‘হোম ওয়ার্ক’ না করায় কওমি মাদ্রাসার দ্বিতীয় জামায়াতের এক শিশুশিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করেছেন এক শিক্ষক। মারধরের সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ গতকাল সোমবার বিকেলে সালিস বৈঠক ডেকে ওই শিক্ষককে বহিষ্কার করে। কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের ঢেবঢেবি বাজার কুলছুম ক্বওমি মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটেছে।

ভাইরাল হওয়া দুই মিনিট ২০ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়- মাদ্রাসার শিক্ষক আবু সাইদ টুপি মাথায় সাদা পাঞ্জাবি পরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পড়া আদায় করছেন। তার বাঁ হাতে একটি খাতা/বই, ডান হাতে একটি বেত। কিছুক্ষণ পর সাদা পাঞ্জাবি পরা একটি শিশুশিক্ষার্থীকে বেত দিয়ে গুঁতো দিয়ে মাথা নিচু করে মাটিতে ফেলে বেধড়ক পেটাতে থাকেন তিনি।

ভিডিওটির সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই শিক্ষার্থী পাথরডুবী বাজারের বাসিন্দা এবং ঢেবঢেবি বাজারের ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেনের ছেলে লাল মিয়া। সাত বছর বয়সী ওই শিশুটি মাদ্রাসার দ্বিতীয় জামায়াতের শিক্ষার্থী।

শিশুর বাবা মোতালেব হোসেন মোবাইল ফোনে জানান, ঘটনাটি ২৭ মার্চের। ছেলেকে বাড়ির কাজের জন্য নির্দিষ্ট একটি লেখা দেওয়া হয়েছিল। সেই লেখা না এনে অন্য লেখা নিয়ে যাওয়ায় এমনভাবে পিটিয়েছেন ওই শিক্ষক। ছেলে বাড়িতে ভয়ে কিছু জানায়নি। আমি গতকাল সোমবার দুপুরে ফেসবুকে ভিডিওটি দেখে আঁতকে উঠি। বাড়িতে গিয়ে ছেলের কাছে সব ঘটনা শুনতে পাই। হুজুরের ভয়ে ছেলে এতদিন আমাদের বিষয়টি জানায়নি। ছেলের কাছে তিনি আরও জানতে পারেন, মারধরের কথা কাউকে বললে তাকে মেরে ফেলবে বলে হুজুর ভয় দেখিয়েছেন।

মোতালেব হোসেন আরও বলেন, আমার ছেলে ছাড়াও আরও তিন চারজন শিক্ষার্থীকে ওই হুজুর একইভাবে নির্যাতন করেছেন বলে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা গতকাল সোমবার বিকেলে মিটমাট করার জন্য আমাকে ডাকে। কিন্তু আমি ওই বৈঠকে যেতে পারিনি।

অভিযুক্ত শিক্ষক মো. আবু সাইদ জানান, ঘটনাটি প্রায় দেড় দুইমাস আগের। সেখানে দ্বিতীয় জামায়াতের নয়, তৃতীয় জামায়াতের শিক্ষার্থী ছিল। পরীক্ষা চলার সময় এক শিক্ষার্থী আমার সঙ্গে বেয়াদবি করায় তাকে একটু শাসন করেছি। বিষয়টি নিয়ে সে সময় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আমাকে শাস্তি দিয়েছে।

এ বিষয়ে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক দেড় বছর ধরে এই মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন। দ্বিতীয় জামায়াতের ওই শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিষয়ে আজ (সোমবার)বাদ আসর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এবং নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী লাল মিয়ার চাচাকে নিয়ে একটা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে শিক্ষক আবু সাইদকে বহিস্কার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা জানান, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।ঘটনার সত্যতা পেলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরকারের নির্দেশ অমান্য করে মাদ্রাসা চালু রাখা এবং শিশু নির্যাতনের অভিযোগসহ দুটি মামলা করা হবে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading