হাসিনা আকতার নিগার :সময় বদলে যাচ্ছে ক্রমশ। তথাকথিত রাজনীতির ধারা অনেকটাই একমুখী এখন।সাধারণত বলা হয়ে থাকে রাজনৈতিক দল থেকেই সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন নেতা কর্মী তৈরি হতে হয়। তা না হলে রাজনীতি নের্তৃত্ব শুন্য হয়ে পড়ে দেশের রাজনীতি । বর্তমান সময়ে দেশে সত্যিকারের অর্থে নতুন নের্তৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। তার কারন হলো রাজনীতি এখন ব্যবসায়ীদের একটা হাতিয়ার । অর্থ থাকলেই যেমন রাতারাতি নির্বাচন করে এমপি মন্ত্রী হতে পারে। ঠিক একইভাবে বিত্ত বৈভবের পাহাড় গড়ার জন্য রাজনৈতিক দলকে ব্যবহার করার দরকার হয় তাদের। অন্যদিকে প্রশাসনের প্রভাব ছাড়া দূর্নীতির পথে হাঁটা অসম্ভব। আর এ প্রশাসনই সরকারের ক্ষমতা পরিচালনায় বিশাল ভুমিকা পালন করে। সামগ্রিকভাবে এটাই বুঝা যায় দেশের দূর্নীতির কোনভাবেই এককভাবে করা সম্ভব নয়।একটা চেইনের মত কাজ করে দূর্নীতিবাজরা।আর এ চেইনকে ভাংগা সহজ নয় বলে দূর্নীতি থেকে মুক্তি মেলে না রাষ্ট্র ও সমাজের। 

 

সাংবাদিক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুকে মেনে নেয়া কঠিন। তার অপরাধ কতটা গুরুতর ছিল তা এখনো অস্পষ্ট। একই মামলার অন্য অভিযুক্তরা জামিন পেলেও তিনি জামিন পায়নি। বরং দুনিয়া থেকে চলে গেলেন কারাগারে বন্দী অবস্থায়। তার লেখা রাষ্ট্রদ্রোহিতার দোষে দুষ্ট হলে বিচার হবার কথা। কিন্তু এমন মৃত্যু সরকারকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে এখন। কলমের স্বাধীনতা বারবার বাধাগ্রস্ত হয়।সাংবাদিকের অযাচিত মৃত্যু নতুন কিছু নয় দেশে।

 

ঘটনার প্রবাহে এখন দূর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলাই যেন অন্যায়। দূর্নীতি,ঘুষ, অন্যায়কে ছাড় দিতে নারাজ প্রধানমন্ত্রী। তথাপি সমাজে দূর্নীতি বন্ধ হয়নি।বরং ঘুষখোর, দূর্নীতিবাজ, ব্যাংকের টাকা পাচারকারী ও লুটেরাকারীরা সকল আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দেশে বিদেশে।

 

সব সম্ভবের এ দেশে ন্যায়ের পক্ষে কলম ধরলে জীবন হয় শংকিত। দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেছে সাংবাদিক সাগর রুনীর হত্যার বিচারের। তাদের সন্তান মেঘ কেবল বুঝে বাবা মা হারানোর যন্ত্রণা। হয়তো এভাবেই সময়ের অতলে হারিয়ে যাবে সাংবাদিক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনা। কিন্তু দুর্নীতির বেসাতি বহমান থাকবে। কারণ দূর্নীতির চেইন ভাংগার বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার মত সাহস, শক্তি ও সত্যিকারের রাজনৈতিক বলিষ্ঠ কন্ঠের বড় অভাব এখন।

 

দেশপ্রেম থেকে যে রাজনৈতিক বোধের জন্ম হয়, আজ সে বোধশক্তি ও বিবেকবান মানুষরা সংখ্যালঘুতে পরিনত হয়েছে। অর্থ আর পেশিশক্তির জয়জয়কার। তবে একটা দূর্নীতিমুক্ত সমাজ ছাড়া মানুষের নৈতিকতাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। সুতরাং অন্যায়কে অন্যায় বলার কারনে টুটি চেপে না ধরে প্রতিবাদ করতে হবে বিবেকবান মানুষদের। আর তা না হলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে দূর্নীতিকে রোধ করা সম্ভব হবে না। আর এতে করে সরকারকে ভালো কাজের প্রশংসার পাশাপাশি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে দূর্নীতিবাজদের অপরাধের জন্য।

লেখক – কলামিস্ট ।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading