের পরিসমাপ্তি দেখা যায়না-তা এখন অনেকটা পিলে চমকানোর মতো।সূশীল সমাজেরও অবস্থান তথৈবচ।
মহানায়ক বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযূদ্ধের চেতনাকে নিয়ে দলীয় হাইব্রীডদের ব্যবসা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা পত্রপত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়াতে অহরহ প্রতিনিয়ত দেখা যায়।আমরা প্রতিনিয়ত ভূলে যায় যে,এভারেষ্ট শৃঙ্গসম বঙ্গবন্ধুকে সম্মানিত করতে হলে হিমালয়ের চতুর্পাশ্বের পর্বতরাজিকে সুশোভিত করতেই হবে।আমাদের স্মরন রাখতে হবে,বঙ্গবন্ধু কোন দল বা পরিবারের একক সম্পদ নয়।গোটা জাতির।অখন্ড ইন্সটিটিউশন। তাই জাতীয় স্বার্থে দলীয় রাজনীতির বাইরে আমাদের সত্যিকারের ইতিহাসকে জানানোর এখনই সময়।তৈলমর্দনকারী আর তোষামোদকারীদের কর্তৃক ব্যক্তির স্তুতি আর জপমালাকে কোনক্রমেই পাত্তা না দিয়ে কিংবা এদের চিহ্নিতকরনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের তথা জনযুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত সকল নায়ক ও বীরদের দলীয় কারনে রাজনৈতিক চরিত্র হননের বিরুদ্ধে গনসচেতনতার বিকল্প নেই।দেশপ্রেম রাতারাতি অর্জনের বিষয় নয়।ছোটবেলা থেকেই প্রশিক্ষনের বিষয়।দেশে এতো দূর্নীতি,সাগরচুরি,হত্যা,গুম,ধর্মের নামে ভন্ডামী ও জঙ্গীবাদের উত্থান,অনৈতিকতা,বিবেকহীনতা,নির্মমতা,নৃশংসতা,মিথ্যাবাদীতা,ভোগবাদীতার পেছনে ১৯৭১’পরবর্তি প্রজন্মদের কনফিউজড বা ম্যানিপুলেটেড ইতিহাস পঠনপাঠনই কমবেশী দায়ী বলে বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞদের বলতে দেখা যায়।মিথ্যা ও বিকৃত বা সত্যগোপনকারী ইতিহাস পড়িয়ে সবকিছু করা গেলেও নীতি নৈতিকতা সম্পন্ন দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরী হওয়ার কথা নয়।
দেশে সাংস্কৃতিক আন্দোলন যেভাবে বিকশিত হওয়ার কথা-১৯৭৫’সাল পরবর্তি থেকে এখনো তা সেভাবে বিকশিত হয়নি।কারন সাংস্কৃতিক কর্মীরা দলদাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ।জাতীয় স্বার্থে এই শৃঙ্খল ভাঙতে হবে।শিক্ষক,সাংবাদিকসহ সকল পেশাজীবিদেরকেও দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে দলের চাইতে দেশকে ভালোবাসার শপৎ নিতে হবে। কবি,সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবিদের “শত”ও “সহস্রের”বাইরে এসে বাঙালী জাতির হাজার বছরের সম্প্রীতির উদ্ধারে দূধকলা আর উচ্ছিষ্ট না খেয়ে জাতিকে ধর্মের নামে ভন্ডদের ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দলের চাইতে দেশ ও জাতির সর্বোপরি আগামী প্রজন্মের সামগ্রিক কল্যানে রুখে দাঁড়াতে হবে।ব্যাপক গনসচেতনতা তৈরী করতে হবে।
বেশ কিছুদিন ধরে ধর্ম রক্ষার নামে টার্গেটেড কিলিংয়ের বিষয়টি পত্রপত্রিকায় সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত সমালোচিত হয়ে আসছে।গুম হত্যা দূর্নীতি সাগরচুরির বিষয়টিও পত্রিকার আর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিদিনের খবর।গনতান্ত্রিক আচরনের বিষয়টিও আলোচিত সমালোচিত।ধর্মের নামে ধর্মের দোহাই দিয়ে নিরাপত্তার চাদরে পরিবেষ্টিত গুলশান ডিপ্লোম্যাটিক জোনের ‘হলি আর্টিশান বেকারী’ রেস্টুরেন্ট আর কিশোরগন্জের ‘ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের’বর্বরতার,নৃশংসতার কাহিনী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে সারাদেশ আর বিশ্বব্যাপী তুমুল আলোড়ন তৈরী করেছে।দেশে ও প্রবাসের বাঙালীরা আতঙ্কে ভূগছে।বিশেষ করে প্রবাসীরা বিদেশে তাঁদের কঠোর শ্রম ও মেধা দিয়ে সুনাম অর্জন করলেও গুলশানের আর শোলাকিয়ার নির্মম,বর্বর ও নৃশংস ঘটনার পর পর প্রবাসী বাঙালীদের প্রতি একধরনের আস্থাহীনতা বা ভিন্নচোখে দেখা শুরু হয়ে গেছে।যা বিদেশে জনশক্তি রপ্তানীতে বিরূপ প্রভাবের অশনী সংকেত।শুধু তাই নয়-গার্মেন্টস শিল্পেও অশনী সংকেতের বিষয়টি পত্রপত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়াতে আলোচিত সমালোচিত হতে দেখা যাচ্ছে।আমাদের জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই দুই শক্তিকে ধরে রাখতে হলে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই।শুধু তাই নয়- বিদেশী বিনিয়োগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো পাততাড়ি গুটানোর বিভিন্ন সংবাদ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গনমাধ্যম বা প্রচার মাধ্যমে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখা যাচ্ছে।উস্কানীমূলক বা বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী সংবাদও পরিলক্ষিত হচছে।ক্ষমতার স্থায়ীকরনের জন্য স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেয়ার মতো নানা ধরনের সংবাদ বিভিন্ন মাধ্যমে পরিবেশিত হতে দেখা যাচ্ছে।যা কোনক্রমেই দেশপ্রেমিক নাগরিকের কাম্য হতে পারেনা।সরকার ও বিরোধী দলগুলোর ব্যাপক জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার খবর এখনো শুনা যায়নি।কথামালার ফুলঝুরি চলছে সর্বত্র।ধর্ম রক্ষার নামে ১৯৭১’সালে বাঙালী জাতির ব্যাপক গনঐক্যকে রুখে দেয়া যায়নি।ধর্মের নামে বাঙালী জাতি আর বর্বরতা নৃশংসতা দেখতে রাজী নয়।ব্যাপক জনঐক্য ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধে তাড়িত হয়ে গনতান্ত্রিক আচরনের বিকাশের এখনই সময়।জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ(NSC)গঠন ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন সময়ের দাবী।ধর্মের দোহাই দিয়ে উন্নয়নের নামে বাঙালী জাতিকে শাসন শোষনের বিষয়টি বাঙালীরা কখনো মেনে নিতে পারেনি।আইয়ূবশাহীর শাসনকাল তার প্রকৃষ্ট উদাহরন।ধর্ম রক্ষার নামে বর্বরতা নৃশংসতা বাঙালী জাতি কখনো মেনে নেয়নি এবং মেনে নেবেনা।জাতির ক্রান্তিকালে সরকার আর বিরোধী দলগুলো ব্যাপক জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে ব্যর্থ হলে জনরোষের হাত থেকে কারো নিস্তার নেই।জাতি কোন না কোন সময় মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াবেই।আমাদের অতীত ইতিহাস তাই বলে।ইতিহাসের আলোকেই সবকিছু বিবেচনার এখনই সময়।’ইতিহাসের পাঠ থেকে জেনেও আমরা শিক্ষাগ্রহন করিনা’ বলে প্রায়ই সকলে বলাবলি করে।তা যেনো আর না হয়।ধর্ম রক্ষার নামে বর্বরতার,নির্মমতার,নৃশংসতার অবসানে বাঙালী জাতির গৌরবোজ্জ্বল দিনগুলোকে দিবালোকে সুস্পষ্ট করে তুলতে হলে সবাইকে একযোগে এগিয়ে আসার এখনই সময়।ধর্মের নামে আর যেনো কোন মায়ের বুক খালি না হয়-তাই ব্যাপক গনসচেতনতা আর মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের ভিত্তিতে গনতান্ত্রিক আচরনের বিকাশে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।অন্য কোন বিকল্প নেই।স্মরন রাখতে হবে-ইতিহাসের দায়বদ্ধতা থেকে আমরা কেউ মুক্তি পেতে পারিনা।ধর্ম রক্ষার নামে ধর্মের কথা বলে ভন্ড ধর্ম ব্যবসায়ীরা পরিবার সমাজ দেশ ও জাতির শত্রু।তেমনি আমাদের স্মরন রাখতে হবে-ব্যক্তি পরিবার আর দলের চেয়ে দেশ আর দেশের জনগন হচ্ছে সবার উপরে।আমাদের মনে রাখা দরকার “সবার উপরে মানুষ সত্য-তাহার উপরে নাই।”দেয়ালে সকলের পিঠ ঠেকে গেছে।ধর্মের নামে অধর্ম,বর্বরতা,নৃশংসতার বিরুদ্ধে ১৯৭১’সালের মতো বাঙালী আর অন্যান্য জাতিস্বত্বাসমূহ আবারো জেগে উঠবেই।
সিকদার গিয়াসউদ্দিন
লাস ভেগাস,নেভাদা
যুক্তরাষ্ট্র