বেসরকারি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স বন্ধ করতে ২০১৯ সাল থেকে নতুন কলেজে এসব কোর্সের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। চলতি বছর থেকে নতুন ভর্তিও বন্ধ হতে পারে।

এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি মঙ্গলবার প্রথম বৈঠক করেছে। বৈঠক শেষে বিকেলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মশিউর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা একটি প্রক্রিয়া নির্ধারণের কাজ শুরু করেছি৷ এখনো নিশ্চিত নয় যে, সব বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স বন্ধ করা হবে কিনা৷’

বেসরকারি কলেজে ১৯৯৩ সাল থেকে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের অনুমোদন দেয়া হয়৷ বাংলাদেশে এখন ৩১৫টি বেসরকারি কলেজে এই কোর্স চালু আছে৷ ২০০ কলেজ সরকারি হয়ে যাওয়ায় তারা আর এর আওতায় পড়ছে না৷ কোর্সগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। আর এই পর্যায়ে পাঠদানের জন্য সাড়ে চার হাজারের মতো শিক্ষক আছেন। কিন্তু শিক্ষকদের কেউই এমপিওভুক্ত নন। কলেজগুলো যে বেতন দেয়, তাই তারা পান। সরকারি কোনো বেতন তাদের নেই। ফলে করোনার কারণে তাদের অনেকেই বেতন পাচ্ছেন না। অনুমোদনের সময় শর্ত ছিল ওই শিক্ষকদের কলেজ থেকেই মূল বেতন দিতে হবে।

এসব কলেজে অনার্স এবং মাস্টার্স পর্যায়ে তিন লাখের মতো শিক্ষার্থী আছে। কোর্স বন্ধ হলে তাদের কী হবে তাও এখনো নিশ্চিত নয়।

শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপুমনি সম্প্রতি সংবাদমাধ্যকে জানিয়েছেন, বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স আর ভবিষ্যতে থাকবে না। তার কথা, ‘আমরা সনদধারী বেকার তৈরি করতে চাই না। জেলায় জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হবে। সেখানেই উচ্চ শিক্ষা যারা নিতে চাইবেন, নিতে পারবেন৷’

ওই কলেজগুলোতে ডিগ্রি পাসকোর্সের পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার নানা ধরনের শর্টকোর্স চালুর কথা জানান তিনি৷ জানা গেছে, চলতি বছরেই বেসরকারি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্সে ভর্তি বন্ধের নির্দেশ দেয়া হতে পারে।

জানা গেছে, শিক্ষার মান নিশ্চিত করতেই মূলত যেসব বেরসকারি কলেজে শিক্ষক এবং অন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নেই সেখান থেকে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

তবে অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের এই শিক্ষকদের নানা ধরনের কারিগরি শিক্ষার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে, যাতে কলেজগুলো তাদের দিয়ে কারিগরি শিক্ষার শর্ট কোর্স চালু করতে পারে। কিন্তু তাদের এমপিওভুক্ত করা হবে কিনা তা নিশ্চিত নয়।

বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিল্টন মণ্ডল বলেন, ‘সরকার কী কারণে বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স বন্ধ করছে তা তারাই ভালো বলতে পারবে৷ তবে যদি মানের কথা বলেন, তাহলে বলবো, আমরা যারা শিক্ষক, তাদের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা ঠিক হবে না। আমরা প্রায় সবাই ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছি। নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷’

তার দাবি, ‘সরকার যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন আমাদের যেন এমপিওভুক্ত করা হয়। আমরা এই করোনায় কলেজ থেকে বেতন পাচ্ছি না। মানবেতর জীবন যাপন করছি।’

আর বেসরকারি কলেজ শিক্ষক ফেডারেশনের মহাসচিব মোস্তফা কামাল বলেন, ‘সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হলে ছাত্ররাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা তাদের কোর্স কোথায় শেষ করবে? আর প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে কলেজ আছে সেগুলোতে অনার্স-মাস্টার্স বন্ধ হলে তারা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে৷’

তবে কতগুলো বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স বন্ধ করা হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। এ ব্যাপারে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের সুপারিশের ওপরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কমিটির পরামর্শে সব বেসরকারি কলেজে কোর্স বন্ধ নাও হতে পারে।

কমিটির প্রধান অধ্যাপক মশিউর রহমান জানান, তারা একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়া নির্ধারণ করতে চান। ছাত্র-শিক্ষকরা যাতে ক্ষতির মুখে না পড়েন সেটা বিবেচনায় রেখেই শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করছেন বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘ওইসব প্রতিষ্ঠানের অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকদের বেতন সরকার দেবে বা তাদের এমপিওভুক্ত করা হবে এমন কোনো কথা ছিল না। কলেজেরই দেয়ার কথা। কলেজ যাতে দেয়, সেটা আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি৷ আর যেসব প্রতিষ্ঠানে অনার্স-মাস্টার্স বন্ধ হবে সেখানকার শিক্ষার্থীরা অন্য কলেজে কীভাবে তাদের কোর্স শেষ করতে পারে তারও উপায় বের করার চেষ্টা করছি৷’

কমিটি এখন ওই কলেজগুলোর অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষার মান পর্যালোচনা করবে৷ তারা প্রয়োজন হলে সরেজমিনেও দেখতে যাবে৷ যেসব কলেজের মান ভালো, সেখানে হয়ত কোর্স চালু রাখা যাবে৷

তবে কমিটির প্রধান লক্ষ্য হলো, ওইসব কলেজে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি শিক্ষা চালু করা। এজন্য তারা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও দিতে চান। আর এই করোনার সময়ে সেটা অনলাইনেও হতে পারে। তাহলে শিক্ষকদের বাদ দিতে হবে না, ছাত্ররাও কারিগরি ও আইটি শিক্ষার সুযোগ পাবে।

কমিটিতে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, মন্ত্রণালয় ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের প্রতিনিধিরা আছেন। অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু আছে এরকম দুটি বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষও আছেন কমিটিতে।

অধ্যাপক মশিউর রাহমান বলেন, ‘আমরা উচ্চ শিক্ষার মান বজায় রাখতে আশা করি একটি সঠিক পথ বের করতে পারবো৷’
সূত্র : ডয়েচে ভেলে

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading