OLYMPUS DIGITAL CAMERA

কোনো ঈদ পার্বণ নয় ,অন্য সাতদিনের মত সাধারণ একটি দিন । দেশের জাতীয় পত্রিকাগুলো একটি হাস্যউজ্জল ছবিতে ছেয়ে গেছে । দুজন ভিন্ন মতের ছাত্র নেতার কি মায়াবি আলিঙ্গন, কোলাকুলি । ছাত্রলীগের কোলাকুলি, সৌহার্দ্য পূর্ণ আচার, এমনকি শেষ অব্দি সম্মানের সাথে গাড়িতে তুলে দেওয়া, সবই অবাক করা কান্ড ! সত্যি বলতে দেশের মানুষ শেষ কবে এই রকম দৃশ্য দেখেছে তা কেউ বলতে পারবে কিনা আমি সন্দিহান ।
এখানে প্রথমেই বলা ভালো আমারা সবাই জানি আমাদের দেশের রাজনৈতিক দল কিংবা তাদের সহযোগী বা ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠন গুলোর কোনোটারই সঠিক গণতন্ত্রের ফরমুলা অনুযায়ী নেতা নির্বাচিত হন না । নেতা নির্বাচনে ইলেকশন এর পরিবর্তে সিলেকশন পদ্ধতিই বেছে নেওয়া হয় । কেন এই সিলেকশন পদ্ধতিতেই রাজনৈতিক দলগুলো ভরসা রাখে তা মোটামুটি সবারই জানা । সত্যিকারেই যদি ইলেকশন পদ্ধতির ব্যবস্থা রাজনৈতিক দলগুলো করতো ( অন্তত সহযোগী সংগঠনের ক্ষেত্রে) তাহলে কি খুব খারাপ ফলাফল হতো ? আমি মূল রাজনৈতিক দলগুলোর কথা না হয় বাদই দিলাম , কেননা সেখানে আমাদের দেশের রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষীতে এখনও সেটা ভাবতে পারাও প্রায় অসম্ভব । অন্তত কোথা হতে তো শুরুটা করা যেতো বা উচিত ।

বর্তমান সরকার যেভাবেই হোক গত প্রায় ১০ বছর যাবত্ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আছে ।  আর ক্ষমতায় এমন একটি দল , যার নিজেস্ব এবং সহযোগী সংগঠন ছাত্র লীগ একটা বিশাল সুনামধারী সংগঠন । দুঃখজনক হলেও সত্যি এত সুনামধারী ছাত্র লীগের গত দশ বছরের কর্মকা মোটেও সুখকর ছিলো না । এটা আমার বানানো কথা নয় , স্বয়ং আ লীগের বড় বড় নেতাদের  ক্ষোব থেকেও তা অনেকবার প্রকাশ পেয়েছে ।  তাছাড়া পত্র-পত্রিকা ঘাটলে জ্বলজ্বলে প্রমাণ পাওয়া যায় । অথচ হঠাত্ই সেই ছাত্র লীগের ভীষণ রকম পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে , যা কিনা সত্যি সত্যি দল, দেশ এবং সর্বোপরি সাধারণ জনগণের জন্য স্বস্তিকর বটে । আর এই স্বস্তিকর পরিবেশের শুরুটা গত কয়েকদিন পূর্বের ছাত্র লীগের নতুন নেতৃত্বের দ্বারা । বলতেই হয় , মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার অন্তত ছাত্র লীগের নেতা নির্বাচনের (সিলেকশনের) ক্ষেত্রে  ভালো সিদ্ধান্তই গ্রহণ করেছেন ( বর্তমান সময় পর্যন্ত তাই মনে হচ্ছে ) । দুদিন পূর্বে ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজেই টিভির পর্দায় ( ইনডিপেন্ডেন্ট টিভি) বললেন , মাননীয় শেখ হাসিনার কাছে প্রায় ৩০২ জন ছাত্র নেতাদের সকল তথ্য ছিলো এবং সেখান থেকে নেতা সিলেকশন করে দিয়েছেন । ছাত্র লীগের বর্তমান কর্মকা দেখে বলাই যায়, নেতা নির্বাচনে শেখ হাসিনা এবার বেশ সিদ্ধহস্ততা দেখিয়েছেন । শুধু আশা করবো সামনের দিনেও বর্তমান ছাত্র লীগের নেতারা দলের দুর্নামের পরিবর্তে সুনাম অর্জনের দিকেই নজর রাখবেন । ছাত্র নেতাদের একটি কথা মনে রাখা ভালো , দুর্নাম কামানোটা যত সহজসাধ্য বিষয় সুনাম কামানোটা ঠিক ততটাই স্রোতের বিপরীত , সাথে আবার ধরে রাখবারও বিষয় বিবেচনায় রাখতে হয় ।

 

এখানে একটা অগ্রিম আশাবাদের কথা প্রকাশ করতে চাই , আর সেই আশাবাদটি রাজনৈতিক দলগুলোর বর্তমান নেতাদের নিকট । প্রথমেই মাননীয় শেখ হাসিনার নিকট আশা করতে চাই , সামনের জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও ভালো মানুষদের নমিনেশন দিন । দেখবেন ফলাফল ভবিষ্যতে নিশ্চিত পজিটিভ পাবেন । একই সাথে অন্য সকল রাজনৈতিক দলগুলোর মাননীয় নেতাদের কাছেও একই প্রার্থনা থাকবে । ভালো মানুষদের নমিনেশন দিলে কেউই ভবিষ্যতে আশাহত হবেন না বলেই মনে করি ।

ছাত্র লীগের কোলাকুলি/ গলাগলিতেও ছাত্র দলের নেতারা আশ্বস্ত হতে পারছেন না তবে আশাবাদী এবং প্রাথমিকভাবে বিষয়টি ইতিবাচকভাবেই দেখচ্ছেন বলেই পত্রিকায় দেখলাম । খুবই স্বাভাবিক বিষয় বটে , কেননা বিগত নয় বছরে যা হয়নি তা একদিনে হয়ে যাওয়ার কথা নিশ্চয়ই নয় । সাম্প্রতিককালে দুই ছাত্র সংগঠনের ক্যাম্পাসে সহাবস্থান ছিলো না । সামনে আবার জাতীয় নির্বাচন । ছাত্র লীগ- ছাত্র দলের এমনিতেই বৈরিতা চরমে হওয়ার কথা । তবে গত রোববারের বিষয়টি সত্যি আশার আলো দেখাচ্ছে । এখন সামনের সময়েই সকল কিছুর উত্তর পাওয়া যাবে । আমরা সাধারণ জনগণ ভালো কিছুর আশা নিয়ে না হয় সামনের দিকে তাকাই ।

বিশ্ববিদ্যালয়তো জ্ঞাণ আহরণের পবিত্র স্থান । পৃথিবীর বুকে এমন কোন দেশ আছে যেখানে ছাত্র সংগঠন গুলোর নিজেদের মাঝে এরকম বৈরিতা আর মারামারি হানাহানি হয় ? কোন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে এত লাশের বহর হয় ? ৭১ পূর্বে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে কি কখনোই ছাত্র সংগঠন গুলোর নিজেদের মাঝে মারামারিতে একটিও লাশ পড়েছে ? যতটুকু জানি , উত্তর হবে না । তাহলে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে কেন ছাত্র সংগঠন গুলোর নিজেদের মাঝে এরকম মারামারি কাটাকাটিতে এত লাশের বহর হয় ? বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা রাজনৈতিক ইতিহাস আছে । সেই ইতিহাসকে উপেক্ষা আর মূর্চ্ছিত করে , ছাত্র সংগঠন গুলোর নিজেদের মাঝে বৈরীতার পিছনে ছাত্ররা না যত দোষে দোষী, তারচেয়ে মূলত আমাদের দেশের মূল রাজনৈতিক দলগুলো শতগুণ বা পুরোপুরিই দোষী । সামরিক সরকার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে গিয়েই সবচেয়ে বেশি ছাত্রদেরকে কলঙ্কিত করেছে । ফলাফল দেশের জ্ঞাণ আহরণের পবিত্র স্থান গুলোর সাথে ছাত্রদের করেছে কলঙ্ক । সুতরাং ছাত্র সংগঠন গুলোর নিজেদের স্বার্থেই এই কলঙ্ক থেকে বেড় হয়ে আশার চুড়ান্ত সময় মনে হয় অতিবাহিত হচ্ছে । ছাত্রদের মনে রাখা ভালো যে , এটা স্বাধীন স্বাভাবিক দেশ । এটা মোটেও একাত্তর পূর্ববর্তী সময় নয় । সুতরাং স্বাধীন দেশের রাজনীতি স্বাধীনভাবেই করা বাঞ্ছনীয় ।

বলছিলাম সুন্দর এবং তবে ! হ্যাঁ, এই তবে দেখার জন্যেই আমরা সাধারণত জনগণ অপেক্ষায় আছি । ছাত্রদের এই মায়াবী/আন্তরিক কোলাকুলি যেন কোনো অবস্থাতেই আর সেই পর্যন্ত না পৌঁছায় , যেখানে লাশ হতে হয় । বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভবিষ্যতে আর কোনো  ছাত্রই যেন কাফনের কাপড়ে বের না হয় । সবাই মাথায় সম্মানের টুপি পড়েই বের হয়ে আসুক , দেশের জনগণ সেই আশায় বুক বাঁধতে চায় ।

[ বিঃদ্রঃ  কেবলমাত্র ঘুম থেকে উঠে লেখাটি শেষ করে পত্রিকায় দিলাম । ইন্টারনেটে একটু দেশের খবরাখবরের জন্য পত্রিকা খুলতেই দেখি ঢাবিতে কোটা সংস্কার আর ছাত্র লীগের পাল্টাপাল্টি মিছিল । অবশ্য কোথায়ও কোনো মারামারি খবর নেই , দেখে একটু স্বস্তি পেলাম । পাল্টাপাল্টি মিছিল হতেই পারে , আমি এতে কোনো দোষের কিছু দেখিনা । মিছিলের বিপরীতে মিছিল হোক , স্লোগানের বিপরীতে স্লোগান হোক , শুধু কামনা থাকবে যেন কোনো বৈরীতা তৈরি হয়ে ভিন্ন কিছুতে রূপান্তরিত না হয় । ভালতেয়ারের কথাই এখানে বলবো “এক মত না হলেও ভিন্ন মত প্রকাশের সাথে একমত হও”।]

বুলবুল তালুকদার

সহকারী সম্পাদক, শুদ্ধস্বর ডটকম 

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading