দীর্ঘ ২৯ বছর তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব, এক মাস ইসলাম ও কোরআন নিয়ে গবেষণার পর ইসলাম গ্রহণ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রিতু কুন্ডু।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিওতে তার ইসলাম ধর্ম গ্রহণের দীর্ঘ যাত্রার কথা জানান তিনি। তবে ইসলাম ধর্মে প্রবেশের পরে নাম পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে রাজি হননি। ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ ইসলাম গ্রহণের কথা জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ২৯ বছরের বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা ও জ্ঞান-বুদ্ধির আলোকে আমি ইসলামের বিষয়ে এক মাস ব্যাপী পড়াশোনা শুরু করি। ১৬ দিনের মধ্যেই আমি সত্য উপলব্ধি করি এবং (২০১৭ সালের মার্চে) ইসলাম গ্রহণ করি। তখন থেকে আমি হিজাব পরিধান ও নামাজ আদায় শুরু করি।’

রিতু কুন্ডু বলেন, ‘এই দীর্ঘ ২৯ বছর পর্যন্ত আমি নিজের পরিবার, সমাজ ও মানুষের আচার-ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করি। এ দীর্ঘ সময় হিন্দু ধর্মসহ প্রধান সব ধর্মের গ্রন্থাবলি পাঠ করেছি। জাপানেও এ বিষয়ে পড়াশোনা করি। ২০১২ সালে এসে বুঝতে পারি, এগুলো মানুষের রচিত বই।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি পবিত্র কোরআনের বাংলা অনুবাদ পাঠ করি দীর্ঘ ২৯ বছর পর। এর পাশাপাশি আমি হাদিসও পাঠ করি। মহান আল্লাহর নির্দেশনার কারণ ও বিধি-নিষেধ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করি। কখনো এ বিষয়ে স্বপ্নও দেখেছি। তা হয়ত অনেকের অবিশ্বাস্য মনে হবে।’

কবে ও কীভাবে এ যাত্রা শুরু, এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যাত্রা আসলে খুব অল্প দিনের বা অল্প সময়ের নয়, খুব ছোট থেকেই হয়ত আল্লাহ আমাকে ইসলাম কবুলের জন্য তৈরি করেছিলেন। ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ঘটনা, শিক্ষা, প্রতিবন্ধকতা আর সমাজের অসংগতি আমাকে ধীরে ধীরে ইসলামের পথে পরিচালিত করেছে।’

পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব থেকে বিরোধিতা এসেছে কিনা সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার ও বন্ধুরা আমাকে এমনটি করতে মানা করে। কিন্তু আমি তাদের কথায় প্রতিবাদ করে বলি, আমি বুঝেছি, আল্লাহ কেন আমাদেরকে বিভিন্ন নির্দেশ দিয়েছেন। আমি রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসতে পেরেছি। আমি বুঝতে পেরেছি, তিনি কেন আমাদের এত সুন্দর সুন্দর উপদেশ ও নির্দেশনা দিয়েছেন। সুতরাং আজ থেকে নিজেকে তাঁর অনুগত হিসেবে স্বীকার করলাম।’

রিতু কুন্ডু আরো বলেন, ‘ইসলামের যে বিষয়গুলো আমাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দিত করে, নির্ভার করে তা হলো ইসলামের প্রতিটি বিধান একজন মানুষের জীবনকে সবচেয়ে সুন্দরতম জীবনে রূপান্তরিত করে দিতে থাকে। এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস, আত্মসমর্পণ এক অপূর্ব মানসিক প্রশান্তির খবর দেয়। একজন সৃষ্টি যেকোনো অবস্থান থেকে যেকোনো পরিস্থিতিতে তার স্রষ্টার সঙ্গে অর্থাৎ আল্লাহর সঙ্গে আত্মিকভাবে যুক্ত হতে পারে, কারো মাধ্যম বা বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রয়োজন পড়ে না। এখানে ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু জাতভেদের কোনো অবস্থান নেই। আমরা সর্বদা যে সাম্যবাদী সমাজের কথা বলি ইসলামি জীবন সে সাম্যবাদেরই শিক্ষা দেয়।’

নীলফামারী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন রিতু কুন্ডু। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ২০১৩ সালে তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৭ সাল থেকে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে অধ্যাপনা করছেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading