করোনা আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আবেদন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

মঙ্গলবার রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের নাজনীন স্কুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে কর্মহীন অসহায় মানুষের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা জানান।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া যে সাজা ভোগ করছিলেন পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা স্থগিত রেখে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার সুবিধা করে দিয়েছেন। আমরা যতটুক জানি তিনি এখন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার ইচ্ছা অনুযায়ী চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন এ পর্যন্ত আমাদের জানা।

খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে সরকারের কাছে কোনো আবেদন করা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, তার পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আবেদন করা হয়নি। তিনি (খালেদা জিয়া) যেন দেশে উন্নত চিকিৎসা পান সেই ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রী করে দিয়েছেন বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলে সরকার কী পদক্ষেপ নেবে, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি আদালতের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী যে ধারায় তার সাজা স্থগিত রেখে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন, এখন আরও কিছু পেতে হলে তাকে আদালতের মাধ্যমে আসতে হবে।

এদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে চায় তার দল ও পরিবার। তার চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিতে আগ্রহী বলে জানা গেছে। এজন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে যোগাযোগ করা হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে টেলিফোনে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার বিষয়ে আলাপ করেন। তারা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন।

জানা গেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার বলে বিএনপি মহাসচিবকে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে সরকারের অন্যান্যদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তীতে জানানো হবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর গত ১১ এপ্রিল থেকে গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিমের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন খালেদা জিয়া। ১৪ দিন পর আবার পরীক্ষা করা হলে তখনও তার করোনাভাইরাস ‘পজিটিভ’ আসে।

এরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ২৭ এপ্রিল রাতে তাকে এভার কেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। চেস্টের সিটিস্ক্যান ও কয়েকটি পরীক্ষার পর সেই রাতেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

‘ফিরোজা’র বাসায় বিএনপি চেয়ারপারসন ছাড়াও আরও ৮ জন করোনায় আক্রান্ত হন। তবে ফিরোজার সব স্টাফরা ইতোমধ্যে করোনামুক্ত হয়েছেন।

৭৫ বছ বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে কারাগারে যেতে হয়। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু পর পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে তাকে ছয় মাসের জন্য সাময়িক মুক্তি দেয়। পরে আরও দুই দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। মুক্তি পাওয়ার পর খালেদা জিয়া গুলশানে ভাড়া বাসা ফিরোজায় থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তার সঙ্গে বাইরের কারও যোগাযোগ সীমিত।

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from শুদ্ধস্বর ডটকম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading