OLYMPUS DIGITAL CAMERA

গত কয়েকদিন যাবত্ কোমলমতিরা রাস্তায় । কেন ? বা কি কারণে ?  সেটা বলা কোনো প্রয়োজন নিশ্চয়ই নাই। ইতিমধ্যেই দেশের অধিকাংশ মানুষই এই যৌক্তিক আন্দলোনের প্রতি সহানুভূতিশীলতা প্রকাশ করেছে । এই কোমলমতিদের পাশে আজকে অনেক অভিভাবক, এমনকি কিছু চিত্রশিল্পীদের কেউ খবরে দেখলাম। অথচ দেখলাম না তথাকথিত সমাজের উচ্চমার্গের কিছু মানুষদের । চমকিত বিষয় হলো , এই ভবিষ্যত প্রজন্ম তাদের নিজেদের স্বকীয়তায় রাষ্ট্রের দুর্বিষহ যাতনার বিরুদ্ধে সংস্কারের দাবিতে রাস্তায় । আরো চমকিত বিষয়, এদের কে কেউ অরগানাইজ করে রাস্তায় নামায় নি , তারা নিজেরাই সময়ের চপেটাঘাতে নিজ নিজ তাগিদেই , ভবিষ্যত সুন্দরের আশায় আজ রাস্তায় । এই কোমলমতিদের প্রতি শতভাগ সহানুভূতি রইলো এবং থাকবে ।

যে বিষয়টি বিশেষভাবে আকর্ষণীয় তা হলো , কোমলমতিদের হাতের লেখা প্লাকার্ড । যতগুলো প্লাকার্ড দেখেছি প্রতিটির অর্থ মারাত্মক এবং রাষ্ট্রের জন্য হুল ফোটানো । শত প্লাকার্ডের শত ভাষ্য সত্যি বিবেচনার বিষয় । অবশ্যই কতগুলো প্লাকার্ড ছিলো , যার ভাষা নিয়ে শতবার প্রশ্ন তোলা যায় এবং সেই রুষ্ট ভাষার প্লাকার্ড গুলো শিশুদের হাত থেকে সরিয়ে নেওয়াটাই উওম।  সে বিষয়ে কেউ দ্বিমত করবে না বলেই মনে করি । তবে , এখানে পরিষ্কার করে বলতে চাই সেসব প্লাকার্ডের বক্তব্য বা ভাষা নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলচ্ছেন  ,তাদের জন্য স্পষ্ট করে বলছি , সেই ভাষার জন্য শিশুদের না দোষে ,আগে নিজেদের কে আয়নার সামনে দাঁড় করান । দেখেন কি দেখতে পান ?  মনে রাখা ভালো , শিশুরা সমাজের বড়দের কাছ থেকেই শেখে ।

মাত্র দুটি স্লোগানের কথা আলোচনা করবো । যার ভাষাগত এবং মর্মার্থ রাষ্ট্রকে ভাববার খোরাক দেয়।
লক্ষ্যণীয়  :

●  ” আমার ভাই রক্তে লাল, পুলিশ কোন ……. ! ”

●  ” রাস্তা বন্ধ, রাষ্ট্রের মেরামতের কাজ চলচ্ছে” ।

বেশি বিশ্লেষণে যাবো না । প্রথম স্লোগানে শিশুদের মুখে এই ভাষা দেখে অনেকেই অবাক হলেও আমি অবাক হইনি ! কেন হইনি ?  তার উওর  দ্বিতীয়  স্লোগানেই নিহিত আছে।  দুটি স্লোগানও শিশুদের নিজেদের । একবার ভাবুন দুটি স্লোগানের ভাষাগত কেন এত তারতম্য  ?  রাষ্ট্র যখন পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়  ! ভাববেন না শিশুরা সেটা বুঝে না বা অনুধাবন করতে পারে না ।

লক্ষ্য করুণ ,
দ্বিতীয় স্লোগাটি । শিশুরা যখন বুঝে এই রাষ্ট্রের মেরামত করা দরকার ! তাহলে রাষ্ট্র যে পুলিশি রাষ্ট্রে রূপ নিয়েছে , সেটাও শিশুরা আপনার / আমার বা বড়দের চেয়ে ভালোই বুঝে । রাষ্ট্র যেখানে পুলিশ বান্ধব হওয়ার কথা , সেখানে যদি রাষ্ট্র  উল্টো স্রোতে যায় ! তাহলে একটি পুলিশি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই রুষ্ট ভাষার স্লোগানই মননে  তৈরি হয়।  মনে রাখা ভালো , সাইক্লোজিক্যাললি শিশুরা বড়দের মতন এত প্যাঁচের  ভাবনা না ভেবে , মনে যা ধরে তাই সরাসরি প্রকাশ করে দেয় । কেননা শিশুমনে মিথ্যার প্রভাবটি যে থাকে না ।

লেখা বড় হয়ে যাবে বলে এখানে ছোট্ট করে বলে রাখি , দ্বিতীয় স্লোগানটি আমাদের অতীত থেকে বর্তমানের সকল ক্ষমতাসীনরা শতবার চিন্তা করে দেখুন , শিশুদের এই প্লাকার্ডের অর্থ বুঝবার এবং অনুধাবন করার চেষ্টা করুণ । যদি অনুধাবন এবং কার্যকরী রূপ  দিতে পারেন তাহলেই দেশের ভবিষ্যত সুন্দর হবে , না হলে সব কচুপাতার জল ।

নৌ ( নো ) মন্ত্রী শাজাহান খান !!!
বেশি কিছু বলবো না ,বলতেও ঘৃণা হয় ।  টিভির খবরে নো মন্ত্রীর নিজ মুখে শুনলাম , শিশুরা তো আমার পদত্যাগ চায় নাই , বিএনপি / জামাত চাইছে  !!!
প্রশ্ন হলো , বিশ্লেষনের কি কোনো প্রয়োজন আছে ???
শুধু বলবো , ” লজ্জা “ শব্দটি বাংলা অভিধান থেকে তুলে দেওয়া এখন সময়ের দাবী ।  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার সমীপে অনুরোধ, হয় লজ্জা শব্দটি অভিধান থেকে তুলে দিন , না হয় এই জাতীয় ” জাতীয় শরমহীন” দের থেকে দেশ কে মুক্তি দিন ।

শিশুদের সাইক্লোজি বিষয়ে একটি ছোট্টগল্প বলেই শেষ করবো ।

ছোট্ট শিশু বাগানে একা একা খেলতেছে । মা/ বাবা দুজনে পাশ থেকে বাচ্চার খেলা দেখচ্ছে । হঠাত্ মা বলে , আমাদের বাচ্চা যদি এখন হঠাত্ ব্যাথা পায় বা কিছু হয় , তাহলে নিশ্চিত সে প্রথমেই মা বলে কেঁদে উঠবে । বাবা তখন দাবী করে না ও বাবা বলেই কেঁদে উঠবে । মা/ বাবা দুজনেরই একই দাবী ।  প্রমাণের জন্য বাবা বলে আসো আমরা একটা পরীক্ষা করি । তখন বাবা / মা দূরে লুকিয়ে থেকে ছোট্ট এক টুকরা পাথর শিশুকে ঠিল ছুঁড়ে  । শিশুটি একটু ব্যাথাও পায়  । শিশুটি বসা থেকে উঠে  দাঁড়িয়ে প্রথমেই যা বলে

” ওই কোন হালারপুত রে ”  । শিশুটি কিন্তু মা /বাবা বলেনি ।

গল্পটি হাল্কা করে দেখার বিষয় কিন্তু নয় । শিশুদের মনটিই এমন হয় । তাই বলছিলাম , কোমলমতিদের কিছু ভাষাগত প্লাকার্ড নিয়ে বড়দের তীর্যক মন্তব্য করার পূর্বে ভেবে দেখা উচিত , কেন এমন হলো ?
তারপরেও অন্তর থেকে আশা করবো , যে অভিভাবকরা শিশুদের হাতে রুষ্ট ভাষার প্লাকার্ড দেখছেন , তখন শিশুদের বিষয়টি পরিষ্কার বুঝিয়ে দিন  এবং রুষ্ট ভাষা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করুণ । আমি নিশ্চিত শিশুরা ভালোটাই গ্রহণ করবে ।

লেখার শেষে তীব্র একটি প্রতিবাদ করচ্ছি । গতকাল  মিরপুরে শিশুদের উপর পুলিশ এবং সাথে কিছু অপরিচিত ছেলেরা নির্যাতন করেছে । পুলিশের মনে থাকা দরকার, রাষ্ট্রের সংবিধান কোনো অবস্থাতেই শিশুদের নির্যাতনের অধিকার দেয় না । শিশুদের কে মারবেন না । সাথে কিছু পুলিশ সদস্যদের দেখেছি শিশুদের সাথে একত্রিত হয়ে , শিশুদের ভাষা বুঝতে পেরে , তাদের সাথে গান গেয়েও শিশুদের আনন্দিত করেছেন , ধন্যবাদ । আমরা তো এরকম রাষ্ট্রই চাই।

বুলবুল তালুকদার

সহকারী সম্পাদক শুদ্ধস্বর ডটকম

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading